যা না থাকলে চলে না দিন। চট করে ফুরোতে চায় না রাতও। যা দায়িত্ব নিয়ে ঠিক করে দেয় সমাজে কে উঁচু, আর কে নিচু। সেই টাকায় যদি গান্ধীর ছবি না থাকে, তবে তা কোনও কাজের নয়। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মান্যতা পাওয়া বাজার চলতি সমস্ত নোটেই দীর্ঘদিন ধরে রয়েছেন জাতির জনক মহাত্মা গান্ধী। কিন্তু কীভাবে তাঁর ছবি টাকায় এল জানেন? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
তিনি জাতির জনক। এমন কোনও সরকারি দপ্তর নেই, যেখানে গান্ধীর ছবি খুঁজে পাওয়া যাবে না। শুধু তাই নয়, বেশিরভাগ সরকারি অনুষ্ঠানেও তাঁর ছবিতেই মাল্যদানের চল রয়েছে। তবে আর কোথাও তিনি থাকুন বা নাই থাকুন, যে কারও মানিব্যাগে তাঁকে ঠিক খুঁজে পাওয়া যাবে। কারণটা অবশ্য নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মান্যতা পাওয়া সব নোটেই রয়েছে মহাত্মা গান্ধীর ছবি। তাও আবার একটা নয়, দু-দুটো।
আরও শুনুন: অভ্রান্ত নন, অবতারও নন… তবু গান্ধীকে অস্বীকারে ক্ষতি ভারতবর্ষেরই
দেশ স্বাধীন করতে মহাত্মা গান্ধীর ভূমিকা অনস্বীকার্য। বিভিন্ন অহিংস কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে ইংরেজদের চোখে চোখ লড়াই করতে শিখিয়েছিলেন তিনি। শুধু তাই নয়, তাঁর আদর্শ, সাধারণ জীবনযাপনের পদ্ধতি উদ্বুদ্ধ করেছিলেন আপামর দেশবাসীকে। তাই সহজেই তিনি হয়ে উঠেছিলেন ‘বাপু’। তাই স্রেফ স্বাধীনতা পর্বের লড়াইয়ের গণ্ডিতে মহাত্মাকে বেঁধে রাখা কঠিন। বলা ভালো, বহু আগেই সেই ধারণা বদলে গিয়েছে অনেকেরই। কারণ অন্যান্য স্বাধীনতা সংগ্রামীদের মতো গান্ধী স্রেফ ছবিতে সীমাবদ্ধ থাকেননি। রোজকার রুটিনের এক অতিপ্রয়োজনীয় অংশ হয়ে উঠেছেন তিন। ঠিক ধরেছেন, টাকায় গান্ধীজির ছবি কীভাবে এল সে কথাই বলছি।
আরও শুনুন: মহাত্মা গান্ধীর পথেই আত্মনির্ভরতা শিখুক পড়ুয়ারা, চরকা কাটার ঘর বানাল মাইসুরুর স্কুল
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যে টাকা চালু হয়েছিল সেখানে মূলত অশোক স্তম্ভের ছবি ছিল। সেইসঙ্গে আরও কিছু জাতীয় চিহ্নের ছাপ থাকলেও কোনও ব্যক্তির ছবি সেইসব নোটে থাকত না। তবে শোনা যায়, এই নোট সহজেই জাল করা যেত। একসময় যা রীতিমতো সমস্যার কারণ হয়ে ওঠে। সমস্যা মেটাতে তড়িঘড়ি নোট বদলের সিদ্ধান্ত নেয় ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। ১৯৬৯ সালে প্রথমবার অশোকস্তম্ভের বদলে টাকায় এল গান্ধীজির ছবি। মনে করা হয়, নকল হওয়ার সম্ভাবনা কমাতেই নোটে কোনও ব্যক্তির ছবি রাখার সিদ্ধান্ত নেয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। কারণ জড় বস্তু তুলনায় জীবন্ত কারও ছবি নকল করা কঠিন। যদিও সেই সময় সব নোটে গান্ধীর ছবি ছিল না। তা এল ১৯৮৭ সালের পর থেকে। সে বছর ৫০০ টাকার নোটে ছাপা হল গান্ধীজির ছবি। আর সেই থেকে একইভাবে ভারতীয় নোটে বিরাজ করছেন জাতির জনক। যদিও এরপরেও বদলেছে ভারতীয় নোটের ধরণ। বদল এসেছে নোটের নকশাতেও। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সরানো হয়নি গান্ধীজির ছবি। বরং একটা নয়, দু-দুটো গান্ধীর ছবি ব্যবহার করা হয় নোটে। একটা স্পষ্টভাবে উপর থেকেই বোঝা যায়, আরেকটা জলছবি। নোট শনাক্তকরণে এই গান্ধীজির ছবিটিরও বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। তবে প্রথম থেকেই টাকায় মহাত্মার একটি বিশেষ ছবিই ব্যবহার করা হয়। শোনা যায়, ছবিটি ১৯৪৬ সালে তোলা। সেই সময় গান্ধীজি ভাইসরয় হাউসে মায়ানমার ও ভারতের তৎকালীন ব্রিটিশ স্টেট সেক্রেটারি ফ্রেডরিক পেথিক লরেন্সের সাথে দেখা করতে এসেছিলেন। তখনই এই ছবি তোলা হয়। অনেকেই দাবি করেন, এই ছবিতে খুব স্পষ্ট ভাবে গান্ধীজির হাসি ধরা পড়েছে। তা সব নোটেই ব্যবহার করা হয় ছবিটি।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কেন গান্ধীজির ছবিই বাছা হল?
এর কোনও সঠিক ব্যাখ্যা কেউই দিতে পারেন না। তবে মনে করা হয়, গান্ধীজির সর্বজনীন গ্রহনযোগ্যতার কথা মাথায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। স্বাধীনতার বহু আগেই তিনি দেশবাসীর কাছে পরিচিত হয়ে ওঠেন জাতিক জনক হিসেবে। তাঁকে চেনে না এমন ভারতীয় খুঁজে পাওয়াই কঠিন। তাই নোটের ক্ষেত্রেও গান্ধীর ছবিই ব্যবহার করা হয়। তবে এই ব্যাখ্যা ছাড়াও কারও আলাদা মত থাকতে পারে।