ধর্মস্থানে জুতো খুলে ঢোকাই নিয়ম। ব্যতিক্রম এই মন্দির। এখানে জুতো নিয়েই ঢুকতে হয় গর্ভগৃহে। আরাধ্যের সামনে সেসব রেখেও আসতে হয়। ঠিক কোন মন্দিরে এমন নিয়ম রয়েছে জানেন? নেপথ্যে কারনটাই বা কী? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
মন্দিরে ঢুকলে চোখে পড়বে চটির লাইন। বাইরে নয়, গর্ভগৃহেই দেখা মিলবে এমন দৃশ্য। শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। এ দেশে রয়েছে এমন এক মন্দির, যেখানে ফুলের বদলে জুতো দিয়ে পুজো দেওয়াই নিয়ম। অবশ্য ব্যবহার করা অপরিস্কার জুতো নয়। পুজো দিতে হয় একেবারে নতুন জুতো কিংবা চটি দিয়ে।
কথা বলছি কর্নাটকের এক মন্দির সম্পর্কে। প্রতিবছর সেখানে বিশেষ এক মেলা বসে। বিশেষত্ব বলতে ভক্তদের পুজো দেওয়ার উপকরণ। এমনিতে যে কোনও ধর্মস্থানে মিষ্টি কিংবা ফুল দিয়ে পুজো দিতে হয়। এই মন্দিরে তার পাশাপাশি দিতে হয় জুতোও। শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। কর্নাটকের গোলা গ্রামের লাক্কামা মন্দিরে এমনটাই নিয়ম। অবশ্য সারাবছর এই নিয়ম জারি থাকে না। দীপাবলির পরে মন্দিরে যে মেলা বসে সেইসময় ভক্তরা জুতো নিয়ে হাজির হন মন্দিরে। অবশ্যই নতুন জুতো। কেউ কেউ জুতো দিয়ে মালা অবধি বানিয়ে নিয়ে যান। সেসব মন্দিরের আশেপাশে রেখে দেওয়া হয়। গাছেও ঝুলিয়ে রাখেন অনেকে। সবমিলিয়ে মেলার সময় মন্দিরে গেলে মানুষের থেকে বেশি জুতোর দেখা মিলবে। স্থানীয় বিশ্বাস, এমনটা করলে অশুভ শক্তির হাত থেকে রক্ষা করবেন দেবী। আবার অনেকে এমনটাও মনে করেন, এই মন্দিরে জুতো দিয়ে পুজো দিলেই সারবে হাঁটুর ব্যথা। পায়ের সমস্যায় জেরবার হয়ে অনেকেই মন্দিরে ছোটেন নতুন জুতো নিয়ে। শুধু হিন্দু নয়, এই মন্দিরে মুসলিমরাও জুতো দিয়ে পুজো দেন। আর এমনটাই চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে।
তবে স্রেফ এই মন্দির নয়। জুতো দিয়ে পুজো দেওয়ার নিয়ম রয়েছে মধ্যপ্রদেশের ভোপালের এক মন্দিরেও। সেখানকার বাঞ্জারি অঞ্চলের এক পাহাড়ের ঢালে মন্দিরটি অবস্থিত। আরাধ্য দেবী সিদ্ধিদাত্রী। স্থানীয়দের কাছে এই মন্দির জিজাবাই মাতা মন্দির হিসেবে পরিচিত। ভক্তদের বিশ্বাস এই মন্দিরে দেবীর বালিকা রূপ প্রতিষ্ঠিত। আর সেই কারণে ছোট্ট মেয়ের জন্য নতুন জুতো দেওয়া এই মন্দিরের নিয়ম। অন্যান্য মন্দিরে যেমন মালা, মিষ্টি নারকেল দিয়ে পুজো দেওয়ার চল, এখানে তেমনই জুতো দিয়ে পুজো দেন ভক্তরা। বিশ্বাস, এমনটা করলে মনের যে কোনও ইচ্ছাপূরণ হবে। তাই বছরের পর বছর ধরে এই জুতো দিয়ে পুজো দেওয়ার নিয়ম চলে আসছে। শুধু স্থানীয়রা নয়, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্তরা এই মন্দিরে পুজো দিতে আসেন। বিদেশ থেকেও অনেকে দেবী মায়ের জন্য জুতো উপহার পাঠান। তাই মন্দিরের চারদিকে জুতো দেখতে পাওয়া স্বাভাবিক বিষয়। স্রেফ জুতো নয়। কেউ কেউ ছাতা, ঘড়ি এমনকি চশমা অবধি রেখে আসেন মন্দিরে। সবই অবশ্য আকারে ছোট। বালিকা রূপের দেবী পরবেন এই ভাবনা থেকেই এমন উপহার। শুনতে অদ্ভুত ঠেকলেও দেশের এইসব মন্দিরে জুতো দিয়ে পুজো দেওয়াই স্বাভাবিক। ভক্তদের বিশ্বাসে এমনটাই চলে আসছে।