রুল অফ থাম বা থাম-রুল শব্দটা আমরা সবাই ব্যবহার করি, তাই না? কিন্তু আদতে যে এই শব্দের অর্থে জড়িয়ে আছে এক বর্বর অনুষঙ্গ, সে কথা জানেন কী? আসুন, শুনে নেওয়া যাক থাম-রুলের গোড়ার কথা।
আমাদের ব্যবহারিক জীবনে অত্যন্ত চলতি কথা রুল অফ থাম কিংবা থাম রুল (thumb rule)। কোনও প্রোটোকল বা নিয়মনীতি বোঝাতে বহুল ব্যবহৃত হয় এই শব্দবন্ধটি। থাম রুল অর্থে বোঝায় এমন এক ধারণা, যা হিসেব কষে, খুঁটিনাটি বিচার করে পাওয়া হয়নি। কিন্তু বাস্তব অভিজ্ঞতার উপরে নির্ভর করে পাওয়া এই ধারণা মোটামুটি সঠিক, এমনটাই মনে করা হয়। তাই যে কোনও কাজের ক্ষেত্রে একটা সামগ্রিক ধারণা দেওয়ার জন্য প্রথমেই উঠে আসে এই কথাটি। কিন্তু জানেন কি, আদৌ এমন কোনও অর্থ নিয়ে এই কথা তৈরিই হয়নি? এই শব্দবন্ধের আদি উৎস কী, জানেন? তাহলে সে কথাই বলা যাক।
আরও শুনুন: অযথা বিতর্ক জাগাননি, ভালবেসে জাতীয় মঞ্চে গাইছেন বাংলা গান, শ্রোতারা বুঁদ অরিজিৎ ম্যাজিকে
প্রকৃতপক্ষে রুল অফ থাম কিংবা থাম রুল শব্দবন্ধের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এমন এক অনুষঙ্গ, যাকে বর্বরতা বললেও ভুল হয় না। পুরনো আমলে ব্রিটিশ অভিজাত পুরুষ, বিশেষ করে জমিদারদের মধ্যে এক আশ্চর্য অভ্যাস লক্ষ করা যেত। তারা মনে করত, স্বামীরা তাদের স্ত্রীদের লাঠি দিয়ে পেটাতে পারে যদি সেই লাঠি তাদের বুড়ো আঙুল বা থামের চেয়ে সরু হয়। খেয়াল করে দেখুন, পুরনো আমলের ছবিতে ওয়াকিং স্টিক হিসেবে যে সুদৃশ্য ছড়িগুলির দেখা মেলে, সেগুলি সাধারণত এমনই সরু। আসলে ওই ধারণার বশেই ছড়িগুলি এমন করে বানানো হত, যাতে চাইলেই অবাধ্য স্ত্রীটিকে দু-ঘা দেওয়া যায়। আজ্ঞে হ্যাঁ, মেয়েরা মুখ বুজে কেবল আদেশ মেনে চলবে, এমনটাই তো ভাল স্ত্রীয়ের লক্ষণ বলে চিনিয়েছে সমাজ। আর তার অন্যথা হলে স্বামী যে পৌরুষ প্রদর্শন করবে, তাও ন্যায্য বলেই মেনে নিতে শেখানো হয়েছে নারী পুরুষ উভয়কেই। আর সেই কারণেই, কোথাও স্পষ্ট করে বলা না হোক, আইনে লেখা না থাক, এই অপরাধে কারও শাস্তি হত না। আর শুধু স্ত্রীই নয়, নিম্নবর্গের যে কোনও মানুষকে এইরকম লাঠি দিয়ে ইচ্ছেমতো প্রহার করত ওই অভিজাতরা।
আরও শুনুন: মুখে ফুটল হাসি, মা-হারা বন্ধুর জন্মদিনে উপহারের ঝুলি সাজিয়ে দিল সহপাঠীরাই
আজকের দিনে গৃহহিংসা নিয়ে আইনকানুন চালু হয়েছে, আইন হয়েছে যৌন হেনস্তা নিয়েও। কিন্তু মেয়েদের সম্পর্কে পিতৃতান্ত্রিক সমাজের মনোভাব কি আদৌ পালটেছে তাতে? সম্প্রতি সরকারি চাকরি পাওয়ার জেরে রেণু খাতুন নামে এক নার্সের হাত কেটে দিয়েছে তার স্বামী, যে ঘটনা সকলেরই জানা। এও তো আসলে সেই চুপ করিয়ে রাখারই প্রকারভেদ। ‘থাম-রুল’-এর অর্থ যতই পালটাক, মেয়েদের মেরেধরে পোষ মানানোর সেই ট্র্যাডিশন কিন্তু সমানে চলছে, তাই না?