মুসলিম বাড়ি। সেখানে পূজিতা হন হিন্দু দেবী। আমাদের দেশেই রয়েছে এমন এক মুসলিম পরিবার। দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা নিজেদের বাড়িতেই হিন্দু দেবীর আরাধনা করে আসছেন। কেন এমন রেওয়াজ ওই পরিবারে? আসুন শুনে নিই।
হিন্দু বাড়িতে ঠাকুর থাকা একেবারেই স্বাভাবিক। অনেকের বাড়িতেই আস্ত মন্দির থাকে। কিন্তু কোনও মুসলিম বাড়িতে হিন্দু দেবীর মন্দির দেখেছেন? দেশে রয়েছে এমনও এক পরিবার। যারা হিন্দু দেবীকেই নিষ্ঠাভরে প্রতিদিন পুজো করেন। তাও কোনও বাইরের মন্দিরে নয়। তাঁদের নিজেদের বাড়িটাই পরিণত হয়েছে হিন্দু মন্দিরে।
আরও শুনুন: মন্দিরে বসেই নমাজ পড়েন মুসলিমরা, কোথায় চালু এই রেওয়াজ?
কথা বলছি তিরুপতি অঞ্চলের এক পরিবার সম্পর্কে।
এমনিতেই দক্ষিণের এই শহর হিন্দু তীর্থক্ষেত্রের জন্য বিখ্যাত। এখানকার তিরুপতি মন্দিরে বিদেশ থেকেও ভক্তরা এসে ভিড় জমান। তবে দক্ষিণের তিরুপতি শহরে ধর্মের নামে ভেদভাব চোখে পড়ে না তেমন। মুসলিম-খ্রিশ্চান-শিখ সব ধর্মের মানুষ এখানে মিলেমিশে থাকেন। যে যার ধর্মীয় উৎসবে নিজেদের মতো শান্তি বজায় রেখে আনন্দও করেন। তবে তিরুপতির বাসিন্দা নুর আহমেদ ও তাঁর স্ত্রী নাসরিন সম্প্রীতির এক অনন্য নজির গড়েছেন। মুসলিম হয়েও নিজেদের বাড়িতে হিন্দু মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছেন তাঁরা। শুধু তাই নয়, দীর্ঘ ১২ বছর ধরে এই বাড়িতেই হিন্দু দেবীর আরাধনাও করেন তাঁরা নিজেরাই।
আরও শুনুন: গাছের মধ্যেই ঈশ্বরের বাস, ভক্তিভরে পুজো করলে মেলে বিশেষ ফল
কিন্তু মন মুসলিম পরিবারে?
তাহলে খুলেই বলা যাক। ২০১১ সালে তিরুপতির লিঙ্গেশ্বর নগরে বাড়ি বানানোর জন্য জমি কেনেন নূর। নিজের মনের মতো সেখানে বাড়ি তৈরিও করেন। কিন্তু বাড়িটিতে রং শুরু করতেই ঘটে অদ্ভুত এক কাণ্ড। নূর আবিষ্কার করেন নির্দিষ্ট একটা ঘরের দেওয়ালে যতই রং করা হোক, অদ্ভুত ভাবে একটা ছবি ফুটের উঠছে। আর সেই ছবি কোনও সাধারণ ছবি নয়। অনেকটা হিন্দু দেবী কালীর প্রতিকৃতি ফুটে উঠছিল দেওয়ালে, এমনটাই দাবি নূর ও তাঁর পরিবারের লোকজনের। যদিও সেদিকে বিশেষ পাত্তা না দিয়েই নূর ওই বাড়িতে থাকা শুরু করেন। এরপর একরাতও কাটেনি, নূর স্বপ্নে দেবীর দর্শণ পান। আমাদের দেশে এমন বহু মন্দির রয়েছে, যা স্বপ্নাদেশে তৈরি। এক্ষেত্রেও ঠিক তেমনটাই ঘটে বলে দাবি নূর পরিবারের। সেদিন রাত্রে দেবী নিজে তাঁদের আদেশ দেন পুজো করার। স্বপ্নে দেখা সেই দেবী আসলে ছিলেন নাগ-কালীর রূপ। বাংলায় দেবীর এই বিশেষ রূপের চল না থাকলেও দক্ষিণে নাগদেবীর এমন রূপ দেখা যায়। সেই থেকেই শুরু। দেওয়ালে যে দেবীর ছবি ফুটে উঠেছিল সেখানেই পুজো শুরু করেন নূর ও তাঁর পরিবার। স্থানীয়রাও যোগ দেন তাঁদের সঙ্গে। ধীরে ধীরে ওই ঘরে স্থাপিত হয় দেবীর মূর্তি। আর মুসলিম বাড়িই পরিণত হয় হিন্দু মন্দিরে। এরপর কেটে গিয়েছে দীর্ঘ ১২ বছর। এখনও ভক্তিভরে দেবীর আরাধনা করে ওই মুসলিম পরিবার। তাঁদের দাবি, এর জেরেই তাঁদের সংসারে সুখ শান্তি বজায় রয়েছে। এমনকি এই ক-বছরে তাঁদের কোনওরূপ আর্থিক সমস্যাও হয়নি বললেই চলে। বর্তমানে শুধু এলাকার মানুষ নন, বাইরে থেকেও অনেকে এই মন্দিরে পুজো দিতে আসেন। সবমিলিয়ে মুসলিম পরিবারের ঠিকানাই পরিণত হয়েছে হিন্দু দেবীর মন্দিরে।