শোনা যায়, এককালে তিনিই ছিলেন বিশ্বের সবথেকে ধনী ব্যবসায়ী। তাঁর সামনে টাটা-অম্বানিরা গরিব-গুর্বো মাত্র। বিল গেটস, জেফ বেজোসরাও মধ্যবিত্তের বেশি কিছু না। ইস্ট ইন্ডিয়া আমলে তাঁকে সমঝে চলতেন ইংরেজরাও। কার কথা বলছি? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
ভারতীয় ধনী ব্যবসায়ী। একথা শুনলে সবার আগে মনে আসে মুকেশ আম্বানি, রতন টাটা কিংবা গৌতম আদানির নাম। দেশ তো বটেই, বিশ্বের দরবারেও ধনী হিসেবে এঁদের যথেষ্ট সমাদর। কিন্তু এমনও এক ভারতীয় ব্যবসায়ী ছিলেন যিনি টাটা-আম্বানির চাইতেও বেশি সম্পত্তির মালিক ছিলেন। তাও আবার ইংরেজ আমলে।
আরও শুনুন: প্রার্থী হতে পারেন, কিন্তু ভোট দেওয়ার অধিকার নেই জেলবন্দিদের, কেন?
কথা বলছি, ভিরজি ভোরা সম্পর্কে। গুজরাটের বাসিন্দা। কাজেই আম্বানিদের সঙ্গে তাঁর তুলনা সহজেই উঠে আসে। কিন্তু সময়ের ফারাক অনেকটাই। সেই মুঘল আমলে ভারতীয় ব্যবসায়ী হিসেবে তাঁর নাম ছড়িয়েছিল। কোম্পানির শাসনকালেও তা অটূট ছিল বলা যায়। ব্যবসায়ী হিসেবে তো বটেই, মানুষ হিসেবেও তাঁকে সমঝে চলতেন ইংরেজরা। নেহাত সে যুগে আজকের মতো উন্নত ছিল না কিছুই। থাকলে হয়তো, ভিরজিরও কয়েকটা চ্যাটার্ড বিমান থাকতো। নিদেনপক্ষে কয়েকশো বিলাসবহুল গাড়ি কেনার সামর্থ অবশ্যই ছিল তাঁর। ইতিহাস বলছে, ইংরেজ আমলেই ভিরজির মোট সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ৮০ লক্ষ। তার মধ্যে সে যুগের বিলাসিতার যাবতীয় নিদর্শনের সবই ছিল। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে ব্যবসায়ীদের কাছে ৮০ লক্ষ হয়তো তেমন কিছু না। কিন্তু সময়ের হিসাবে দেখলে সে যুগে ওই টাকারই মূল্য ছিল আজকের কয়েকশো কোটির সমান।
আরও শুনুন: ধন যার, ভোটও তারই! সম্পদের মালিকানা মেপেই কি প্রার্থী বাছাইয়ের প্রবণতা বাড়ছে দেশে?
ভিরজি ব্যবসা করতেন মশলার। মূলত দারচিনি আর গোলমরিচ রপ্তানি করতেন বিভিন্ন প্রদেশে। সঙ্গে ছিল সোনার ব্যবসাও। এখানেই শেষ নয়। রমরমিয়ে সুদের কারবারও চালাতেন ভিরজি। শোনা যায়, মুঘল সম্রাট ওরংজেব তাঁর কাছে টাকা ধার নিয়েছিলেন একসময়। ভাবুন তো, সম্রাটকে যিনি টাকা ধার দেন, তাঁর প্রতিপত্তি ঠিক কতটা হতে পারে? প্রায়শই উপহার হিসেবে মুঘলদের বিভিন্ন দামি সামগ্রী পাঠাতেন ভিরজি। সম্রাট শাহ জাহানকে চারটি ঘোড়া উপহার দিয়ে বেশ নামও কুড়িয়েছিলেন রাজ দরবারে। কাজেই ব্রিটিশরা ভারতে এসে ভিরজির সঙ্গে সমঝোতা করতে চায়। সময়টা আনুমানিক ১৬২৯-১৬৬৮, এর মধ্যে ইংরেজরাই ভিরজির সঙ্গে ব্যবসায়িক সখ্যতা গড়ে তোলে। সে সময় ব্যবসায়ী মহলে ভিরজির আলাদাই কদর লক্ষ করা যেত। যার সম্পূর্ণ ফায়দা লুঠতেন তিনি। মশলা কিংবা সোনা ব্যবসায় একছত্র আধিপত্য গড়ে ফেলেন সহজেই। এমনিতে এরকম কাণ্ড অন্য কেউ করলে ইংরেজরাই আইনি পথে ব্যবস্থা নিত। কিন্তু ভিরজির বিরুদ্ধে তেমন কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি বলেই জানা যায়। অল্প দিনের মধ্যে বিশ্বের দরবারে সেরার সেরা ব্যবসায়ী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করে ফেলেন ভিরজি। যার দরুন সেই আমলে দেশের নাম ছড়িয়েছিল সবর্ত্র। ভারতীয় ব্যবসায়ী হিসেবে এরপরে অনেকেই বিখ্যাত হয়েছেন। কিন্তু ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে ভিরজির নামই। আগামীদিনেও হয়তো একইভাবে তাঁকেই বিশ্বের সর্বকালের সেরা ভারতীয় ব্যবসায়ীর মান্যতা দেবেন অনেকে।