ভালোবাসায়, আনন্দে, অভিমানে, আমাদের স্বর্গ না থাক, চকোলেট কিন্তু আছেই। আর ছোটদের তো কথাই নেই। ভাত-রুটিতে রুচি না থাকলেও চকলেটের জুড়ি মেলা ভার। তবে শরীর-স্বাস্থ্যের কথা ভেবে হোক বা, রুচির টানেই- ডার্ক চকোলেটের চাহিদা কিন্তু আজকাল বেশ বেড়েছে। কিন্তু জানেন কি, কী ভাবে তৈরি হয় এই ডার্ক চকোলেট। এই ডার্ক চকোলেটের সঙ্গে মিশে রয়েছে কত শিশুর রক্ত-কান্না-ঘাম। শুনে নিন সেই সব শিশুদের অজানা যন্ত্রণার গল্প।
চকোলেট পছন্দ করেন না, এমন মানুষ হাতে গোনা। মিষ্টি থেকে শুরু করে কেক, প্যাস্ট্রি, মুজ কিংবা আইসক্রিম, চকোলেটের কাটতি সর্বত্র। রংচঙে কিংবা সোনালি রাংতায় মোড়া একটুকরো চকলেট, হাতে পেলে মনটা কার না ভাল হয়ে যায় বলুন!
কিন্তু কীসের বিনিময়ে আমরা দোকান থেকে এই খুশি কিনছি জানেন? জানেন কী ভাবে তৈরি হয় এই ডার্ক চকোলেট। শুনুন তবে।
চকোলেট তৈরির মূল উপাদানই হল কোকো। ভারতে চকোলেট তৈরির কারখানা থাকলেও ওই কোকো বস্তুটি কিন্তু এখানে বিশেষ মেলে না। কোকোর বেশির ভাগ অংশই উৎপন্ন হয় বিদেশে। আর সেই তালিকায় সব চেয়ে উপরে রয়েছে পশ্চিম আফ্রিকা।
আফ্রিকা বললেই জঙ্গলের রাজা মনে পড়লেও, খুব একটা আর্থিক ভাবে এগিয়ে থাকা দেশের মধ্যে পড়ে না সে। বিশ্বে মোট উৎপাদিত কোকোর প্রায় ৭০ শতাংশই আসে পশ্চিম আফ্রিকার ঘানা ও আইভরি কোস্ট থেকে। তালিকায় রয়েছে ব্রাজিলও। আর সেই সৌভাগ্যই বিপর্যয় ডেকে এনেছে ওই সব অঞ্চলের অজস্র শিশুর।
আরও শুনুন: এই অপুষ্টির উপত্যকাই আমার দেশ! ৩৩ লক্ষ শিশুর অপুষ্টিতেও কতটা সরব দেশবাসী?
পশ্চিম আফ্রিকার ওই সব অঞ্চলের অলিগলি ঢুঁ দিলে দেখা যাবে, কোকো বাছাই করে চকোলেট তৈরি করে যে সব শ্রমিকেরা, তাঁরা প্রায় প্রত্যেকেই শিশু। ১২-১৫ বছরের শিশুদের পাশাপাশি কাজ করতে দেখা যাবে বছর পাঁচেকের শিশুকেও। আর এসব কারখানা থেকেই চকোলেট পৌঁছয় সব নামীদামী চকোলেট বিক্রয়কারী সংস্থাগুলির হাতে। কোকো গাছ থেকে বীজ বাছাইয়ের কাজে ব্যবহার করা হয় এদের। চলে নৃশংস অত্যাচার। তাদের বেশির ভাগ অংশই পাচার হয়ে এসেছে। চলে অপহরণও। মালি, বুরকিনা ফাসো-র পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলো থেকে অগনিত শিশু পাচার হয় ঘানা ও আইভরি কোস্টের চকোলেট ফার্মগুলিতে। বাদ যায় না মেয়েরাও। রিপোর্ট বলছে, এই সব পাচার হয়ে আসা শিশুর মধ্যে ৪০ শতাংশ শিশুকন্যা।
সকাল বেলা উঠেই কোকো গাছ থেকে বীজ পাড়ার কাজে লেগে পড়ে বাচ্চাগুলো। কাজ কখন শেষ হবে কেউ জানে না। কোনও দিন রাত গড়িয়ে ভোর হয়ে যায় ফের। দিনে প্রায় ১৪ ঘণ্টারও বেশি সময়ের কাজ। গাছে উঠে কোকো বীজ পেড়ে আনা, সেগুলোকে ঝাড়াই বাছাই, তার পর সেগুলোকে বস্তায় ভরা। এক একটা বস্তা ১০০ পাউন্ডেরও বেশি ভারী হয়ে যায়, কখনও কখনও খুদে শরীরের থেকে কয়েকগুণ বড়। সেই সব পিঠে করে বয়ে আনতে হয় কোথা থেকে কোথায়। সারা দিনে খাবার বলতে দিনে একবার সেদ্ধ ডিম আর ভুট্টা সেদ্ধ। একরত্তি শরীরগুলো ক্লান্তিতে ভেঙে পড়ে। আর তখনই পিঠে এসে পড়ে নির্মম বেত। চামড়া তুলে নিতে চায়। ফের ওরা কাজ করে।
আরও শুনুন: এখানে ১২ বছর বয়স হলেই মেয়েরা হয়ে যায় ছেলে, জানেন সেই আজব গ্রামের কথা?
দিনের পর দিন বাড়ি যাওয়া হয় না ওদের। পাচার হয়ে আসা শিশুদের তো বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগের অনুমতিটুকুও নেই। কারণ বেশ কিছু বছরের লিজে কোকো কারখানারগুলির কাছে বিক্রি হয়ে গিয়েছে ওরা। পালানোর চেষ্টা করলে শাস্তি আরও ভয়ঙ্কর। সূর্যের আলো ঢোকেনা একচুলও, এমন একটা ঘরে শিকল পরিয়ে আটকে রাখা হয়। অবিশ্রাম কাজে ক্লান্তিতে শরীর নিভে আসে। ভুল হয়ে যায় কাজে। কতসময় ধারাল অস্ত্র দিয়ে বীজ কাটার সময় একরত্তি হাত-পা গুলো কেটে ছড়ে একশা হয়ে যায়। এতেও শেষ হয় না। অনেক সময়ই ফার্মের মালিক, কর্মী কিংবা পুলিশের যৌন হিংসার মুখে ক্ষতবিক্ষত হতে হয় শিশুগুলোকে। চলে নৃশংস শারীরিক নির্যাতন। বাদ যায় না দুধের শিশুও।
বাকি অংশ শুনে নিন