মন্দিরে পুজো পান দেবতারা। এ কথা কে না জানে বলুন? তবে শুধু দেবতা নয়, ভালো কাজ করেছেন এমন যে কারও মন্দির হতে পারে। বাস্তবে রয়েছেও তাই। রামকৃষ্ণদেব, মা সারদা কিংবা সাধু-সন্তের মন্দির রয়েছে এই দেশে। কিন্তু যাঁরা তথাকথিত মন্দ লোক! তাঁরাও কি মন্দিরে ঠাঁই পেতে পারেন? আমাদের দেশে রয়েছে তেমন মন্দিরও। মহাকাব্যে তাঁদের মন্দ কাজ করতে দেখা গেলেও, মন্দিরে পূজা পান সেইসব চরিত্ররা। আসুন শুনে নেওয়া যাক।
পৌরাণিক মন্দচরিত্রের তালিকায় তাঁকে না রাখলে চলে না। অথচ তিনি যে স্রেফ মন্দ চরিত্র তা নয়। একাধারে মহান যোদ্ধা, প্রবল জ্ঞানী, সেইসঙ্গে পরম শিবভক্ত। ঠিক ধরেছেন, লঙ্কাধিপতি রাবণের কথা বলছি। দেশজুড়ে রামমন্দিরের সংখ্যা তো নেহাতই কম নয়। হনুমান মন্দিরও চোখে পড়ে প্রায় সর্বত্রই। কিন্তু যাকে বধ করে রামের মহিমা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ল সেই রাবণেরও মন্দির রয়েছে এই দেশে। কোথায় জানেন? আসুন শুনে নিই।
আরও শুনুন: মহাকাব্যের ‘মন্দজন’, তবু আছে মন্দির! দেশের কোথায় রয়েছে দুর্যোধনের মন্দির?
অশুভ শক্তির বিনাশ। শুভ শক্তির জয়। সৃষ্টির আদিলগ্ন থেকে এমনটাই চলে আসছে। যুগে যুগে যখনই পাপের বোঝায় ভারাক্রান্ত হয়েছে মেদিনী, তখনই বিভিন্ন অবতারে মর্তে অবতীর্ণ হয়েছেন ভগবান বিষ্ণু। ক্রেতা যুগে অবতার হয়ে জন্মেছিলেন শ্রীরাম। বধ করেছিলেন রাবণকে। সেই কাহিনির বিস্তারিত বর্ণনা মেলে রামায়ণে। মূলত বাল্মীকির রচিত রামায়ণের কাহিনিই সকলের কাছে পরিচিত। তবে রামায়ণের আরও অনেক পাঠও রয়েছে। সেখানে কাহিনির কিছু কিছু পরিবর্তন হলেও মূল প্রেক্ষাপটে বিশেষ বদল নেই। সবক্ষেত্রেই প্রায় শুভ শক্তি হিসেবে রয়েছেন রাম। এবং অশুভ শক্তি রাবণ। তাই এ কথা বলাই বাহুল্য, মন্দিরও থাকবে সেই শুভ শক্তিরই। কিন্তু বাস্তবে স্রেফ শুভ শক্তির মন্দিরই যে রয়েছে তা নয়। দেশে রয়েছে রাবণেরও মন্দির। তাও আবার একটা নয়। এই দেশে রাবণ মন্দির রয়েছে বেশ কয়েকটা।
প্রথম মন্দিরটি মধ্যপ্রদেশে। সেখানকার রাভঙ্গরাম অঞ্চলে রয়েছে এক রাবণ মন্দির। বলা বাহুল্য মন্দিরটি যে গ্রামে অবস্থিত সেটিকে রাবণগ্রাম বলা হয়। এখানে রাবণের এক কালো পাথরের বিগ্রহ দেখা যায়। তবে মূর্তিটি মাটিতে শায়িত অবস্থায় রয়েছে। মনে করা হয়, রাবণের স্ত্রী মন্দোদরী এই গ্রামেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর বেড়ে ওঠাও সেখানেই। তাই এর সঙ্গে রাবণের যোগ থাকা স্বাভাবিক। দেশের অন্যান্য প্রান্তে যেভাবে রামের পুজো করা হয়, এখানে ঠিক একইভাবে পুজো করা হয় রাবণের। এমনকি গ্রামবাসী কোনও বিশেষ অনুষ্ঠান থাকলেই এখানে পুজো দিতে ছুটে আসেন।
আরও শুনুন: মহাকাব্যের ‘মন্দজন’, তবু আছে মন্দির! দেশের কোথায় রয়েছে শকুনির মন্দির?
রাবণের অন্যতম বিখ্যাত মন্দিরটি উত্তরপ্রদেশের কানপুরে। শোনা যায়, সেই মন্দির নাকি ১২৫ বছরের পুরনো। মন্দিরটির বিশেষত্ব বলতে এর খোলা বন্ধের সময়। বছরে মাত্র একদিন খোলা থাকে দশাননের এই মন্দির। সেইসময় ভক্তদের ভিড় হয় দেখার মতো। আসলে রাবণ অশুভ শক্তি হিসেবে পরিচিত হলেও, তাঁর মতো শিবভক্ত আর নেই বললেই চলে। সেই সূত্রেই এখানকার মানুষ রাবণের আরাধনা করেন। নয়ডার কাছেও রয়েছে এক বিশাল রাবণ মন্দির। সেখানকার বিসরাখ অঞ্চলে রয়েছে এই মন্দির। কথিত আছে, এই স্থানই আসলে রাবণের জন্মভূমি। তাই সেখানকার মানুষ রাবণকে দেবতা জ্ঞানে পুজো করেন। তাঁদের কাছে রাবণ কোনও অশুভ শক্তি নয়। বরং বীর যোদ্ধা এবং পরম শিবভক্ত হিসেবেই এখানে রাবণ পরিচিত। শোনা যায়, এই চত্বরের কোথাও ‘দশেরা’ অনুষ্ঠান পালিত হয় না। বরং নবরাত্রির সময় এখানকার মানুষজন শোক পালন করেন। এছাড়া রাবণ মন্দির রয়েছে দক্ষিণ ভারতেও। অন্ধ্রের কিছু জায়গায় রাবণ মন্দির দেখা যায়। বেশিরভাগ মন্দিরেই প্রধান আরাধ্য শিব। তবে সেইসঙ্গে রয়েছে রাবণের বিশাল মূর্তিও। তবে দশাননের মূর্তির ক্ষেত্রে সবথেকে বড়টি দেখা যায় মধ্যপ্রদেশের মন্দসৌর অঞ্চলে। মনে করা হয়, সেখানেই রাবণের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল মন্দোদরীর। এখানে রাবণ ছাড়াও বেশ কিছু দেবদেবীর মূর্তি রয়েছে। তবে এইসব মন্দিরের কোথাও রাবণকে দস্যু হিসেবে দেখানো হয়নি। বলাই বাহুল্য, তেমনটা হলে মন্দির গড়াও হত না। মূলত শিবভক্ত হিসেবেই দেশের এইসব মন্দির পূজিত হয়ে আসছেন দশানন রাবণ।