কেউ দাবিদার নয়। দিনের পর দিন মর্গেই পরে আছে দেহ। একটা-দুটো নয়, এমন মৃতদেহের সংখ্যা কয়েক হাজার। দায়িত্ব নিয়ে সেইসব বেওয়ারিশ দেহ সৎকার করেন এক বছর ২৫-র যুবক। জানেন তাঁর পরিচয়? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
বন্যা, ভূমিকম্প কিংবা প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা। কিছুই বলে কয়ে আসে না। তার উপর নিয়ন্ত্রণও সম্ভব নয়। কিছু বোঝার আগেই মৃত্যুর অন্ধকার গ্রাস করে। অনেক সময় সেইসব মৃতদেহ শনাক্ত করার মতোও কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় না। হয়তো পরিবারের বাকি সবাই একইভাবে মৃত। দিনের পর দিন বেওয়ারিশ পরিচয়ে সেইসব দেহ পরে থাকে মর্গে।
এ দেশে এমন ঘটনা নতুন নয়। যে কোনও মর্গে খোঁজ নিলেই এমন বেওয়ারিশ দেহের হদিশ মিলতে পারে। নির্দিষ্ট সময় পেরোলে তার সৎকারের ব্যবস্থাও হয়। তবে সেখানে যে কোনও নিয়ম মানা হবে না, তা বলাই বাহুল্য। এই পরিস্থিতি একবারে বদলানো সম্ভব নয়। তবে চেষ্টা করতে ক্ষতি কোথায়! তাই নিজেরাই দায়িত্ব নিয়ে বেওয়ারিশ দেহ সৎকারের ব্যবস্থা করে কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। ব্যতিক্রম গুরগাঁও-এর জাস কালরে। বছর ২৫-র যুবক। নিজেই দায়িত্ব নিয়ে বেওয়ারিশ দেহ সৎকারের ব্যবস্থা করে। ইতিমধ্যেই প্রায় ৩০০০ দেহ সৎকারের কাজ সম্পন্ন করেছেন জাস। একেবারে নিয়ম মেনে আত্মার শান্তি প্রার্থনা করে দেহ সৎকার করেছেন তিনি। আসলে, জীবসেবাই শিবসেবা, এই মন্ত্রে বিশ্বাসী কালরে পরিবার। বাবা রবি কালরের কাছে বরাবর এমনটাই শিখে এসেছেন বলে দাবি জেস-এর। তাই ছোট থেকেই চাইতেন আর্ত, পীড়িত অসহায়দের জন্য কিছু করবেন। নিজে দায়িত্ব নেওয়ার মতো বয়সে পৌঁছে সেই কাজ শুরু করেন। শুধু মৃতদেহ সৎকার নয়, গৃহহীনদের মাথা গোঁজার জায়গাও করে দেন এই যুবক ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা। প্রায় ১৫০০-রও বেশি অসহায় বয়স্ক মানুষের দেখাশোনার দায়িত্ব নিয়েছেন তাঁরা। একার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই গড়েছেন সমমনস্কদের নিয়ে একটা দলও। এঁরাই বেওয়ারিশ দেহের খোঁজ পেলে সৎকারের ব্যবস্থা করেন।
আগামীদিনে নিজেদের কাজের পরিধি আরও বাড়াতে চান জাস ও তাঁর দলের সদস্যরা। এক্ষেত্রে সবসময় বাবার সাহায্য পান জেস। তাঁর কথায়, মানুষের সেবা করাই সকলের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। সেই কাজে কোনও ফাঁক থাকুক এমনটা চান না জাস বা তাঁর দলের কেউ। ইতিমধ্যেই গুরগাঁও-এ একটি বাড়ি তৈরি করেছেন জেস। যেখানে ৫০০০ অসহায় মানুষ থাকতে পারবেন। তাও সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। শুধু থাকা নয়, এঁদের সবরকম দায়িত্ব সামলাবে জাস-এর সংগঠন। তবে সবটাই নিজেদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই ক্রাউড ফান্ডিং-এর ব্যবস্থাও করেন। তাতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন অনেকেই। এভাবেই এগিয়ে চলেছেন জাস। সকলে ভালো থাকুন, এই উদ্দেশ্য নিয়েই আরও কাজ করে যেতে চান তিনি।