মিডিয়ার দুনিয়ায় এখন ডিজিটালের ছড়াছড়ি। অনলাইন সংবাদপত্রের পাশাপাশি সংবাদপত্রের অনলাইন ভার্সনও সুলভ হচ্ছে ক্রমশ। সেখানেই অভিনব নজির প্রায় একশো ছুঁই ছুঁই এই সংবাদপত্রের। ভারতের একমাত্র হাতে লেখা খবরের কাগজ। শুনে নেওয়া যাক।
অনেকেই বলছেন, প্রিন্টের যুগকে পিছনে ফেলে এবার ডিজিটাল যুগে ঢুকে পড়েছি আমরা। বিশ্বের মতোই, দেশও এগোচ্ছে ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’ হয়ে ওঠার পথে। সব ক্ষেত্রেই অনলাইন কাজের গুরুত্ব বাড়ছে, বাড়ছে সুবিধাও। কিন্তু ডিজিটাল বিপ্লবের এই যুগে এখনও হাতে লেখা সংবাদপত্রের অস্তিত্ব আছে, এবং সেটা খোদ এই ভারতে। শুনে অবাক হচ্ছেন তো? কিন্তু গল্প নয়, নিখাদ সত্যি কথা। তাও এক-দুদিনের চমক নয়, প্রায় একশো বছর বয়সের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এই কাগজ। যার নাম ‘দ্য মুসলমান’। এই মুহূর্তে গোটা বিশ্বের একমাত্র হাতে লেখা সংবাদপত্র এটিই।
আরও শুনুন:
ক্লিভেজ কেন দেখা যাচ্ছে? প্রশ্ন টিভি সঞ্চালিকাকে, মিলল মোক্ষম জবাবও
১৯২৭ সালে পথচলা শুরু হয়েছিল ‘দ্য মুসলমান’-এর। চেন্নাই থেকে প্রকাশিত হতে শুরু করে এই উর্দু পত্রিকা, তবে কেবল সান্ধ্য সংস্করণ। তারপর স্বাধীনতা সংগ্রামের রক্তঝরা দিনগুলি এসেছে। দেশভাগ, হিংসা, হানাহানি, সবকিছুই দেখেছে এই সংবাদপত্র। তবে তার পথচলা কিন্তু থামেনি। এমনকি দেশ জুড়ে জরুরি অবস্থার সময়েও একটি দিনও বাদ পড়েনি কাগজের প্রকাশ। শতবর্ষের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে এখনও প্রকাশ পাচ্ছে এই হাতে লেখা কাগজ। মাত্র চার পাতার পরিসরে স্থানীয়, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সব ধরনের খবর রাখার চেষ্টা করে ‘দ্য মুসলমান’। প্রথম পাতায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সব খবর, আর দ্বিতীয় পাতায় থাকে সম্পাদকীয়। নামে মুসলমান হলেও, দেশের সবরকম খবরেই এই কাগজের নজর থাকে, আর সারা দেশেই তার পাঠকও রয়েছেন- দাবি বর্তমান সম্পাদকের। দাবি করা হয়, এই কাগজের সার্কুলেশন প্রায় ২২ হাজার। ২০১৮ সালেও এর দাম ছিল মাত্র ৭৫ পয়সা। সৈয়দ আজমাতুল্লার হাতে প্রতিষ্ঠিত এই সংবাদপত্রের বর্তমান সম্পাদক আজমাতুল্লার সাহেবের নাতি সৈয়দ আরিফুল্লা। মোট ছজন কর্মী নিয়ে চলে ‘দ্য মুসলমান’। সম্পাদক ছাড়া দুজন রিপোর্টার আর তিনজন ক্যালিগ্রাফার বা ‘কাতিব’।
আরও শুনুন:
ঠিক চালে কিস্তিমাত, আছে রাজা-মন্ত্রীও! বুদ্ধির খেলায় নেতারাও যেন দাবাড়ু
না, ২২ হাজার কপিই হাতে লেখা হয় না তা বলে। মূল কপিটিকে সুন্দর হস্তাক্ষরে লিখে ফেলেন ক্যালিগ্রাফাররা। তারপর সেখান থেকেই ছাপা হয় বাকি কপিগুলি। আর এইভাবেই এই কাগজকে চালিয়ে নিয়ে যেতে চান কর্তৃপক্ষ। প্রতিযোগিতার দৌড়ে তাল মিলিয়ে অনলাইনের পথেও হাঁটতে চান না তাঁরা। বরং ডিজিটাল যুগে হাতে লেখা ব্যতিক্রম হয়েই বেঁচে থাক ‘দ্য মুসলমান’, এই স্বপ্নটাই দেখে চলেছেন তাঁরা।