১১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছে মন্দির। অথচ তা তৈরি করতে ব্যবহার করা হয়নি এতটুকু সিমেন্ট। এমনকি এই মন্দির পাহাড়ের গায়ে পাথর কেটেও বানানো হয়নি। তাহলে? মন্দিরটি তৈরি হয়েছে স্রেফ কাচ দিয়ে। যা আজও হাজার হাজার ভক্তের কাছে বিস্ময়। কোথায় রয়েছে এই মন্দির? আসুন শুনে নিই।
স্রেফ কাচ দিয়ে তৈরি হয়েছে এক মন্দির। প্রায় ১১০ বছর ধরে তা দাঁড়িয়েও রয়েছে দিব্যি। শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। সিমেন্ট-বালি ব্যবহার না করেই তৈরি করা মন্দির দেখতে আজও হাজার হাজার ভক্ত ভিড় জমান।
আরও শুনুন: ৮০ বছর বয়সেও নিয়মিত রক্তদান! ২০৩ ইউনিট রক্তদান করে বিশ্বরেকর্ড প্রৌঢ়ার
কথা বলছি ইন্দোরের বিখ্যাত কাচ-মন্দির সম্পর্কে। এটি মূলত জৈন মন্দির। তবে এর অসাধারণ কারুকাজ আর স্থাপত্যের জন্য অন্যান্য সম্প্রদায়ের মানুষজনও ভিড় জমান এখানে। মন্দিরের ভিতর জৈনধর্মের প্রাণপুরুষদের মূর্তি রয়েছে। মার্বেলের তৈরি সেই মূর্তিগুলির কারুকাজও অসাধারণ। ১৯১৩ সালে ইন্দোরের ইতিওয়ারিয়া বাজার চত্বরে এই সুন্দর মন্দিরটি তৈরি করেন শেঠ হুকুমচাঁদ জৈন। এই মন্দিরটি ছাড়াও বিভিন্ন জৈন মন্দির তৈরি করেছিলেন তিনি। যার দরুন তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার তাঁকে ‘স্যার’ উপাধিও দেন। তবে ইন্দোরের এই মন্দির একেবারেই অনন্য। মন্দিরটির দরজা, জানলা, ছাদ থেকে আরম্ভ করে উঁচু উঁচু থামগুলিও কাচের তৈরি। শুধু তাই নয়, মন্দিরের গর্ভগৃহের দেওয়ালগুলো আসলে আয়না। চারিদিকে আয়না সেখানে ঢুকলে যে কারও চোখ ধাঁধিয়ে যেতে বাধ্য। শোনা যায় মন্দির তৈরির জন্য সুদূর বেলজিয়াম থেকে কাচ আনা হয়েছিল। মন্দির তৈরি হয়েছিল ইরানীয় শিল্পীদের হাতে। তখনকার দিনে এই দেশের কাচশিল্পীদের জগতজোড়া সুনাম ছিল। তবে ইন্দোরের এই মন্দিরটি তৈরি করতে এতটুকু সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়নি। যেখানে প্রয়োজন হয়েছে কেবল চুন ব্যবহার হয়েছে। অথচ এখনও পর্যন্ত মন্দিরটিতে নির্মাণজনিত কোনও সমস্যা হয়নি। বাইরে থেকে দেখলে এই মন্দিরটিকে মধ্যযুগের প্রাসাদ বলেই মনে হবে। বলা বাহুল্য, বর্তমান যুগের শিল্পীরাও এই মন্দিরের কাজ দেখলে বেশ অবাক হন।
আরও শুনুন: খরচ নেই এক পয়সাও! সাহসে ভর করে সারা দেশ একাই ঘুরছেন তরুণী
জৈন ধর্ম মূলত অহিংসার প্রচার করে। সামান্য কীট-পতঙ্গও যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেই জন্য সবসময় মুখ ঢেকে রাখেন জৈন ধর্মগুরুরা। পাশাপাশি দানধ্যান করা কিংবা অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর তাঁদের ধর্মপালনের অঙ্গ। ইন্দোরের কাচের মন্দিরেও প্রায় সমস্ত রকমের জৈন উৎসব পালিত হয়। যেখানে সব ধর্মের মানুষই ভিড় জমান। ধর্মীয় স্থান হিসেবে তো বটেই, মন্দিরের অভিনবত্ব ও কারুকার্যও অসংখ্য সাধারণ মানুষকে টেনে আনে এই মন্দিরের কাছে।