সাজানো গোছানো রেলস্টেশন। সাইনবোর্ড, প্ল্যাটফর্ম সব রয়েছে। কিন্তু ট্রেন, থামে না রোজ। গুনে গুনে ১৫ দিন অবস্থার বদল হয়। বছরে মাত্র এই কটা দিনই ওই স্টেশনে ট্রেন থামে। কোন জায়গার কথা বলা হচ্ছে? নেপথ্যে কারণটাই বা কী? আসুন শুনে নেয়া যাক।
প্ল্যাটফর্মে ট্রেন থামবে। এমনটাই স্বাভাবিক। ছোট স্টেশনে অনেক সময় সব ট্রেন থামে না। তবে সারাদিনে একটাও ট্রেন থামে না এমন স্টেশন খুঁজে পাওয়া কঠিন। তবে নেই বললে ভুল হয়। বিহারের ঔরঙ্গাবাদেই রয়েছে এমন এক স্টেশন। যেখানে সারা বছর মাত্র ১৫ দিন একটি ট্রেন থামে।
এ দেশে এমন অনেক জায়গাই রয়েছে, যেখানে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম রেলপথ। সারাদিন একটা ট্রেন চললেও, সেই ভরসাতেই থাকতে হয়। বিশেষ করে দূরে কোথাও যেতে হলে ট্রেন ছাড়া গতি নেই। তাতেই মানিয়ে চলেন দেশের মানুষ। কিন্তু এমন এক স্টেশন রয়েছে যেখানে বছরভর ট্রেন থামে না বললে ভুল হয় না। গুনে গুনে ১৫ দিন ট্রেন থামে। তাও বিশেষ এক কাজের জন্য। তাতে ভিড়ও হয় ভালোই। ১৫ দিন পেরোলে আবার যে কে সেই। একটার পর একটা ট্রেন চলে যায়। একটাও থামে না।
কথা বলছি অনুগ্রহ নারায়ণ রোড স্টেশন সম্পর্কে। বিহারের এই স্টেশনেই বছরভর থামে না কোনও ট্রেন। তবে পিতৃপক্ষের সময় সেখানে ট্রেন দাঁড়ায় ১৫ দিনের জন্য। কারণ এই স্টেশনের কাছেই রয়েছে প্রসিদ্ধ এক ঘাট। সেখানে দলে দলে তর্পন সারতে আসেন সাধারণ মানুষ। আর সেই কারণেই ওই স্টেশনে ট্রেন থামানো হয়। এমনিতে বিহারের গয়ায় বছরভর অনেকেই পিণ্ডদানের উদ্দেশে হাজির হন। এই ঘাটও সেই কারণেই প্রসিদ্ধ। অনেকে মনে করেন, বিহারের এই ঘাটেই প্রথম পিণ্ডদানের অনুষ্ঠান হয়েছিল। তবে এই ঘাট গঙ্গার তীরে নয়। পুনপুন নদীর তীরে। পুরাণে এই নদীকেই আদিগঙ্গা হিসেবে উল্লেখ করা হয়। তাই এখানে পিণ্ডদান করা পুণ্যের এমনটাই মনে করেন অনেকে। সেই পুণ্যের টানে দূর দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন এই ঘাটে। সবথেকে সহজ উপায় ট্রেনপথ। সেই কারণে বছরের এই নির্দিষ্ট কটা দিন স্টেশনে ট্রেন থামে। শুধু ভারত নয়, নেপাল সহ বাইরের দেশ থেকেও অনেকে হাজির হন অনুগ্রহ নারায়ণ রোড স্টেশনে। তবে পিতৃপক্ষের অবসান হলেই এই স্টেশন আবার নির্জন হয়ে পড়ে। ট্রেন না থামলে এখানে মানুষ আসবেন কীভাবে! তাছাড়া পিতৃপক্ষের ওই সময়টায় এই এলাকায় অনেক দোকানপাঠ বসে। সবমিলিয়ে বিষয়টা জমাটি হয়ে ওঠে। তারপর আবার যে কে সেই। এমনিতে ফাঁকা থাকে এমন স্টেশনের সংখ্যা এ দেশে কম নেই। কিন্তু বছরে গুনে গুনে ১৫ দিন থামে এমন স্টেশন বোধহয় আর নেই।