মাথার উপর সূর্য। অথচ এতটুকু ছায়া পড়ছে না। আবার মাটির সঙ্গে যোগ নেই। তবু দিব্যি দাঁড়িয়ে পাথরের পিলার। সিনেমায় বা গল্পে নয়, এমন জিনিস সামনে থেকেই দেখা যাবে দেশের কিছু মন্দিরে গেলে। যেসব মন্দিরের রহস্য বছরের পর বছর ধরে রহস্যই রয়ে গিয়েছে। আসুন শুনে নেওয়া যাক।
দক্ষিণের সমুদ্র হোক বা উত্তরে হিমালয়, আমাদের দেশে মন্দির চোখে পড়ে সর্বত্রই। সবই যে দৈবগুণে বিখ্যাত তা নয়। বেশ কিছু মন্দির ঘিরে যাবতীয় চর্চা স্রেফ তার স্থাপত্যের নিরিখে। কোথাও আবার লুকিয়ে রয়েছে এমন রহস্য, যা হাজার চেষ্টা করেও কেউ সমাধান করতে পারেনি।
আরও শুনুন: ঘর ছেড়ে পথে বসেছেন ‘রামের’ জন্যই, তবুও রামকেই কৃতজ্ঞতা প্রৌঢ়ার
অযোধ্যার রামমন্দির প্রতিষ্ঠাকে কেন্দ্র করে গোটা বিশ্বে তৈরি হয়েছিল ধর্মীয় উন্মাদনা। তবে স্তাপত্য হিসবেও রামমন্দিরের গুরুত্ব কিছুমাত্র কম নয়। তবে একথা বলাই বাহুল্য, রাম মন্দির তৈরি হয়েছে হালে। এর বহু আগে থেকেই আমাদের দেশে রয়েছে এমন কিছু মন্দির যার অন্দরসজ্জা, স্থাপত্য এখনও গোটা বিশ্বকে ভাবতে বাধ্য করে। ইউনেস্কোর তরফেও ভারতের বহু মন্দিরকে হেরিটেজ স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। সেই তালিকাতেও রয়েছে কিছু রহস্যময় মন্দির। প্রথমেই বলতে হয়, কোনারকের সূর্য মন্দিরের কথা। পুরীর মন্দিরে ঘুরতে গেলে অন্তত একবারের জন্য কোনারকের সূর্য মন্দির ঘুরে আসেন পর্যটকরা। তার প্রধান কারণ এই মন্দিরের স্থাপত্য। কথিত আছে, এই মন্দিরের গর্ভগৃহেই সর্বপ্রথম সূর্যের আলো এসে পড়ে। যদিও বর্তমানে সূর্য মন্দিরে নিত্যপূজার কোনও ব্যবস্থা নেই। নেপথ্যে নানা জনশ্রুতি রয়েছে। তবে এই মন্দিরের সবথেকে রহস্যময় অংশ ভাসমান এক সূর্যমূর্তি। মনে করা হয়, মন্দিরের চূড়ায় থাকা বিরাট এক চুম্বকের জোরেই ওই মূর্তি বাতাসে ভাসমান রয়েছে। তবে এর সঠিক ব্যখ্যা এখনও দিতে পারেন না অনেকেই। তালিকায় থাকার পরের মন্দিরটি তামিল নাড়ুতে। এমনিতে সেখানে রহস্যময় মন্দিরের সংখ্যা কম নয়। তবে বৃহদেশ্বর মন্দিরের রহস্য সবথেকে অবাক করে। মন্দিরটি এমন প্রযুক্তিতে তৈরি যে এর ভিতরে কোনও ছায়া পড়ে না। মন্দিরের আরাধ্য মহাদেব। নৃত্যরত মহেশ্বরের বিরল এক মূর্তি এখানে রয়েছে। তবে সূর্য একেবারে মাথার উপর থাকলেও, এই মন্দিরে কোনও ছায়া পড়া না। আবার অন্ধ্রের এক মন্দিরের আরাধ্য নাকি মানুষের মতো ঘামেন। প্রস্তর মূর্তির গায়ে কীভাবে