একজন, দু-জন নয়, কম করে ৪৭০ জন কন্যার বাবা তিনি। তাঁদের মধ্যে কেউ হিন্দু, কেউ মুসলিম, কেউ শিখ তো কেউ মুসলিম। কিন্ত সেই পরিচয়ের উর্ধ্বে উঠে তাঁরা সকলেই মহেশ সাওয়ানির মেয়ে। সাড়ে চারশোরও বেশি জন অনাথ কন্যার দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি। তাঁদের সুপাত্রস্থ করেছেন। কে এই মহেশ সাওয়ানি? শুনে নিন।
সন্তান দত্তক নেওয়ার বিষয়টি সব সময়েই প্রশংসনীয়। একজন বা দু-জন সন্তান দত্তক নেওয়ার কথা অনেক সময়েই শোনা যায়। তাই বলে ৪৭০ জন! ঠিকই শুনেছেন সংখ্যাটা।
মহাভারতে ধৃতরাষ্ট্রের একশোটি পুত্র ছিল। গুজরাটের সুরাটের বাসিন্দা মহেশ সাওয়ানি পেরিয়ে গিয়েছেন সেই সংখ্যা। কম করে ৪৭০ জন কন্যার বাবা তিনি। নয় নয় করে অন্তত ৪৭০ জন অনাথ মেয়েকে দত্তক নিয়েছেন পেশায় হিরে ব্যবসায়ী মহেশ। তাঁদের বিয়ে দিয়েছেন সুপাত্রে।
মহেশের মেয়েরা নানা ধর্মাবলম্বী। তবে, সন্তানের কোনও ধর্ম হয় না, এমনটাই বিশ্বাস করেন মহেশ। তাই কার ধর্ম কী, তা নিয়ে তাঁর কোনও মাথাব্যথা নেই।
প্রতি বছরই এমন ভাবে কোনও না কোনও অনাথ মেয়ের দায়িত্ব নিয়ে আসছেন মহেশ। মহা ধুমধাম করে তাঁদের বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সব নিয়ম নিষ্ঠা মেনে তাঁদের বিয়ের ব্যবস্থা করেন মহেশ। মেহেন্দি থেকে বিদায়, কোনও অনুষ্ঠানই বাদ পড়ে না। প্রতিবছর গুজরাতের ভবননগরে বসে এমনই গণবিবাহের আসর।
আরও শুনুন: বন্যপ্রাণীদের বাঁচানোই নেশা, সরকারও স্বীকৃতি দিয়েছে দেশের ‘বিয়ার ম্যান’-কে
বছর দশেক আগে মহেশের ভাইয়ের মৃত্যু হয়। তাঁর ভাইঝিদের বিয়ের দায়িত্ব নেন মহেশই। বাবা হিসেবে তাঁদের বিয়ের সমস্ত দায়িত্ব পালন করেন তিনি। করেন কন্যাদানও। আর সেই ঘটনার পর থেকেই মহেশের মনে হতে শুরু করে- কত মেয়েই তো এমন আছেন, যাঁদের বাবা-মা নেই। সেই থেকে তাঁদের বাবার অভাব পূরণ করার বিরাট দায়িত্ব তুলে নিয়েছিলেন নিজের কাঁধে। অনেক সময়ই স্বামীকে হারানোর পরে মেয়ের বিয়ে দিতে হিমশিম খান অনেক মহিলা। মানসিক ভাবে তো বটেই, আর্থিক ভাবেও। তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন মহেশ।
২০০৮ সাল থেকে শুরু হয় এই বিরাট কর্মযজ্ঞ। এখনও পর্যন্ত অন্তত ৪৭০ জন মেয়েকে সুপাত্রে দান করেছেন মহেশ। শুধু বিয়ের খরচাপাতি সামলানো তাই নয়, প্রত্যেক বাবা নিজের মেয়ের জন্য যা যা করেন, তাই করেছেন তিনি। মেয়েদের সোনা, রূপোর গয়না থেকে শুরু করে জামাকাপড়, এমন কি সংসার গুছিয়ে দেওয়ার দায়িত্বও মহেশের। ইলেকট্রনিক্স জিনিসপত্র থেকে প্রয়োজনীয় বাসন, সবটাই নিজে হাতে কিনে দেন। বিয়ে প্রতি অন্তত ৪ লক্ষ টাকা তো খরচ হয়েই যায় মহেশের।
আরও শুনুন: নিখোঁজ শিশুদের খুঁজে পৌঁছে দেন বাড়ি, দেশবাসী কুর্নিশ জানায় এই আমলাকে
তবে সে সব নিয়ে ভাবিত নন তিনি। কোনও মহত্ব অর্জনের জন্য এই কাজ করেন না তিনি। তাই বিয়ে হয়ে গেলেই যে সেসব মেয়েদের সঙ্গে সম্পর্ক শেষ হয়ে গেল, তেমন ঘটনা ঘটেনি আজ অবধি। প্রয়োজনে একটা মেসেজ কেবল, মেয়েদের জন্য সঙ্গে সঙ্গে হাজির হয়ে যান তাঁদের মহেশ পাপা। নাহিদা বানু বা হিনা কাঠিরিয়াদের কাছে তাই নিজের বাবার থেকে কোনও অংশে কম নয় মহেশ সাওয়ানি। বরং নম্বরে মহেশ পাপাকেই এগিয়ে রাখতে চান তাঁরা। পৃথিবীর সকলে মহেশের মতো বাবা পান যেন, প্রার্থনা নাহিদাদের।
মহেশ সাওয়ানির মতো মানুষেরা আছে বলেই বোধহয় পৃথিবীটা আজও অন্যরকম। বিশেষত সেই সময়ে, যখন নিজের বাইরে অন্যের ভাবার কথা ভুলেই গিয়েছে মানুষ। মহশকে তাই কুর্নিশ জানায় গোটা বিশ্ব।