চারিদিকে জল। মাঝে দাঁড়িয়ে রয়েছে দুটো পিলার। তার উপরেই আস্ত একটা দেশ। গল্প কিংবা সিনেমা নয়, বাস্তবেই রয়েছে এমন দেশ। সেখানে বাসিন্দা মাত্র ২৭ জন। কিন্তু তাতে কি! এইটুকু দেশেরও রয়েছে জাতীয় পতাকা, সেনাবাহিনী এবং নিজস্ব মুদ্রা। কোন দেশের কথা বলছি? আসুন শুনে নিই।
অনেকেরই ধারণা বিশ্বের সবথেকে ছোট দেশ, ভ্যাটিকান সিটি। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এই দেশের ব্যাপক পরিচিতির জোরেই এমনটা মনে করেন তারা। কিন্তু আসলে বিশ্বের সবথেকে ছোট দেশের তকমা রয়েছে অন্য এক দেশের কাছে। যাকে আপাতদৃষ্টিতে, কোনও স্বাধীন দেশ হিসেবেই ভাবতে পারবেন না প্রায় কেউই।
আরও শুনুন: কবে আর কতটা বৃষ্টি হবে, আগেই নির্ভুল ভাবে জানিয়ে দেয় এই মন্দির
কথা বলছি, দক্ষিন সাগরে বুকে অবস্থিত সিল্যাণ্ড সম্পর্কে। চারিদিকে সমুদ্র ঘেরা এই দেশ আসলে একটি লোহার প্ল্যাটফর্ম। যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তৈরি করা হয়েছিল। দেশের বাসিন্দার সংখ্যা মাত্র ২৭। কোনও প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি নেই। শাসনের দায়ভার রয়েছে রাজা-রানির উপর। কিন্তু যেকোনও স্বাধীন দেশের মতোই এই দেশের, জাতীয় পতাকা, সেনাবাহিনী কিংবা নিজস্ব মুদ্রা রয়েছে। ইংল্যাণ্ড থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই দেশের মোট আয়তন ৫৫০ বর্গফুট। সরকারি ভাবে এর নাম, ‘প্রিন্সিপালিটি অফ সিল্যাণ্ড’। তবে স্থল থেকে এই দেশের দেখা পাওয়া সম্ভব নয়। সমুদ্রের মাঝে এর অবস্থান এমনই এক জায়গায়, যেখানে জল বা আকাশপথে ছাড়া যাওয়া অসম্ভব। এমনকি নৌকা করে বেশ খানিকটা না গেলে, এই সিল্যান্ড দেখতেও পাওয়া যায় না। আসলে এটি তৈরিই করা হয়েছিল ঠিক এই কারণে। বিশ্বযুদ্ধের সময় এখানেই সেনাদের মজুত রাখত ব্রিটিস সরকার। যেহেতু খুব সহজে এর নাগাল পাওয়া সম্ভব নয়, তাই প্রয়োজন মতো এখান থেকে সেনাবাহিনী কিংবা অস্ত্র নিয়ে এসে যুদ্ধ চালানো হত। এছাড়া সমুদ্রের ভেতর দুটি পিলারের ওপরে দাঁড়িয়ে থাকাএই দুর্গ থেকেই শত্রুপক্ষের বোমারু বিমানকে গুলি করে নামানো হত। সমুদ্রের জলে মাইন পাতার কাজেও বিশেষ সুবিধা করে দিত এই সিল্যাণ্ড।
আরও শুনুন: ‘মুসলিম নেই আর’, প্রেমের টানে ভারতে আসা পাক বধূকে ফেরাতে নারাজ পরিবার, পড়শিরাও
কিন্তু বিশ্বযুদ্ধের পর এই অঞ্চল প্রায় পরিত্যক্ত ভূমিতে পরিণত হয়। সেইসঙ্গে হয়ে ওঠে অপরাধীদের আখড়া। শোনা যায়, তখন এখান থেকেই কিছু অবৈধ রেডিও স্টেশন চালানো হত। কোনও সরকারি স্বীকৃতিও ছিল না এই জায়গার। ১৯৬৭ সালে ব্রিটিশ সেনা অফিসার মেজর রয় বেটস এই জায়গার দখল নেন। তিনিই এখানে সরকার প্রতিষ্ঠা করেন। দেশের জাতীয় পতাকা সহ যাবতীয় নিজস্বতা তাঁর তত্ত্বাবধানেই তৈরি হয়। তবে এরপরও বহ বিপদের মুখে পড়েছে এই দেশ। একদিকে ভিনদেশের আক্রমণ, অন্যদিকে অপরাধীদের দখল নেওয়ার চেষ্টা, সব কিছুর বিরুদ্ধে লড়াই করে টিকে আছে সিল্যান্ড। এমনকি বিপদ এসেছিল ইংলাণ্ডের তরফেও। সেক্ষেত্রে সামনে দাঁড়িয়ে লড়াই করেছিলেন মেজর। বর্তমানে দেশের সুরক্ষার কথা ভেবে একাধিক নিয়ম চালু করেছে সিল্যান্ড সরকার। সাধারণভাবে যে কেউ, আকাশপথে বা জলপথে সেখানে পৌঁছাতে পারবেন না। লাগবে অনুমতিপত্র এবং ভিসা। সব ঠিক থাকলে জলপথে যেতে হবে ওই দুই পিলারের নীচে। সেখান থেকে বিশেষভাবে উঠতে হবে উপরে। বাইরে থেকে দেখে যেমনই মনে হোক, ভিতরে বেশ সুন্দর সিল্যান্ড। আর এইভাবেই গত ৫৩ বছর ধরে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে সিল্যান্ড।