দ্বিতীয় স্ত্রীর গর্ভেই আসবে পুত্র। এমনটাই বিশ্বাস। আর সেই বিশ্বাসে ভর করেই দুবার বিয়ের পিঁড়িতে বসেন গ্রামের পুরুষরা। এক-দুজন নয়, এমনটাই প্রায় সমস্ত পরিবারের রীতি। কোথায় রয়েছে এই গ্রাম? কেন এমন ধারণায় বিশ্বাস করেন সেখানকার মানুষজন? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
এ দেশে বহু বিবাহ আইনত নিষিদ্ধ। তবু অনেকেই আইনের তোয়াক্কা না করে এই ধরনের কাণ্ড ঘটান। ধরা পড়লে শাস্তির মুখেও পড়তে হয়। তবে এমন এক গ্রাম রয়েছে যেখানে দুবার বিয়ে করাটাই প্রচলিত রেওয়াজ। নেপথ্যে কারণও রয়েছে। গ্রামবাসীর বিশ্বাস, দ্বিতীয় স্ত্রীর গর্ভেই পুত্র সন্তান আসবে। তাই বংশরক্ষার তাগিদে এমন কাজ করতেই হয়।
কথা বলছি রাজস্থানের ‘রামদেও কি বস্তি’ গ্রাম সম্পর্কে। দুই স্ত্রী নিয়ে সংসার করেন এ গ্রামের অধিকাংশ পুরুষ। তাঁদের কাছে এমনটাই স্বাভাবিক। তাই আলাদা করে দুই স্ত্রী-র মধ্যেও সমস্যা হয় না। গ্রামবাসীদের কথায়, দুই বোনের মতো একই বাড়িতে থাকেন দুই সতীন। আসলে, গ্রামের যুবকরা সচরাচর বাইরের কাউকে বিয়ে করেন না। গ্রামের মধ্যে থেকেই বিবাহযোগ্যা কাউকে খুঁজে নেন। এবার যে মেয়েটি এই নিয়ম দেখে বর হয়েছে, তাঁর কাছে বিষয়টা স্বাভাবিক মনে হবেই। এমনটাও হয়েই থাকে, যে বাড়িতে বিয়ে হচ্ছে সেই মহিলার বাবা দাদারাও দুবার বিয়ে করেছেন। সুতরাং বহুবিভ এই গ্রামে একেবারেই অস্বাভাবিক নয়। দীর্ঘদিন ধরে এখানে এমন নিয়ম চলে আসছে। গ্রামের বড়রা সবসময় দুবার বিয়ের পক্ষে সওয়াল করেন। তবে কাউকে জোর করা হয় না। কেউ না চাইলে বাধ্যও করা হয় না স্ত্রী রয়েছে এমন ব্যক্তিকে ফের বিয়ে করার জন্য। সবটাই সকলের সম্মতিতে হয়। স্থানীয়দের বিশ্বাস, এমনটা না করলে পরিবারে পুত্র সন্তান আসবে না। তাঁদের দাবি, আজ অবধি ওই গ্রামে কোনও ব্যক্তির প্রথম পক্ষের স্ত্রী মাতৃসুখ পাননি। সন্তান জন্মালেও তা পুত্র নয়। কিংবা জন্মের পর মারা গিয়েছে সন্তান, এমন ঘটনাও ঘটেছে। প্রশ্ন উঠতেই পারে, এতে আর অস্বাভাবিক ভাবার কি আছে! গর্ভের সন্তান পুত্র হবে না কন্যা তাতে মহিলার কোনও হাত আদৌ থাকে না। সুতরাং প্রথম পক্ষের স্ত্রী পুত্র সন্তান জন্ম দিতে পারবে না, এমনটা ভাবার কারণ নেই। তবে বিজ্ঞানের এই যুক্তি গ্রামের মানুষ মানেন না। তাঁদের কাছে প্রচলিত রীতিই অধিক ভরসাযোগ্য। তার থেকেও বড় কথা, গ্রামের মহিলারাই এতে আপত্তি তোলেন না। বরং সতীনের সঙ্গে ঘর করতে অনেকেই মুখিয়ে থাকেন।
শুনতে অবাক লাগলেও এমনটাই সত্যি। যেহেতু সবটা সবার সম্মতিতে হয় তাই সমস্যা হয় না। তবে গ্রামের বর্তমান প্রজন্ম এই রীতিতে খুব একটা বিশ্বাসী নন। একবার বিয়ে হয়ে গিয়েছে এমন কাউকে বিয়ে করতে তাঁরা মোটেও আগ্রহী নন। তাই তাঁদের কেউ জোর করে না। গ্রামের পুরনো বা বয়স্কদের মধ্যেই এই রীতি প্রচলিত। তাঁদের আর নতুন করে বিয়ের পিঁড়িতে বসার প্রয়োজন আর নেই। তবে তাঁরা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন দ্বিতীয়বার বিয়ে করলেই পুত্র সন্তানের বাবা হতে পারবেন গ্রামের পুরুষরা। মহাভারতের কাহিনিতে বহুবিবাহের একাধিক উদাহরণ মেলে। পুরাণের গল্পেও রয়েছে ভুরি ভুরি উদাহরণ। সেকালে এমনটাই ছিল প্রচলিত নিয়ম। না ছিল আইন না ছিল বাধা। তবে বাস্তবে এমন কিছু করতে হলে প্রশাসনের নজর থেকে বাঁচা মুশকিল। বাড়িতে সতীন এলে থানায় ছোটেন প্রথম পক্ষের স্ত্রী-ই। সেখানেই নির্বিবাদে স্বামীর দ্বিতীয় স্ত্রীকে মেনে নেন রাজস্থানের এই গ্রামের মহিলারা।