আকাশে ফাল্গুন পূর্ণিমার চাঁদ। রঙের নেশায় বুঁদ হয়ে আছে গোটা দেশ। সবাই মেতেছে একে অন্যকে রঙিন করার উৎসবে। কিন্তু দেশের এমন কিছু গ্রাম রয়েছে যেখানে দোলের আবহেও লাগে না রঙের ছোঁয়া। নেপথ্যে অবশ্য একাধিক কারণ রয়েছে। ঠিক কোথায় কোথায় দোল উৎসব পালিত হয় না? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
খেলবো হোলি রং দেব না? দোলের দিন এই প্রশ্ন যে কাউকে করা যায়। বাদ রাখতে হবে এই গ্রামের বাসিন্দাদের। কারণ সেখানে দোল নিষিদ্ধ। শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। এইসব গ্রামের বাসিন্দারা কোনওদিন দোল খেলেননি। বলা ভালো, আলাদা করে গায়ে রং মাখার যে উৎসব সেও এই গ্রামের মানুষদের অজানা।
বসন্ত মানেই দোল। আর দোল মানেই চারদিকে রঙের বাহার। দেশের বিভিন্ন শহর গ্রাম বছরের এই সময়টায় অন্তত রঙিন হয়ে ওঠে। ব্যতিক্রম উত্তরাখন্ডের কিছু গ্রাম। প্রকৃতির মায়ায় ভরা উত্তরাখন্ডের বিভিন্ন অঞ্চলে সারাবছর পর্যটকদের ভিড় লেগেই থাকে। এর মধ্যেই রয়েছে রুদ্রপ্রয়াগ। পাহাড়ের সৌন্দর্য তো বটেই সেইসঙ্গে এখানকার ঐতিহাসিক গুরুত্বও কম নয়। এরই অদূরে কুইলি এবং কুরঝান নামে দুই গ্রাম। যেখানে দীর্ঘ ১৫০ বছর ধরে রং খেলা বন্ধ। যার নেপথ্যে রয়েছে প্রচলিত এক জনশ্রুতি। গ্রামের বাসিন্দারা মনে করেন, তাঁদের আরাধ্যা দেবী ত্রিপুর সুন্দরী এই ধরনের হুল্লোড়ের উৎসবে রুষ্ঠ হবেন। কারণ দেবী শান্ত পরিবেশ পছন্দ করেন। এবার রং খেলার সময় হই হল্লা হওয়াটাই স্বাভাবিক। তাই দেবীকে তুষ্ট করতেই এখানকার বাসিন্দারা রং খেলেন না। একইভাবে হোলির রং গায়ে মাখেন না গুজরাটের রামসান গ্রামের বাসিন্দারা। কথিত আছে, এই গ্রামে একসময় শ্রীরামচন্দ্র এসেছিলেন। তাই সাধু সন্তদের আনাগোনা লেগেই থাকত গ্রামে। এমনই এক সাধুর অভিশাপে এই গ্রামে রং খেলা চিরতরে বন্ধ হয়। অনেকেই বলে থাকেন, এর নেপথ্যেও বিশেষ কিছু কারণ ছিল। তবে সেই খোঁজ না করে নিয়ম মানতেই বেশি স্বচ্ছন্দবোধ করেন গ্রামের সকলে। তাই দীর্ঘ ২০০ বছর ধরে এখানকার বাসিন্দারা রং খেলা থেকে নিজেদের বিরত রেখেছেন।
দোল খেলে না ঝাড়খণ্ডের দুর্গাপুর গ্রামের বাসিন্দারাও। সেখানে এমন নিয়ম জারি হওয়ার কারণটা বেশ আলাদা। শোনা যায়, এই গ্রামের একসময় দোলের দিনেই মারা গিয়েছিলেন রাজার একমাত্র সন্তান। কাকতালীয় ভাবে পরের বছর সেই দোলের দিনেই মারা যান রাজা নিজেও। তারপর থেকেই রটে যায় এই ঘটনার কথা। আর চিরতরে বন্ধ হয়ে যায় রঙের উৎসব। তবে এখন সেই নিয়মের বাঁধন কিছুটা আলগা হয়েছে। গ্রামের সকলেই যে দোল খেলেন না তা নয়। তবে তার জন্য যেতে হয় অন্যত্র। গ্রামের সীমানা পেরোলেই রং খেলায় কোনও না নেই। অন্যদিকে, দক্ষিণ ভারতেও দোল না খেলার রেওয়াজ রয়েছে ভালোমতোই। বিশেষ করে তামিলনাড়ুর বাসিন্দারা ফাল্গুন পূর্ণিমা রং খেলে উদযাপন করেন না। বরং এই দিন পূর্বপুরুষদের আত্মার শান্তিতে বিশেষ পুজোর ব্যবস্থা করেন তাঁরা। দিন শুরু করেন নদী বা পুকুরে স্নান করে। তবে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরিবর্তন এসেছে এসব জায়গাতেও। নিয়ম যাই থাকুক সবসময় তা কঠোরভাবে মেনে চলেন না অনেকেই। তবু মোটের উপর বলাই যায়, দেশের এইসব জায়গা দোলের দিনেও বেরঙিন।