অচেনা নম্বরের ফোন। ধরলেই বিপত্তি। ওপার থেকে লোন শোধের তাগাদা শুনতে হবে। এদিকে, যে ব্যাঙ্ক থেকে লোনের কথা বলা হচ্ছে, সেখানে আপনার অ্যাকাউন্ট পর্যন্ত নেই! তাহলে, নতুন কোনও জালিয়াতি? নাকি নেপথ্যে অন্য কারণ? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
অচেনা নম্বরের ফোন অনেকেই এড়িয়ে চলেন। তবু বারবার একই নম্বর থেকে ফোন এলে ধরতেই হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ওপার থেকে ভেসে আসছে রোবোটিক ভয়েস। নতুন কোনও অফার বা এই ধরনের সুবিধার কথাই জানানো হচ্ছে। তবে সবসময় তেমনটাই যে হবে তার কোনও মানে নেই। কখনও অচেনা নম্বরের ফোন ধরলেই শুনতে হতে পারে লোন শোধের হুমকি!
আরও শুনুন: মানুষ নয়, ভোটে দাঁড়াল গরু! ব্যাপারটা কী?
রং নম্বর যে কত বিচিত্র অভিজ্ঞতা তৈরি করতে পারে, তা ভালমতো জানেন অনেকেই। কখনও একবার বললেই ভুল বুঝে দ্বিতীয়বার ফোন করেন ওপারের ভুল ব্যক্তি। কখনও আবার সেসবের বালাই নেই। ফোনের এপারে থাকা ব্যক্তি বিরক্ত হচ্ছেন জেনেও, ক্রমাগত ফোন করতেই থাকেন অচেনা কেউ। সেক্ষেত্রে উপায় একটাই, ব্লক করে দেওয়া। তবে ইদানীং নতুন এক কাণ্ড ঘটছে। অচেনা নম্বর থেকে আসা ফোনেই দেওয়া হচ্ছে হুমকি। অন্য কিছু নয়, লোন শোধের হুমকি। ফোনকর্তা একেবারে ব্যাঙ্কের তথ্য সহ জানাচ্ছেন এতটাকা শোধ দিতে হবে। এও বলা হচ্ছে, বিগত কয়েক মাস কোনও কিস্তির টাকাই জমা পড়েনি। এদিকে, যে তথ্য দেওয়া হচ্ছে তার সঙ্গে কোনও মিল নেই ফোনের এপারে থাকা মানুষটির। কখনও এমনটাও হচ্ছে, সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট অবধি নেই ব্যক্তির। সুতরাং লোন নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। এদিকে, তাঁকেই ফোন করে বলা হচ্ছে মোটা টাকা লোন শোধের কথা। যদিও নাম ধাম না মেলায় সেই মুহূর্তে ব্যাপারটা মিটে যাচ্ছে। যিনি ফোন করেছিলেন হুমকি শোনাতে, তিনিও কার্যত মেনে নিয়েই ফোন রেখে দিচ্ছেন। কিন্তু প্রশ্ন একটা থেকেই যাচ্ছে।
আরও শুনুন: মাত্র ৩০ সেকেন্ডেই শেষ ভোটদান! সবচেয়ে কম সময়ে নির্বাচনের নজির গড়ল কারা?
এমন ফোন এল কেন?
আসলে, এর জন্য দায়ী টেলিকম সংস্থাগুলোই। ব্যাপারটা আর কিছুই নয়, কারও অব্যবহৃত নম্বরেই নতুন সিম তৈরি করে বাজারে আনছে তারা। আর সেই সিম না বুঝেই কেউ নিজের নামে কিনছেন। এবার সিম যতই নতুন হোক, নম্বর তো সেই এক। কাজেই, সেই ব্যক্তির কাছে যে ফোন আসার কথা সেই সবই আসছে নতুন সিমে। কাজেই ঝক্কি পোহাতে হচ্ছে সেই সিম যে ব্যবহার করছে তাকেই। এখানেই শেষ নয়, অনেক সময় ব্যাংকের সঙ্গে নতুন নম্বর লিঙ্ক করালেও তা দিয়ে কোনও অনলাইন পেমেন্ট অ্যাপে অ্যাকাউন্ট খোলা যাচ্ছে না। এক্ষেত্রেও সমস্যা সেই একই জায়গায়। অর্থাৎ আগে ওই নম্বর ব্যবহার করে UPI করা হয়েছিল। তাই একই নম্বরে দ্বিতীয়বার লিঙ্ক করা যাচ্ছে না। যদিও এর জন্য টেলিকম সংস্থাকেও দোষ দেওয়া যায় না। হিসাব বলছে। যেভাবে উত্তোরত্তর মোবাইল নম্বরের চাহিদা বাড়ছে, তা জোগান দিতে হিমসিম খাচ্ছে টেলিকম সংস্থা। কারণ চাহিদা বাড়লেও নতুন নম্বর তৈরি করা প্রায় অসম্ভব। তাই যারা পুরনো সিম ব্যবহার করা বন্ধ করছেন তাঁদের নম্বরই নতুন করে বাজারে আনতে বাধ্য হচ্ছে টেলিকম সংস্থা। নিয়ম অনুযায়ী, ৬ মাস কোনও নম্বর ব্যবহার না করা হলে বা তাতে রিচার্জ না করলে আপনা থেকে বন্ধ হয়ে যায়। সেইসব নম্বরই নতুন করে কাজে লাগানো হচ্ছে। যার দরুন সমস্যা পোহাতে হচ্ছে নতুন গ্রাহকদের। বিষয়টি প্রশাসনের নজরে এসেছে ইতিমধ্যেই। মনে করা হচ্ছে, বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের অন্তর্বতী যোগাযোগে খামতির কারণেই এমনটা হচ্ছে। নিয়ম বলছে, কারও নম্বর বাতিল হলে, নম্বরের সঙ্গে জড়িত তার যাবতীয় নথিও বাতিল করতে হবে। আবার সেই নম্বর নতুন করে কেউ নিলে, তাঁর নথি যোগ হবে রেকর্ডে। ফলত সরকারি হিসেবে নতুন ব্যক্তির নামই নতুন নম্বরের সঙ্গে থাকবে। কোথাও গিয়ে এই কাজই ঠিকমতো হচ্ছে না। তার সঙ্গে আরও বিভিন্ন কারণ যোগ হয়ে, সমস্যাটা এমন বড় আকার নিয়েছে। যদিও সরকারের তরফে ইতিমধ্যেই বিশেষ এক ডিজিটাল ইন্টালিজেন্স প্লাটফর্ম তৈরি করা হয়েছে। যার কাজ হবে, এই ধরনের সমস্যা চিরতরে মেটানো। কোন নম্বর কে ব্যবহার করছেন, সে ব্যাপারে সঠিক এবং আপডেটেড তথ্যই রেকর্ডে যোগ করা হবে। যা আগামী দিনে কাউকে ঝক্কি পোহানোর হাত থেকে বাঁচাবে। একইসঙ্গে এইভাবে কোনও সাইবার অপরাধ যেন শুরু না হয়, সে দিকেও খেয়াল রাখবে ওই দপ্তর।