কথায় বলে, হাসতে হাসতে খুন! হাসতে হাসতে কি সত্যিই মৃত্যুমুখে এসে দাঁড়াতে পারে মানুষ? আজ্ঞে হ্যাঁ। সত্যিই ঘটেছিল এমনটা। একজন দুজন নয়, হাজারখানেক মানুষ সত্যিই মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়েছিলেন একসময়। আর সেই মহামারীর কারণ ছিল স্রেফ হাসি। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
হাসি থেকে মহামারী! যারা দুবছর ধরে করোনা মহামারীর সঙ্গে যুঝে আসছে, তাদের এ কথা শুনলেই বরং হাসি পাওয়ার কথা। কিন্তু হাসি নয়, কথাটা সত্যি। কেবল হাসির কারণেই এক বিপজ্জনক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিল গোটা একটা দেশ। যে অবস্থাকে আখ্যা দেওয়া হয়েছে ‘টাঙ্গানাইকা লাফটার এপিডেমিক’ বলে। বিশ্বাস হচ্ছে না তো? ব্যাপারটা তাহলে খুলেই বলি।
আরও শুনুন: প্লেগ থেকে স্প্যানিশ ফ্লু, বারেবারে এসেছে মহামারী, লড়াই করে ঘুরে দাঁড়িয়েছে মানুষ
আজকাল মানুষকে অতিরিক্ত চাপ থেকে মুক্তি দেওয়ার উদ্দেশে একাধিক লাফিং ক্লাবের দেখা পাওয়া যায়। বলা হয়, হাসির মতো ভাল ব্যায়াম নাকি খুব কমই আছে। কিন্তু এই হাসিই যে কী ভয়ানক বিপদ ডেকে আনতে পারে, সে কথা হাড়ে হাড়ে বুঝেছিলেন ওই বিশেষ অঞ্চলের মানুষ। আফ্রিকা মহাদেশের ওই অঞ্চলের নাম টাঙ্গানাইকা, এখন আমরা যাকে চিনি তানজানিয়া নামে। সেখানেই ১৯৬২ সালের জানুয়ারি মাসে নেমে এসেছিল এই আজব অসুখ।
১৯৬২ সালের ৩১ জানুয়ারি উগান্ডার সীমান্তে অবস্থিত তানজানিয়ার কাশাশা গ্রামে প্রথম এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। একটি মিশনারি বোর্ডিং স্কুলের তিনটি মেয়ে হঠাৎই বিনা কারণে প্রবল হাসতে শুরু করে। উপসর্গ ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ে আরও অনেকের মধ্যেই। ১৫৯টি পড়ুয়ার মধ্যে আক্রান্ত হয় ৯৫ জন, যাদের সকলের বয়স ১২ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে। সেখান থেকে নশাম্বা গ্রামেও ছড়িয়ে পড়ে এই অদ্ভুত অসুখ। আসলে সংক্রামিত পড়ুয়াদের অধিকাংশের বাড়ি ছিল ওই গ্রামেই। এপ্রিল-মে মাসে ২১৭ জন কমবয়সি গ্রামবাসী একই রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। রোগের উপসর্গ বজায় থাকত কয়েক ঘণ্টা থেকে টানা ১৬ দিন পর্যন্তও। একটানা হাসতে থাকা তো ছিলই, সেইসঙ্গে শ্বাসকষ্ট, জ্ঞান হারিয়ে ফেলা, চিৎকার করা, কেঁদে ফেলা, এমনকি ত্বকে র্যাশ বেরোনোর মতো সমস্যাও দেখা গিয়েছিল।
আরও শুনুন: Pandemic কাড়ছে শৈশব! মহামারীর ধাক্কায় কেন এত বাড়ছে Child Labour?
১৮ মার্চ তারিখেই প্রথম স্কুলটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। ২১ মে ফের স্কুল খুললেও জুনের শেষে আবার লক ডাউন হয়। এই পর্যায়ে ১৪টি স্কুল বন্ধ ছিল। আক্রান্তের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছিল। তবে আশ্চর্য হলেও সত্যি, কোনও শিক্ষক শিক্ষিকা এই রোগে আক্রান্ত হননি। আর সেখান থেকেই এই রোগের সম্ভাব্য কারণটিও বিশ্লেষণ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। আসলে তখন সদ্য সদ্য স্বাধীন দেশের মর্যাদা পেয়েছিল তানজানিয়া। আর স্বাধীনতার পরে দেশের অর্থনীতির গুছিয়ে উঠতে খানিকটা সময় লাগেই। সেই কারণে জনসংখ্যার একটা অংশকে আর্থিক সঙ্কটের মুখোমুখিও দাঁড়াতে হয়। সম্ভবত অনিশ্চিত ভবিষ্যতের আশঙ্কাই এই পড়ুয়াদের রীতিমতো উদ্বিগ্ন করে তুলেছিল, যার পরিণতি হয়েছিল এই অভিনব অসুখ।
রামগরুড়ের ছানারা কেন হাসতে ভয় পেত, এবার বুঝতে পারছেন?