৪৬ বছর পর খোলা হয়েছে পুরীর রত্ন ভাণ্ডার। ভিতরে খোঁজ মিলেছে বহুমূল্য রত্ন-অলংকারের। যার বর্তমান বাজার মূল্য অনায়াসে কয়েক কোটি ছাড়িয়ে যাবে। কিন্তু এই বিপুল সম্পত্তি জগন্নাথ মন্দিরে এল কীভাবে? কে বা কারা রয়েছেন এর নেপথ্যে? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
খোলা হয়েছে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের রত্নভাণ্ডার! তা নিয়ে কৌতূহলের অন্ত নেই দেশবাসীর। বহু যুগ ধরে এখানেই সঞ্চিত রয়েছে জগন্নাথদেব, সুভদ্রা ও বলভদ্রের রত্নসম্পদ। এর মধ্যে এমন কিছু অলঙ্কার রয়েছে যা আক্ষরিক অর্থেই অমূল্য। শুধু রত্ন-অলংকার নয়, গুপ্ত ভাণ্ডারে হদিশ মিলেছে প্রাচীন মূর্তিরও।
:আরও শুনুন:
উলটোরথে ফিরে এসেও মন্দির ঢোকার অনুমতি নেই, কেন তিনদিন রথেই কাটান জগন্নাথ?
কিন্তু এই বিপুল সম্পত্তি মন্দিরে এল কীভাবে?
পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের নাম শোনেননি এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া কঠিন। স্রেফ ভারতে নয়, জগন্নাথ ভক্ত ছড়িয়ে রয়েছে গোটা বিশ্বে। রথ উপলক্ষে প্রতি বছর লাখো ভক্তের সমাগম হয় শ্রীক্ষেত্রে। আর এমনটাই হয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে। জানা যায়, পুরীর মন্দির প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ১১ শতকে। এই নিয়ে মতবিরোধ থাকলেও, মন্দিরের প্রাচীনত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলেন না কেউই। একদিকে জগন্নাথের মাহাত্ম, অন্যদিকে শ্রীক্ষেত্রের রহস্যময় পরিবেশ। সবমিলিয়ে পুরীর মন্দির এখনও সমানভাবে জনপ্রিয়। আর সেই জনপ্রিয়তার জন্য বেশ খানিকটা দায়ী রত্ন ভাণ্ডার। জানা যায়, মোট ১৮০ রকমের বহুমূল্য গয়না রয়েছে এই রত্ন ভাণ্ডারে। ভারী সোনার গয়না রয়েছে ৭৪ রকমের। কোনও কোনও গয়নার ওজন ১০০ তোলা অর্থাৎ দেড় কোজি অবধি। রত্ন ভান্ডারের মোট দুটি প্রকোষ্ঠ রয়েছে। এতদিন ভিতরের প্রকোষ্ঠ খোলা হয়নি। স্রেফ বাইরের প্রকোষ্ঠে রাখা রত্নের হিসাবই সামনে আসত। যেখানে জগন্নাথের একটি সোনার মুকুট এবং তিনটি সোনার হরিদকণ্ঠী মালা, জগন্নাথদেব এবং বলভদ্রের সোনার শ্রীভুজ এবং পা রয়েছে। রয়েছে সোনা, হিরে, প্রবাল, মুক্তো দিয়ে তৈরি ‘প্লেট’। ১৪০টি ভারী রূপোর গহনাও রয়েছে মন্দিরের ভিতরের রত্নকক্ষে। আর এই বিপুল রত্ন সামগ্রী সবটাই রাজারাজদের দান।
:আরও শুনুন:
মাসি নন পৌর্ণমাসী! কেন তাঁর কাছেই রথে চেপে যান জগন্নাথ?
আর সেই তালিকায় প্রথমেই আসে রাজা অনঙ্গভীম দেব-এর নাম। জানা যায়, জগন্নাথের উদ্দেশে কয়েশকো কেজি সোনা দান করেছিলেন তিনি। তাঁর দেওয়া সোনা থেকেই জগন্নাথের একাধিক অলংকার তৈরি হয়েছে। শুধু তাই নয়, বেশ কিছু বহুমূল্য রত্নও মন্দিরে দান করেছিলেন অনঙ্গভীমই। এখনকার বাজারে এই ধরনের সোনা হাজার খুঁজলেও মিলবে না। তাই জগন্নাথের গয়নার মূল্য যে সাধারণ গয়নার থেকে অনেকটা বেশি, তা বলাই যায়। তবে স্রেফ অনঙ্গভীম নয়, পুরীর মন্দিরে সূর্যবংশীয় শাসকরাও দান করতেন। রাজা কপিলেন্দ্র দেব হাতির পিঠে চাপিয়ে জগন্নাথের জন্য বহুমূল্য রত্নালংকার নিয়ে আসতেন। সেইসবই গচ্ছিত রয়েছে পুরীর রত্ন ভাণ্ডারে। তবে মন্দিরের ইতিহাস আর জগন্নাথ মূর্তির ইতিহাস এক নয়। শ্রীক্ষেত্রে আরাধ্য মহাপ্রভুর সঙ্গে শরবদের পূজিত নীলমাধবের বিশেষ যোগ রয়েছে। তাই এমনটাও শোনা যায়, স্রেফ রাজা নয় জগন্নাথ মন্দিরে দান করেছেন বহু সাধারণ মানুষও। তাতেই ভরেছে রত্নভান্ডার। যা বহুমূল্য তো বটেই, সেইসঙ্গে প্রাচীনত্বের কারণেও বিশেষ।