গ্রামের সকলেই ইউটিউবার। বেশিরভাগেরই রোজগারের প্রধান উৎস সোশাল মাধ্যম। মোটা টাকা আয় হয়ও। আর তার জেরেই এই গ্রামকে ভারতের ইউটিউব ক্যাপিটালের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। কোন গ্রামের কথা বলছি? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
চারিদিকে সবুজ। গাছাপালা, পুকুর, কাঁচা রাস্তা, মাটির বাড়ি সবই রয়েছে। বেমানান স্রেফ একটা বিষয়, গ্রামের মানুষজন আর তাদের জীবনযাপন। প্রত্যেকের হাতেই সারাদিন মোবাইল। অবশ্য এতেই বা অবাক হওয়ার কি আছে! ডিজিটাল ভারতে গ্রামেগঞ্জেও যে মোবাইল পৌঁছবে এটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু না, এখানকার মানুষজন মোবাইলকে স্রেফ বিনোদনের অঙ্গ হিসেবে দেখেন না। বরং এই যন্ত্রই তাদের রোজগারের প্রধান মাধ্যম।
:আরও শুনুন:
গোটা গ্রামে কারও কাছে নেই মোবাইল, নেই ইলেকট্রিসিটিও! কোথায় রয়েছে এমন জায়গা?
শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। শহরের ধায়নধারণাকে চ্যালঞ্জ জানিয়ে, এই গ্রামের সবাই ইউটিউবার হয়ে উঠেছেন। রীতিমতো পাকাপোক্ত কনটেন্ট ক্রিয়েটর সকলে। প্রত্যেকেরই সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা বেশ ভালো। যে ধরনের ভিডিও এঁরা তৈরি করেন তাতে লাইক, ভিউসও কম হয় না। তার থেকে রোজগারও হয়। তার প্রভাব এঁদের জীবনযাত্রায় পড়েছে ভালমতো। একসময় নুন আনতে পান্তা ফুরোনোর সংসারে, রোজ ভাতের হাঁড়ি চড়ে। অবশ্য সেই ভাত রান্না দেখিয়েই পরের দিনের অন্নের টাকা যোগাড় করেন এঁরা। আসলে, ইউটিউবে এই ধরনের ভিলেজ লাইফস্টাইলের ভিডিও বেশ জনপ্রিয়। অনেকেই আগ্রহ নিয়ে গ্রামের মানুষের রোজনামচা দেখতে পছন্দ করেন। তা যদি আলাদা করে সিনেমার মতো শ্যুটিং করা হয়, তাতে মাটির গন্ধ থাকে না। তাই এখানকার মানুষজন, একেবারে খাঁটি গ্রাম্য পরিবেশ পরিবেশন করেছেন সোশাল মাধ্যমে। তাই দেখেই লাইকের বন্যা বইয়ে দিয়েছেন নেটিজেনরা। মূলত ইউটিউবেই এঁদের রমরমা। প্রত্যেক বাড়িতে আর কিছু থাক না থাক, একটি মোবাইল ও ট্রাইপড অবশ্যই থাকবে। কেউ কেউ ভিডিও তৈরির আরও অনেক সরঞ্জাম কিনে রেখেছেন। বুঝতে হবে, এঁরা হলেন ওই গ্রামের প্রথম সারির কনটেন্ট ক্রিয়েটার। সবকিছুতেই অন্যান্য অনেকের তুলনায় অনেকটা এগিয়ে। বিষয়টা নতুন নয়, তবে আন্তর্জাতিক মিডিয়ার নজরে এসেছে সম্প্রতি। তাই আলাদা করে হইচই শুরু হয়েছে। বিবিসির তরফে এই গ্রামকে ভারতের ইউটিউব ক্যাপিটাল বলা হচ্ছে। গ্রামের মানুষও এই তকমা পেয়ে খুশি।
:আরও শুনুন:
চিন বা জাপান নয়, ভারতেই রয়েছে এশিয়ার ধনীতম গ্রাম
কথা বলছি, ছত্তিসগড়ের তুলসী গ্রাম সম্পর্কে। শহর থেকে অনেকটা দূরে থেকেও শহুরেদের নজর কেড়েছে এখানকার মানুষজন। নেপথ্যে ইউটিউব। সবসময় যে গ্রাম্যজীবন দেখানো হয় তা নয়, বরং আলাদা করে গল্প ফেঁদে সেই গল্পের নাট্যরূপ ভিডিওস্থ করাই লক্ষ। তাতে বিভিন্ন সামাজিক ইস্যু উঠে আসে। বিশেষ বার্তাও থাকে আবশ্যিকভাবে। গ্রামের মানুষ সেসব ভিডিও দেখেন, শহরের মানুষও সেসব ভিডিও দেখেন। ভাইরাল কনটেন্টের কমতি নেই। সবথেকে মজার বিষয়, এঁরা কেউ আলাদাভাবে মেকআপ করেন না বা নিজেদের চারপাশটা বদলে ফেলার চেষ্টা করেন না। বরং গ্রাম্য পরিবেশ দেখানোই এঁদের ইউএসপি। নিখাদ অভিনয়ের জোরে অনেকে নজর কাড়েন। কারও প্লাস পয়েন্ট কনটেন্ট। সবমিলিয়ে এই গ্রামে তৈরি হওয়া সোশাল পণ্য রমরমিয়ে বিকোয় নেটদুনিয়ায়। প্রথম থেকেই যে গ্রামের পরিবেশ এমনটা ছিল, তা নয়। কোভিড অতিমারিই এখানকার মানুষদের জীবনে এমন বদল এনেছে। বাড়িতে থেকে ইউটিউবে ভিডিও দেখতে দেখতে সেই দলে নিজেদের নাম লেখাতে শুরু করেন এখানকার বাসিন্দারা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই সংখ্যা বেড়েছে। আর বর্তমানে গ্রামের প্রায় সকলেই ইউটিউবে মজেছেন। তাতে আনন্দ যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে মোটা টাকা রোজগারের সুযোগও।