পৃথিবীর জনসংখ্যা যে হারে বাড়ছে, তাতে দিন দিন দুর্লভ হয়ে উঠছে বাড়ি তৈরি করার জন্য জমি। কিন্তু এই বাসস্থান সমস্যার সমাধান আগে থেকেই করে রেখেছেন চিনের এই বাসিন্দারা। মাটির উপরে বাড়ি তৈরি করেন না তাঁরা, বরং মাটির তলায় থাকাই তাঁদের পছন্দ। কীভাবে সেখানে থাকেন তাঁরা? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
গল্পে পড়া যায়, ভ্যাম্পায়ারেরা নাকি বাস করে মাটির তলায়। ঢাকনা আঁটা কফিনের মধ্যে। কিন্তু অমন কোনও কল্পিত প্রাণী কিংবা অশরীরীর কথা হচ্ছে না। খোদ মানুষও যে মাটির তলায় বাস করতে পারে, এমনটা ভেবেছেন কখনও? না, আধুনিক বিজ্ঞানের সাহায্যে তৈরি করা কৃত্রিম বাসস্থানও নয় সেসব। কারণ আজ থেকে প্রায় ছ-সাতশো বছর আগে থেকেই তৈরি করা হয়েছে এমন সব বাড়ি। আর সেই পুরনো আমল থেকেই এমনভাবে মাটির তলায় বসবাস করে আসছেন চিনের একটি অঞ্চলের মানুষ।
আরও শুনুন: ভুলে যেতে চান প্রাক্তনের স্মৃতি? অব্যর্থ দাওয়াই মিলবে এই সম্পর্ক ভাঙার মিউজিয়ামে
তাহলে খুলেই বলা যাক।
চিনের হেনান প্রদেশের সানমেক্সিয়া শহরের কাছাকাছি খোঁজ মেলে এই আশ্চর্য গ্রামের। গ্রামটির সব বাড়িই রয়েছে মাটির তলায়। মাটি কেটে গুহার মতো তৈরি করে তার মধ্যেই গড়ে তোলা হয়েছে একেকটি বাড়ি। জানা যায়, ওই গ্রামের বাসিন্দাদের বেশ কয়েক প্রজন্ম এভাবেই সেখানে বসবাস করে আসছে। গবেষকেরা অনুমান করেন, চিনে যখন মিং বংশের শাসনকাল চলছিল, সম্ভবত সেই চতুর্দশ শতক নাগাদই ওই অঞ্চলে এমন বাড়ি তৈরি করার চল শুরু হয়। কেউ কেউ মনে করেন, এমন ধরনের বাড়ির চল তার অনেক আগেই। তাঁদের মতে, প্রায় চার হাজার বছর আগেও চিনের পার্বত্য এলাকাগুলোতে এ ধরনের গুহাবাড়ি নির্মাণ করা হত। আর সেই বাড়ির উপরের সমতল জায়গা ব্যবহার করা হত চাষবাসের কাজে। এই ধরনের নির্মাণশৈলী বাড়ির ভিতরের আবহাওয়া গরমকালে শীতল আর শীতকালে উষ্ণ রাখতে সাহায্য করে বলেই মত অধিবাসীদের। তাঁরা আরও জানান, এই বাড়িগুলি ভূমিকম্পকেও প্রতিরোধ করতে পারে। প্রতিহত করতে পারে কোনও জোরালো শব্দকেও।
আরও শুনুন: বউ কেনার জন্য এই মেলায় যান যুবকেরা, মেয়েদের দরদাম করতে ডাকা হয় নিলামও
বর্তমানে এমন বাড়ির সংখ্যা প্রায় দশহাজার। আর সেখানে বসবাস করেন অন্তত হাজার তিনেক মানুষ। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিকতার প্রবেশ ঘটেছে এইসব বাড়িতেও। এসেছে বিদ্যুৎশক্তি। বাড়ির সঙ্গে আধুনিক ড্রেনেজ সিস্টেম যুক্ত করা সম্ভব হয়েছে। রান্নাঘরগুলি এমনভাবেই তৈরি করা, যাতে আগুনের তাপ উপর দিয়ে বেরিয়ে যেতে পারে। এমনকি গৃহপালিত পশুদের জন্যও আলাদা ব্যবস্থা রয়েছে এইসব বাড়িতে।
পর্যটকদের আকর্ষণ করার জন্য এইরকম কিছু বাড়ি সংরক্ষণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। চাইলে কেউ মাসিক ভাড়া দিয়ে থাকতে পারেন এইসব বাড়িতে। কোনও বাড়ি একেবারে কিনে নিতে চাইলে রয়েছে সে ব্যবস্থাও। বাসস্থানের সমস্যা যেভাবে বেড়েই চলেছে, ভেবে দেখুন, মাটির তলায় থাকতে শুরু করবেন নাকি?