মন্দিরে পুজো পান দেবতারা। এ কথা কে না জানে বলুন? তবে শুধু দেবতা নয়, ভালো কাজ করেছেন এমন যে কারও মন্দির হতে পারে। বাস্তবে রয়েছেও তাই। রামকৃষ্ণদেব, মা সারদা কিংবা সাধু-সন্তের মন্দির রয়েছে এই দেশে। কিন্তু যাঁরা তথাকথিত মন্দ লোক! তাঁরাও কি মন্দিরে ঠাঁই পেতে পারেন? আমাদের দেশে রয়েছে তেমন মন্দিরও। মহাকাব্যে তাঁদের মন্দ কাজ করতে দেখা গেলেও, মন্দিরে পূজা পান সেইসব চরিত্ররা। আসুন শুনে নেওয়া যাক।
কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের জন্য প্রত্যক্ষভাবে দায়ী দুর্যোধনের লোভ, সে কথা ঠিক। কিন্তু তাঁর মাস্টারমাইন্ড ছিলেন অন্য একজন। কৌরবদের লোভ আর হিংসার সঙ্গে যিনি নিজের কপটতা আর চাতুরিকে মিশিয়ে দিয়েছিলেন একেবারে সঠিক অনুপাতে। মহাভারতের সেরা খলনায়ক কে, এই প্রশ্নের জবাবে তাঁর নাম নিতেই হবে আমাদের। হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন। বলছি শকুনির কথা। এ দেশের মাটিতে রয়েছে তাঁরও মন্দির। আর আজ সেই গল্পই শুনব আমরা।
গোটা মহাভারতে গান্ধার রাজকুমার শকুনিই বোধহয় একমাত্র চরিত্র, যিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন কুরু বংশকে ধ্বংস করবেন। আর সেই কাজে তাঁর প্রিয় ঘুটি ছিলেন দুর্যোধন। বারবার বিভিন্ন পরিস্থিতিতে পাণ্ডবরাই যে দুর্যোধনের একমাত্র শত্র, তা ভালোমতোই নিজের সাধের ভাগ্নেকে বুঝিয়েছিলেন শকুনি। লোভের বশে দুর্যোধনও ছোট থেকেই সেকথা বিশ্বাস করতেন। যার ফল হয়েছিল মারাত্মক। একাধিকবার পাণ্ডবদের হত্যার চেষ্টা, ষড়যন্ত্র সবকিছুরই বর্ণনা মেলে মহাভারতের প্রতি পাতায়। সেইসব গল্প পড়েছেন অথচ শকুনিকে মনে মনে ঘৃণা করেন না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়াই কঠিন। তা সেই শকুনির নামেও মন্দির রয়েছে?
আরও শুনুন: মহাকাব্যের ‘মন্দজন’, তবু আছে মন্দির! দেশের কোথায় রয়েছে দুর্যোধনের মন্দির?
শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। মন্দিরটি কেরলে অবস্থিত। নাম ভারী অদ্ভুত। মায়ামকোত্তু মালাঞ্চরুভু মালানাদা। এই অদ্ভুত নামের মন্দিরেই পূজিত হন মহাভারতের সবচেয়ে নিন্দিত চরিত্র, শকুনি। মন্দিরের গর্ভগৃহে অবশ্য কোনও মূর্তি নেই। পুজো হয় বাইরের চাতালে। সেখানেই রয়েছে গ্রানাইটের তৈরি শকুনির অবয়ব। ভক্তরা এই মন্দিরে আসেন ঠিকই কিন্তু পুজো বলতে আমরা যেমনটা বুঝি, এখানে তার কিছুই প্রায় হয় না। বিশেষ কোনও আচার পালনের নিয়মও নেই। স্রেফ কয়েকজন এসে শকুনির ওই অবয়বের সামনে নারকেল, রেশম আর একধরনের স্থানীয় মদ রেখে যান। কিন্তু এই মন্দির তৈরি হল কীভাবে?
এর নেপথ্যেও রয়েছে মহাভারতের এক অজানা অধ্যায়। পান্ডবদের অজ্ঞাতবাসের সময় কৌরবরা বিভিন্ন জায়গায় তাঁদের খুঁজতে বেরিয়েছিলেন। সেই দলে শকুনিও ছিলেন। পাণ্ডবদের হাতেনাতে ধরবেন এই আশায় তিনি হাজির হন দক্ষিণের এই অঞ্চলে। কোনওভাবে তিনি খবর পান, এই অঞ্চলেই পাণ্ডবরা নিজেদের অস্ত্র লুকিয়ে রেখেছেন। কিন্তু বাস্তবে সেখানে গিয়ে পাণ্ডবদের দেখা পাননি শকুনি। কিন্তু তিনি ভেবেছিলেন কোনও একদিন পাণ্ডবরা এখানে ঠিক ফিরে আসবে। সেই আশায় অপেক্ষা করতে শুরু করেন শকুনি। কথিত আছে, শুধু অপেক্ষাই নয়, এই সময় রীতিমতো তপস্যা করতেন শকুনি। বর্তমানে তাঁর মূর্তিটি যেখানে রয়েছে, ঠিক সেখানেই বসতেন। সাধারণত কেউ তপস্যা করছেন দেখলে অনেকেই কৌতূহল দেখান। শকুনির ক্ষেত্রেও তেমনটাই হয়েছিল। ধীরে ধীরে স্থানীয়দের কাছে তিনি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। তবে সেখানে তাঁর পরিচয় খল নায়ক হিসেবে নয়। তিনি পূজিত হন নায়ক হিসেবে। কারণ হিসেব মতো, যে সময় এই মন্দির তৈরি হয়েছে তখন কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ হয়নি। তাই কৌরব-পাণ্ডবদের দ্বন্দের কাহিনীও
শকুনি ও তাঁর গান্ধার রাজ্যের সঙ্গে ঠিক কতটা অন্যায় হয়েছিল, শকুনির কাছ থেকেই সে কথা জানতে পারেন সেখানকার মানুষ।