মন্দিরে দেবতার মূর্তি থাকা স্বাভাবিক। এই মন্দিরেও বেশ কিছু মূর্তি রয়েছে। তবে সেসব কোনও দেবতার নয়। থরে থরে সাজানো স্বাধীনতা সংগ্রামীদের মূর্তি। তাতেই নিত্যপূজার ব্যবস্থা রয়েছে। কোথায় রয়েছে এমন মন্দির? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
দুর্গাপুজো, কালীপূজো কিংবা বিশ্বকর্মা নয়। এই মন্দিরের বার্ষিক উদযাপন হয় ১৫ আগস্ট, স্বাধীনতা দিবসের দিনে। অবশ্য হবে নাই বা কেন! স্বাধীনতা সংগ্রামীরাই তো এই মন্দিরের আরাধ্য। শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। এ দেশে রয়েছে এমনও এক মন্দির যেখানে নিয়মিত পুজো পান দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামীরা।
:আরও শুনুন:
রাজা সবারে দেন মান! কৃষকদের মাথায় ছাতা ধরলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী, ব্যাপারটা কী?
১৯৪৭ সালে ১৫ আগস্ট, ব্রিটিস শাসন থেকে মুক্তি পেল ভারত। স্বাধীনতা অবশ্য একদিনে আসেনি। তার জন্য বলি দিতে হয়েছে হাজার হাজার তরতাজা প্রাণ। কেউ চিরকালের জন্য হারিয়েছেন নিজের ভালোবাসা, কেউ বা বাড়ির একমাত্র উপার্জনকারী সদস্য। না খেয়ে থাকতে হয়েছে দিনের পর দিন। ঠিক মতো মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও ছিল না। তবু স্বাধীনতা অর্জনের লড়াইয়ে পিছিয়ে আসেননি কেউ। দাঁতে দাঁত চিপে ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন ক্ষুদিরাম বসু, ভগত সিং, নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু-প্রমুখেরা। তাঁদের সেই আত্মত্যাগের ফসল আজকের স্বাধীন ভারতবর্ষ। প্রতিবছর ঘটা করে স্বাধীনতা দিবস পালিত হয় গোটা দেশে। স্কুল-কলেজে-অফিস-আদালতে নিয়ম করে সকলে উপস্থিত থাকেন অনুষ্ঠানে। জাতীয় পতাকা উত্তোলন সব জায়গায় আবশ্যক। সেইসঙ্গে কোথাও গান্ধীজি, কোথাও নেতাজি, কোথাও আবার ভগৎ সিং বা অন্য কোনও স্বাধীনতা সংগ্রামীর ছবিতে মাল্যদান। মোটামুটি এই কর্মসূচিই থাকে দেশের অধিকাংশ স্বাধীনতা দিবস উদযাপনে। ব্যতিক্রম বিহারের বাগুসরাই জেলার পূর্ণা গ্রাম। এখানেও স্বাধীনতা দিবস উদযাপন হয় প্রতি বছর। তবে সেক্ষেত্রে যে উৎসবের আয়োজন করা হয় তা দেশের আর কোথাও হয় না বললেই চলে।
:আরও শুনুন:
দড়ি টানাটানি থেকে গরুর গাড়ির রেস, সব কিছুই হাজির ভারতের নিজস্ব অলিম্পিকে
বিহারের এই গ্রামেই রয়েছে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের জন্য মন্দির। স্রেফ মূর্তি সাজিয়ে রাখে নয়, তাতে নিয়মিত পুজোরও ব্যবস্থা রয়েছে। মোট ১০-১২টি মূর্তি রয়েছে। কিছু মূর্তি আবক্ষ, কয়েকটি সম্পূর্ণ। পাথরের তৈরি এইসব মূর্তিতেই পুরোহিত পুজো করেন রোজ। পূর্ণাঙ্গ মূর্তি রয়েছে তিনটি। প্রথমে লাঠি হাতে মহাত্মা গান্ধী, তাঁর সঙ্গে ঘোড়ার পীঠে যোদ্ধার বেশে রাণী লক্ষ্মীবাই এবং বীর কুনওয়ার সিং। তিনটি মূর্তিই বেশ নিখুঁত। দেখে মনে হবে জিবন্ত মূর্তি দাঁড়িয়ে। এদিকে আবক্ষ মূর্তি রয়েছে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু, ভগত সিং, সর্দার বল্লবভাই প্যাটেল, শহীদ ক্ষুদিরাম বসু, চন্দ্র শেখর আজাদ, লাল বাহাদুর শাস্ত্রী সহ আরও অনেকের। এখানেও পুজো হয় নিয়মিত। মন্দিরের রঙ্গেও জাতীয় পতাকার ছোঁয়া রয়েছে। সবমিলিয়ে এই মন্দিরের পরিবেশেই যেন দেশাত্মবোধের গন্ধ ম ম করে। প্রতিবছর স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে যে উৎসব হয়, তার খরচের দায়িত্ব নেন গ্রামের বাসিন্দারাই। এমনকি সারা বছর মন্দির চালাতে যে খরচ, তাও গ্রামের মানুষের মিলিত দান। শোনা যায়, এই মন্দির স্বাধীনতারও আগে তৈরি। তখন অবশ্য শিব এবং দুর্গার আরাধনা চলত। ১৯৯১ সালে মহাত্মা গান্ধীর মূর্তি স্থাপন করা হয়। সেইথেকেই মন্দিরে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের পুজো শুরু। ধীরে ধীরে মূর্তির সংখ্যা বেড়েছে। তবে যত্নের এতটুকু খামতি হয়নি। প্রতিদিন মন্দির পরিষ্কার করা হয়। তারপর ভক্তিভরে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের পুজো করেন পুরোহিত। আর বছরে একবার বার্ষিক উদযাপন। গ্রামের সকলেই তাতে শামিল হন। দূর দূরান্ত থেকেও অনেকে এসে ভিড় জমান মন্দিরে। প্রজাতন্ত্র দিবসেও একইভাবে অনুষ্ঠান হয়। এছাড়া স্বাধীনতা সংগ্রামীদের জন্মবার্ষিকিতেও বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে এই মন্দির কর্তৃপক্ষ।