পিঁপড়ে নেই, এমন জায়গা খুঁজে পাওয়া কঠিন। রণে, বনে , জঙ্গলে, পিঁপড়ের দেখা মিলতে বাধ্য। সাধারণত খাবারের পিঁপড়ে দেখলে সরিয়ে দেওয়া হয়। ব্যতিক্রম এই মন্দির। এখানে আলাদা করে পিঁপড়ের জন্যই ভোগ তৈরি করা হয়। কোথায় রয়েছে এমন মন্দির? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
অসাবধানে খাবারের টুকরো মাটিতে পড়লেই হল। কয়েক মিনিটের মধ্যে দল বেঁধে হাজির হবে পাল পাল পিঁপড়ে। বিছানায় এমন কিছু হলে না সরিয়ে উপায় নেই। সেক্ষেত্রে অনায়াসে প্রাণ যেতে পারে হাজার হাজার পিপীলিকার। কিন্তু এই মন্দিরে পিঁপড়ে মারলেই বিপদ। কারণ এখানে এই ছোট্ট শরীরের প্রাণীটিকেই দেবতাজ্ঞানে পুজো করা হয়।
:আরও শুনুন:
কোল আলো করে আছে ছোট্ট শিশু, অন্য রূপেও পূজিতা মা কালী
এ দেশে মন্দিরের কমতি নেই। একইভাবে আরাধ্যও সংখ্যায় অনেক। শিব, দুর্গা, কালী, নারায়ণ, কৃষ্ণ, লক্ষ্মী, মনসা, এমনই আরও কতশত দেবদেবীর মন্দির ছড়িয়ে রয়েছে দেশের নানা প্রান্তে। এমনকি একই দেবতার আলাদা রূপের জন্য গড়ে উঠেছে আলাদা মন্দির। প্রতিদিন সেসব মন্দিরে ভক্তরা ভিড় জমান। কিন্তু পিঁপড়ের জন্যও আলাদা মন্দির রয়েছে, এমনটা শুনেছেন? এই ছোট্ট শরীরের প্রাণীটি কোনও দেবতার বাহন নয় একথা সকলেই জানেন। বরং যে কোনও জায়গায় পিঁপড়ের আগমন খুব একটা ভালো চোখে দেখেন না কেউই। বাড়িতে তো বটেই, মন্দিরে বসেও পিঁপড়ে বধে কোনও পাপ নেই। ব্যতিক্রম কেরলের এই মন্দির। এখানে পিঁপড়ে দেখলে কেউই মারতে উদ্যত হন না। ভক্তিভরে তাদের জন্য খাবার সাজিয়ে রাখেন। যদিও মন্দির বলতে যা বোঝায় এখানে তেমন কিছু নেই। রয়েছে বলতে একটা বড় চাতাল। আর অসংখ্য পিঁপড়ের ঢিবি। এখানেই ভোগ নিবেদনের চল রয়েছে। এমনকি ভক্তরা এই ঢিবির সামনে এসেই প্রণাম ঠুকে যান।
:আরও শুনুন:
একটি বেলপাতাতেই সন্তুষ্ট মহাদেব, শিবরাত্রি ব্রত করলে মেলে তপস্যার পুণ্য
মন্দিরটি কেরলের কুন্নুর জেলায় অবস্থিত। স্থানীয়দের কাছে এই মন্দির উরুমাবাচাম কোট্টাম নামে পরিচিত। মন্দির সম্পর্কে প্রচলিত এক কিংবদন্তিও রয়েছে। শোনা যায়, বহুকাল আগে এই অঞ্চলে একটি গণেশ মন্দির তৈরির সিদ্ধান্ত নেন স্থানীয়রা। এবার মন্দির তৈরির জন্য তো নির্দিষ্ট একটা জায়গা দরকার। বাস্তু মেনে সেই জায়গা বেছে দেন স্থানীয় এক জ্যোতিষী। সেখানেই নতুন মন্দির তৈরির প্রস্তুতি সারা হয়। কিন্তু মন্দির তৈরি করতে গিয়ে সবাই দেখেন, সেখানে অনেকগুলো পিঁপড়ের ঢিবি রয়েছে। সেসব সরিয়ে মন্দির গড়লে পিঁপড়ের উৎপাত লেগেই থাকবে। তাই অন্যত্র মন্দির তৈরির কথা ভাবেন সকলে। এতে আপত্তি তোলেন সেই জ্যোতিষীই। নিদান দেন, এখানে মন্দির না গড়লেও নিয়মিত পুজোর ব্যবস্থা করতে। তাঁর কথামতো গণেশ মন্দির তৈরি হয় অন্য জায়গায়। সেইসঙ্গে ওই পিঁপড়ের ঢিবির জায়গাটিকে গোল করে বাঁধিয়ে দেওয়া হয়। সেই থেকেই এখানে পিঁপড়ে পুজোর নিয়ম চালু হয়েছে। এখনও গণেশের উদ্দেশে তৈরি ভোগ আগে এখানে এসে পিঁপড়েদের দেওয়া হয়। অনেকে এমনিই পুজো দিয়ে যান। প্রসাদ মূলত নারকেল। পুরোহিতরা ঢিবির পাশে নারকেল ফাটিয়ে সেই জল ঢেলে দেন। অনেকে বলেন, এখানে ভক্তিভরে কোনও প্রার্থণা করলে তা অবশ্যই ফলে। আর সেই বিশ্বাসের জোরেই এখনও কেরলের এই মন্দিরে নিয়মিত পূজিত হচ্ছেন পিঁপড়ে দেবতা।