রক্তমাংসের মানুষের মতো ঘাম জমতে পারে সেই রহস্যের সমাধান মেলেনি আজও। এর কাছেই রয়েছে বীরভদ্র মন্দির। সেখানকার মূর্তি বা পরিবেশে কোনও রহস্য না থাকলেও, অদ্ভুত এক পিলার রয়েছে ওই মন্দিরে। গোটা মন্দিরে মোট ৭০ টি পাথরের পিলার দেখা যায়। উচ্চতায় সবই প্রায় ২০ ফুট। তার মধ্যে একটি পিলার এমন যার মাটির সঙ্গে কোনও যোগ নেই। মানে এই পিলারের সঙ্গে মাটির খুব সামান্য ফাঁক রয়েছে। সেখান দিয়ে কাপড় কিংবা কাগজ সবই গলানো যেতে পারে। এদিকে উপরের অংশ মন্দিরের ছাদের সঙ্গে লাগানো। দেখে মনে হবে উপর থেকেই যেন পিলারটি ঝুলছে। কিন্তু যে সময় মন্দির তৈরি হয়েছে তখনকার দিনে এমন কিছু তৈরি করা আদৌ কতটা সম্ভব ছিল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে।
আরও শুনুন: রামনামই সম্বল, কানাকড়ি ছাড়াই খাতা খোলা যায় অযোধ্যার এই ব্যাঙ্কে
তালিকায় রয়েছে কেরলের পদ্মনাভস্বামী মন্দিরও। এখানকার বিশেষত্ব বলতে নিরামিষভোজী কুমীর। শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। এই মন্দিরের চারপাশে ঘিরে রয়েছে বিরাট এক জলাশয়। যেখানে এমন কুমীরের দেখা মেলে, যারা মাংসর বদলে ঘাস-পাতা খেতে পছন্দ করে। আবার মহারাষ্ট্রের কৈলাস মন্দিরের অসাধারণ কারুকাজও অবাক হয়ে দেখার মতো। মনে করা হয়, এইসব বিরাট এক পর্বত খোদাই করে তৈরি হয়েছে। এক্ষেত্রেও আধুনিক প্রযুক্তি ছাড়া এমনটা কীভাবে তৈরি হল সেই প্রশ্ন তোলেন অনেকেই। তালিকায় থাকা পরের মন্দিরটি আসামে। সেখানকার বিখ্যাত কামাক্ষ্যা মন্দিরের কথা প্রায় সকলেরই জানা। আর এই মন্দিরের রহস্য লুকিয়ে রয়েছে আরাধ্য মা কামাক্ষ্যাকে ঘিরে। প্রতি বছর অম্বুবাচীর সময় মন্দিরের বিগ্রহ রজঃস্বলা হন। তার সত্যিকারের প্রমাণও মেলে মন্দিরে গেলেই। এমনকি, কথিত আছে মন্দির লাগোয়া ব্রহ্মপুত্রের জলও এই সময় লাল হয়ে যায়। যা এখনও রহস্যের বিষয়। সবশেষে রাজস্থানের মেহেদিপুর বালাজি মন্দিরের কথা না বললেই নয়। অনেকেই এই মন্দিরকে দেশের সবথেকে বেশি রহস্যে ঘেরা মন্দির বলে মনে করেন। কারণ এই মন্দির অতৃপ্ত আত্মারা ঘুরে বেড়ায়। শোনা যায়, ভূতে ধরা বা ওই জাতীয় সমস্যা নিয়ে প্রতিদিন এখানে ভিড় জমান দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষজন। তাঁদের না উপায়ে সারিয়ে তোলা হয়। বলাই বাহুল্য, এমন রহস্য এখনও রহস্যই রয়েছে গিয়েছে। যা হাজার চেষ্টা করেও কেউ সমাধান করে উঠতে পারেননি।