মন্দিরে পুজো পান দেবতারা। এ কথা কে না জানে বলুন? তবে শুধু দেবতা নয়, ভালো কাজ করেছেন এমন যে কারও মন্দির হতে পারে। বাস্তবে রয়েছেও তাই। রামকৃষ্ণদেব, মা সারদা কিংবা সাধু-সন্তের মন্দির রয়েছে এই দেশে। কিন্তু যাঁরা তথাকথিত মন্দ লোক! তাঁরাও কি মন্দিরে ঠাঁই পেতে পারেন? আমাদের দেশে রয়েছে তেমন মন্দিরও। মহাকাব্যে তাঁদের মন্দ কাজ করতে দেখা গেলেও, মন্দিরে পূজা পান সেইসব চরিত্ররা। আসুন শুনে নেওয়া যাক।
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে কৌরব পক্ষের হয়ে লড়াই করলেও কর্ণ তাঁর বীরত্ব আর ত্যাগের জন্য সকলের মনে এক আলাদা জায়গা করে নেন। পুরাণে তাঁর মতো মহান দাতা খুঁজে পাওয়া কঠিন। তাই আপাতভাবে পাণ্ডবপক্ষের শত্রু হলেও, কর্ণ অনেকের কাছেই পূজনীয়। আজকের পর্বে শুনে নেব সেই মহান যোদ্ধার মন্দিরের গল্প।
আরও শুনুন: মহাকাব্যের ‘মন্দজন’, তবু আছে মন্দির! দেশের কোথায় রয়েছে দুর্যোধনের মন্দির?
প্রথমেই যে কর্ণ মন্দিরটির কথা উঠে আসে তা মহারাষ্ট্রের রত্নগিরি জেলায় অবস্থিত। কর্ণের নামানুসারে এই মন্দিরের নাম কর্ণেশ্বর।আসলে এটি একটি প্রাচীন শিব মন্দির যার সাথেই রয়েছে কর্ণের একটি মন্দির। কথিত আছে প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে পান্ডবরা স্বয়ং এই মন্দির তৈরি করেন। এখনো নাকী মন্দিরটিতে সেই সময়ের কিছু নিদর্শন পাওয়া যায়। এরপর যে মন্দিরের কথা বলবো সেটি গড়ে উঠেছে উত্তরাখন্ডের তমসা নদীর পাশে সারনাউল অঞ্চলে । আগেই বলেছি এই নদীর জন্মও হয়েছিল দুর্যোধনের ভক্তদের চোখের জল থেকে। প্রকৃতির অপরূপ শোভার মাঝে বিরাজমান এই মন্দিরটি প্রায় ৩৭ হাজার ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। দুর্যোধনের মন্দিরটির থেকে মাত্র ১৮৩ কিমি দূরে থাকা এই মন্দিরটি তমসা তীরবর্তী সব কটি মন্দির অপেক্ষা অধিক সুদৃশ্য। মন্দিরটি কাঠের তৈরি। দেওয়াল জুড়ে খোদাই করা আছে বিভিন্ন পাখি জীবজন্তুর অবয়ব। এই মন্দির থেকে মাত্র আধঘন্টা হেঁটে গেলেই পাওয়া যাবে কর্ণের আরেকটি মন্দির। নেতওয়ার গ্রামে অবস্থিত এই মন্দির টিও কাঠের তৈরি। এখানে প্রতিবছর মকরসংক্রান্তির সময় এক অদ্ভুত খেলার আয়োজন করা হয়। একটি মৃত গরুর চামড়ার ভিতর কাদা আর পাথর ভরে বানানো হয়ে একটি বল। তারপর ছেলেরা দুই দলে ভাগ হয়ে সেই বল নিজেদের কাছে ছিনিয়ে নেওয়ার খেলায় মেতে ওঠে। স্থানীয় দের বিশ্বাস যুদ্ধে যখন কর্ণ ঘটোতকচকে পরাজিত করেন তখন থেকে এরকম একটি খেলা তাঁর উদ্দেশ্যে আয়জন করা হয়। এছাড়াও দেবরা গ্রামের বাসিন্দারা নিয়মিত এই মন্দিরে কর্ণের পুজোর ব্যবস্থা করে থাকেন। কর্ণের প্রাচীনতম মন্দিরটি উত্তরপ্রদেশের বুলন্দশহর জেলায় করানওয়াসে অবস্থিত। কথিত আছে এই স্থান থেকেই দানবীর কর্ণ দরিদ্র মানুষকে খাবার আর সোনা দান করতেন। এই যায়গাটি ‘কর্ণ শিলা’ নামেই বিখ্যাত। কথিত আছে তিনি এই স্থানে প্রতিদিন প্রায় ৫০ কেজি সোনা দান করতেন। আজও গঙ্গার তীরে গড়ে ওঠা এই মন্দিরটিতে নিয়মিত ভিড় জমান ভক্তরা।
আরও শুনুন: মহাকাব্যের ‘মন্দজন’, তবু আছে মন্দির! দেশের কোথায় রয়েছে শকুনির মন্দির?
পরের মন্দিরটি রয়েছে হস্তিনাপুরে। এর অভ্যন্তরেও রয়েছে একটি শিব লিঙ্গ। কথিত আছে এই মন্দিরটিও মহাভারতের সমসাময়িক। পুরানো গঙ্গার তীরে একটি ঢিবির উপরে অবস্থিত মন্দির টিতে প্রতি বছর বহু দর্শনার্থীর ভীড় দেখা যায়। সবথেকে আকর্ষণীয় এর গাড় গোলাপী রঙটি। যদিও মন্দিরের আশেপাশের অঞ্চল বর্তমানে সংষ্কারের কাজ চলছে। একইসাথে উঠে আসে তুলসীওাডি মন্দিরের কথা। গুজরাট রাজ্যের সুরাটে অবস্থিত এই মন্দিরটিতেই নাকি রয়েছে কর্ণের অন্তিম সমাধি। শোনা যায় কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের পর স্বয়ং ভগবান শ্রী কৃষ্ণ নিজের হাতে কর্ণের অন্তেষ্টি ক্রিয়া সম্পন্ন করেছিলেন। তাপ্তি নদীর ধারে অবস্থিত এই মন্দিরটিয় যথেষ্ট প্রাচীন।