ঘুমিয়েছিল ১৪ বছরের কিশোরী, ঘুম থেকে উঠলেন ৪৬ বছরের মহিলা! একই মানুষ, এতক্ষণ, থুড়ি এত বছর ধরে ঘুমিয়েছেন। শুনতে অবাক লাগলেও এমনটাই সত্যি। ঘুমের দৌড়ে কুম্ভকর্ণকেও পিছনে ফেলবেন ইনি! কার কথা বলছি? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
রূপকথার গল্পে স্লিপিং গার্লের কথা মনে আছে? সেই যে, রাজকুমার এসে সোনার কাঠি, রুপোর কাঠি ছোঁয়ালেই যার ঘুম ভাঙবে! অক্ত অনন্ত সময় ধরে তিনি যে ঘুমিয়েছেন, তার হদিশ ছিল না কারও কাছে। তবে সেই ঘুম যে এই মহিলার থেকে বেশি নয়, তা বলাই যায়। কারণ যার কথা বলছি, ইনি ঘুমিয়েছেন ৩২ বছর!
কথা বলছি ক্যারোলিনা ওলসন সম্পর্কে। সুইডেনের ওকনো নামে ছোট্ট একটা শহরের বাসিন্দা। মা-বাবা ও পাঁচ ভাইবোনের সংসার। সুখে-দুখে ভালোই কাটছিল তাঁদের, মাঝে বাধ সাধল ঘুম! ঘটনা ১৮৭৫ সালের। একদিন ফোলা মুখ ও অসহ্য দাঁতে যন্ত্রণা নিয়ে বাড়ি ফিরল ক্যারোলিনা। কেন এই অবস্থা, প্রশ্ন করে জানা গেল, বরফের নদীতে পা পিছলে পরে গিয়েই এমনটা হয়েছে। সেইসময় এত ডাক্তার-বদ্যির কাছে যাওয়ার চল ছিল না। বড় কোনও সমস্যা হলে চিকিৎসা হত ঠিকই, তবে স্রেফ পড়ে যাওয়ার আর কীই বা শুশ্রুষা! তাই বাবা-মার কথা শুনে ঘুমিয়ে পড়ে ক্যারোলিনা। তবে সেই ঘুম ভাঙতে সময় লাগে ৩২ বছর। প্রথমে বিষয়টা কেউ আমল দেয়নি। ভাবা হয়েছিল, হয়তো দেরি করে ঘুম ভাঙবে ক্যারোলিনার। কিন্তু সকাল গড়িয়ে বিকেল, বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে, রাত, এমনকি কয়েকদিন পেরিয়ে যেতেও ঘুম ভাঙেনি। এরপর তো চিন্তা হওয়াই স্বাভাবিক। মেয়ের ঘুম ভাঙাতে ডাক্তারের কাছে ছুটলেন ক্যারোলিনার বাবা-মা। প্রতিবেশীদের দরজায় গিয়েও চাইলেন সাহায্য। সকলেই এগিয়ে এল। কিন্তু লাভের লাভ হল না। সব চেষ্টাই কার্যত জলে গেল। তবে এও যে বিশেষ এক রোগ, তা মোটের উপর বুঝে গিয়েছিলেন তাঁরা। তবে চিকিৎসা করানোর মতো টাকা ছিল না। তাই বাড়িতে রেখেই মেয়েকে সুস্থ করার, থুড়ি ঘুম ভাঙানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছিল অসহায় বাবা মা। নিয়মিত ওষুধ আর তরল খাবারে কোনও ভাবে দিন চলছিল ক্যারোলিনার। এভাবেই বছর ঘোরে। একে একে মারা যান ক্যারোলিনার বাবা-মাও। এরপরই ক্যারোলিনার খেয়াল রাখত ভাইরা। কাটতে থাকে বছরের পর বছর। অন্যান্য সবকিছু বদলাতে থাকে। স্রেফ একটা বিষয় এক, অপরিবর্তনীয়, এবং তা অবশ্যই ক্যারোলিনার ঘুম!
অবশেষে একদিন সেই মাহেন্দ্রক্ষণ এল। ঘুম ভাঙল ক্যারোলিনার। ততদিনে পেরিয়ে গিয়েছে ৩২ বছর। বয়স বেড়েছে। একলাফে ৪৬ বছরের মহিলা হয়ে গিয়েছেন কিশোরী। ঘুম থেকে উঠে নিজেই নিজেকে চিনতে পারেননি। ধীরে ধীরে সম্বিত ফেরে। তবে সুস্থই ছিলেন ক্যারোলিনা। পর জানা যায়, প্যারালিটিক ডিমেনশিয়া নামক একটি বিরল রোগের শিকার হয়েছিলেন ক্যারোলিনা। চলতি ভাষায় যাকে অরগ্যানিক মেন্টাল ডিসঅর্ডার বলা হয়। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান এই রোগটির সঙ্গে পরিচিত হলেও, সেই সময়ের চিকিৎসাবিজ্ঞানে এই রোগের ধারণা ছিল না। ফলত ক্যারোলিনার চিকিৎসা হয়নি বলা যায়। জানা যায়, আরও ৪২ বছর বেঁচেছিলেন তিনি। এমনিতে দিনের শেষে ঘুমের প্রয়োজন হয় সকলের। কিন্তু সেই ঘুম যদি এতদিন পর ভাঙে, তাহলে সমস্যা!