জঙ্গলে নেকড়ে-মায়ের স্নেহে বড় হয়েছিল এক মানবশিশু। মনে করা হয়, সে-ই ছিল রুডিয়ার্ড কিপলিং-এর মোগলি চরিত্রের অনুপ্রেরণা। কিন্তু জানেন কি, নেকড়ে-বালক মোগলির মতোই জঙ্গলজীবনে অভ্যস্ত হতে হয়েছিল এক মেয়েকেও। ‘মোগলি গার্ল’-এর তকমা পেলেও তার জীবন অবশ্য হেঁটেছে আলাদা পথে। আসুন, শুনে নেওয়া যাক সেই ‘জঙ্গলকন্যা’-র কথা।
সেটা ২০০৭ সালের জানুয়ারি মাস। সংবাদপত্রগুলিতে হঠাৎ একদিন আছড়ে পড়ল একটা চমকে দেওয়ার মতো খবর। জানা গেল, লোকালয়ে দেখা গিয়েছে এক মহিলাকে। সে সম্পূর্ণ নগ্ন। সারা শরীর নোংরা, অপরিচ্ছন্ন। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, সে নাকি বেরিয়ে এসেছে জঙ্গল থেকে। চার পায়ে ভর করে হাঁটছিল সে। মুখের ভাষা মানুষের পক্ষে দুর্বোধ্য। মানুষের সাথে নয়, জন্তু-জানোয়ারের সাথেই তার আচরণের মিল ছিল বেশি। কম্বোডিয়ায় দেখা এই মেয়েটির খবর বিদ্যুৎবেগে ছড়িয়ে পড়ে গোটা দুনিয়ায়। তাকে ডাকা হতে থাকে ‘মোগলি গার্ল’ বলে। কিন্তু আসলে কে এই মেয়ে? তার মধ্যে এমন পশুসুলভ আচার-আচরণ দেখতে পাওয়ার কারণই বা কী? উঠতে থাকে এমনই হাজারও প্রশ্ন।
আরও শুনুন: পাত্রীর গায়ের রং উল্লেখ থাকলে প্রকাশিত হবে না বিয়ের বিজ্ঞাপন, নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত সংবাদমাধ্যমের
ভিয়েতনাম এবং লাওসের সীমান্ত এলাকার জঙ্গল থেকে এই মেয়েটি বেরিয়ে এসেছিল বলে শোনা যায়। আসলে এই এলাকায় যেসব শ্রমিকেরা কাজ করত, বেশ কিছুদিন ধরে তাদের খাবারদাবার চুরি হয়ে যাচ্ছিল। ফলে চোর ধরার জন্য তক্কে তক্কে ছিল তারা। আর তাদের হাতেই ধরা পড়ে যায় খাবার চুরি করতে আসা এই জঙ্গলকন্যা। তার অদ্ভুত আচার আচরণ দেখে হইচই পড়ে যায়। এসবের মধ্যেই তার বাহুতে একটি জন্মদাগের সূত্র ধরে তাকে নিজেদের মেয়ে বলে দাবি করে বসে একটি পরিবার। জানা যায়, ১৮ বছর আগে গোরু চরাতে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল তাদের আট বছরের মেয়ে। সেই হারানো মেয়ে রোকোমের নামেই এই মেয়েটিকে ডাকতে থাকে এলাকার মানুষ।
আরও শুনুন: নিয়েছিলেন পুরুষের ছদ্মবেশ, পুরুষের নামও! পরিচয় লুকিয়ে প্রথম বিশ্বভ্রমণ করেছিলেন এই নারী
তবে মোগলি যেমন জঙ্গলেও তাকে আগলে রাখার মতো বন্ধুদের দেখা পেয়েছিল, ‘মোগলি গার্ল’-এর ভাগ্য তত ভাল ছিল না। চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে জানিয়েছিলেন, মেয়েটির সারা গায়ে কাটাছেঁড়ার দাগ ছিল। দু’হাতের কব্জিতে দুটো কালো দাগ দেখলে বোঝা যায়, দীর্ঘদিন দড়ি বা শক্ত কিছু দিয়ে আটকে রাখা হয়েছিল তাকে। এমনকি তার যৌনাঙ্গও ক্ষতিগ্রস্ত ছিল বলেই জানিয়েছিলেন তাঁরা। সম্ভবত শারীরিক বা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছিল মেয়েটি।
তবে দীর্ঘদিনের বনবাস পেরিয়ে অবশেষে ঘর পেয়েছে ‘মোগলি গার্ল’। নিজে মানুষের মতো কথা বলতে না পারলেও, কিংবা সভ্য সমাজের রীতিনীতিতে অভ্যস্ত না হলেও এই পরিবারটি আগলে রেখেছে তাকে। নিজেদের মেয়ে হোক বা না হোক, মানবিকতার এক মরমী দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে তারা।