এখানে বসে মহাভারত লিখেছিলেন গণেশ। এর উল্লেখ মহাভারতের কাহিনিতেও রয়েছে। তবে স্রেফ এই কারণে এই জায়গা বিখ্যাত নয়। আরও একাধিক কারণ রয়েছে এর বিশেষত্ব হিসেবে। ঠিক কী কী কারণে দেশের এই জায়গা বিখ্যাত? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
ঘোরার জায়গা হিসেবে অনেকেরই প্রথম পছন্দ পাহাড়। যতই দুর্গম হোক, সৌন্দর্যের টানে পাহাড়ে ছুটে যান অনেকেই। কিন্তু এ দেশে এমনও এক পাহাড়ি জায়গা রয়েছে যেখানে স্রেফ সৌন্দর্য নয়, ইতিহাসের খোঁজে ছুটে যান পর্যটকরা। এমন এক জায়গা, যার সঙ্গে মহাভারতের নানা কিংবদন্তি জড়িয়ে।
আরও শুনুন: শুধু রাম মন্দির নয়, ১ টাকার জমিতেই মন্দিরের জাদুঘর গড়ছে অযোধ্যা
কথা বলছি, উত্তরাখন্ডের ‘মানা’ সম্পর্কে। একেই ভারতের শেষ গ্রাম বলা হয়। এখানেই রয়েছে দেশের শেষ দোকান। এমনকি শেষ রাস্তাটিও এখানেই। পাশাপাশি চারদিক পাহাড় ঘেরা এই গ্রামের সৌন্দর্যও অসাধারণ। উচ্চতার কারণে এই গ্রামে অধিকাংশ সময়ই ঠাণ্ডার পরিবেশ থাকে। যা পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ। কিন্তু এখানে যাওয়ার পথ মোটেও সহজ নয়। তাই সবসময় যে পর্যটকের ভিড় লেগে আছে তা নয়। আবার শীতকালে এখানে এমনই মারাত্মক পরিস্থিতি তৈরি হয়, যে গ্রামের বাসিন্দারাও কিছুটা নীচে নেমে আসতে বাধ্য হন। বছরের ওই সময়টায় এখানে জনপ্রাণীর দেখা পাওয়া কঠিন। শোনা যায়, এই গ্রামে একসময় মঙ্গোল উপজাতির মানাুষজন বাস করত। তাঁদের কিছু উত্তরসুরি এখনও রয়ে গিয়েছেন ‘মানা’-এ। গ্রামবাসীদের জীবনযাপনও বেশ কঠিন। সমতলের সঙ্গে সবসময় যোগাযোগ রাখা কঠিন। নিজেরা যা চাষ করেন, তাই খান। এদিকে পাহাড়ি জমিতে সবকিছু চাষ করাও যায় না। আলু, পালং শাক, ফুলকপি এই জাতীয় সবজি খেয়েই এঁরা দিন কাটান। পাশাপাশি জীবিকা হিসেবে এঁরা উলের জিনিস তৈরি করেন। পরে তা বিক্রি করে রোজগার হয়। তবে এই গ্রামের বিশেষত্ব স্রেফ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নয়। এর ইতিহাস জানলে অবাক হতেই হয়।
আরও শুনুন: আস্ত একটা হ্রদ উধাও হয়ে যায় যখনতখন! ভৌতিক ঘটনা, নাকি সত্যি?
শোনা যায়, মানা গ্রামের উল্লেখ মহাভারতেও রয়েছে। পঞ্চপান্ডব যখন স্বর্গের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন, তখন এই গ্রাম হয়েই তাঁরা গিয়েছিলেন। আবার এমনটাও শোনা যায়, মহাভারত তৈরিই হয়েছিল এই গ্রামে। এখানে ব্যাসগুহা নামে একটি গুহা রয়েছে। বলা হয়, ওই গুহায় বসেই মহাভারতের কাহিনি ভেবেছিলেন বেদব্যাস। তবে নিজে হাতে তিনি মহাভারত লেখেননি। সেই কাজে ব্যাসদেবকে সাহায্য করেছিলেন পার্বতীনন্দন গণেশ। তিনিই গোটা মহাভারত লিখেছিলেন। সেও অবশ্য এই মানা গ্রামেরই কাছে থাকা এক গুহার ভিতর বসে। সেই গুহা অবশ্য গণেশগুহা নামে পরিচিত। মানা-এ ঘুরতে গিয়ে দুটি জায়গায় দেখে আসেন পর্যটকরা। কেউ কেউ এমনটাও বলেন এই গ্রামে এখনও মহাভারতের আসল পাণ্ডুলিপি রাখা আছে। সময়ের সঙ্গে যা পাথরে পরিণত হয়েছে বলেই দাবি স্থানীয়দের। ইতিহাসবিদরাও মানা গ্রামের সঙ্গে মহাভারত যোগ অস্বীকার করেন না। তবে এই গ্রাম এতটাই উচ্চতায় অবস্থিত যে ইচ্ছা থাকলেও এখানে যাওয়া সম্ভব হয় না অনেকের।