রাশিয়ার আচমকা হামলায় বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে ইউক্রেন। দু’পক্ষের গোলাগুলিতে মৃত্যু হচ্ছে একাধিক মানুষের। বিশেষ করে প্রাণ হারাচ্ছেন দুই দলের সেনারা। যুদ্ধ তো এমন করেই মানুষকে তার প্রিয়জনের থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। কিন্তু মানুষও হার মানতে নারাজ। আর সেই কারণেই যুদ্ধরত সৈনিকরা বের করেছিলেন প্রিয়জনকে কাছে রাখার এক অভিনব উপায়। শুনে নিন।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার পরেও শিক্ষা নেয়নি মানুষ। তাই দুই দশকের মধ্যেই পৃথিবীতে ফের শুরু হয়েছিল আরও এক মহাযুদ্ধ। আরও ভয়ংকর। আরও রক্তক্ষয়ী। এই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল প্রায় গোটা পৃথিবীই। ঘর ছেড়ে, প্রিয়জনদের ছেড়ে রক্তাক্ত যুদ্ধক্ষেত্রে পাড়ি দিয়েছিলেন লক্ষ লক্ষ সেনা। ঘরে আর কখনও ফিরতে পারবেন কি না, সে কথাও জানতেন না তাঁরা। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস ঘরছাড়া এই মানুষগুলোর সঙ্গী হয়ে ছিল প্রিয়জনদের একটুকরো ছবি। হ্যাঁ, যে বিজ্ঞান পারমাণবিক বোমার অভিশাপ নামিয়ে এনেছিল সেই বিশ্বযুদ্ধে, সেই বিজ্ঞানের দৌলতেই এইটুকু সুযোগ পেয়েছিলেন ওই পরিবারবিচ্ছিন্ন সেনারা। ততদিনে ক্যামেরা আবিষ্কার হয়ে গিয়েছে। ঈশ্বরের আশীর্বাদের মতো প্রিয়জনদের ছুঁয়ে থাকার একটা সুযোগ এনে দিয়েছিল সেই নতুন যন্ত্রটি। আর সেই ছবিগুলিকেই চোখের সামনে রাখার জন্য এক অভিনব কৌশল গ্রহণ করেছিলেন যুদ্ধরত সেনারা।
আরও শুনুন: মানুষকে নাস্তানাবুদ করে ছাড়ল বিশাল পক্ষীবাহিনী… জানেন এই অদ্ভুত যুদ্ধের কথা?
সৈনিকের জীবনে সবচেয়ে অপরিহার্য বস্তু তার অস্ত্র। বড় বড় হাতিয়ার নয়, প্রেয়সীর মতো সবসময় সঙ্গে থাকে যে ছোট্ট রিভলভার, তার সঙ্গেই নিজের প্রিয়জনের ছবিও জুড়ে নিতে শুরু করলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সেনারা। যাতে চরম সংকটের মুহূর্তেও তাঁদের চোখের সামনে জেগে থাকে সেই মুখ। ভরসার মতো। বিশ্বাসের মতো।
কীভাবে সম্ভব হয়েছিল তা? হয়েছিল প্লেক্সিগ্লাস নামে একরকম প্লাস্টিকের দৌলতে। উইলিয়াম ক্যালমার্স, অটো রোম, ওয়াল্টার বয়ারের মতো কিছু রসায়নবিদের হাতে তৈরি হয়েছিল কাচের মতো স্বচ্ছ এই প্লাস্টিকটি। সেটা ১৯২৮ সাল। বছর পাঁচেকের মধ্যেই যুদ্ধবিমান অথবা মোটরগাড়ি, সবকিছুর জানলাই তৈরি হতে থাকে এই প্লেক্সিগ্লাস দিয়ে। এদিকে ১৯৩৯ সালে শুরু হয়ে গেল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। যুদ্ধের সময় ভঙ্গুর কাচের পরিবর্তে এই প্লাস্টিকের ব্যবহার বাড়ল আরও বেশি করে। আর ভাঙা গাড়ি থেকে পাওয়া কাচের টুকরো দিয়েই এক অদ্ভুত নিদর্শন তৈরি করলেন সৈনিকেরা। বন্দুকের বাঁদিকের বাঁট খুলে সেখানে নিজেদের প্রিয়জনের ছবি বসিয়ে দিতেন তাঁরা। আর তার উপর বসিয়ে দিতেন প্লেক্সিগ্লাসের ভাঙা টুকরো। মনে হত যেন আগ্নেয়াস্ত্রের উপরে ছবি এঁকে দিয়েছেন কেউ।
আরও শুনুন: করোনা থেকে ইউক্রেনের যুদ্ধ, ভারতীয়দের উদ্ধারে বারবার বিমান উড়িয়েছেন এই বঙ্গতনয়া
সেনারা এইরকম ছবিসহ হাতিয়ারের আদরের ডাকনাম দিয়েছিলেন ‘সুইটহার্ট গ্রিপস’। বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, যুদ্ধ যতই ভয়ংকর হোক, ভালবাসার কাছে সে হার মানতে বাধ্য। তাঁদের অনেকের আর সত্যিই ঘরে ফেরা হয়নি। দেখা হয়নি প্রিয়জনদের মুখ। কিন্তু থেকে গিয়েছে ভালবাসার এইসব স্মৃতি। যা মুছে দেওয়ার সাধ্য হয়নি কোনও বিশ্বযুদ্ধেরও।