শাস্ত্রমতে পুজোয় শঙ্খধ্বনি আবশ্যক। বাংলার ঘরে ঘরে সন্ধে দেখানোর সময় শাঁখ বাজানোর নিয়ম রয়েছে। তবে শাঁখ বাজানোর সময় অবশ্যই মানা উচিত বিশেষ কিছু নিয়ম। অন্যথায় অন্য বিপদ হতে পারে। ঠিক কীভাবে শাঁখ বাজাতে হয়? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
যুদ্ধ শুরুর আগে শঙ্খধ্বনির দেওয়ার নিয়ম ছিল। শ্রীকৃষ্ণ, অর্জুন সহ পুরাণের সমস্ত রথী-মহারথীর ছিল বিশেষ শঙ্খ। এ যুগে অবশ্য শঙ্খের ব্যবহার মূলত পুজোর কাজেই সীমাবদ্ধ। মূলত দুইধরনের শঙ্খ দেবপূজায় ব্যবহৃত হয়। এক পানিশঙ্খ, বিগ্রহ স্নান বা এই ধরনের কাজে লাগে। আরেক শঙ্খ, ধ্বনি উৎপন্ন করে। এই শঙ্খধনিকে বঙ্গ জীবনের অঙ্গ বললেও ভুল হয় না। অধিয়কাংশ বাড়িতেই প্রতিদিন সন্ধ্যা দেওয়ার সময় শাঁখ বাজানোর চল রয়েছে। আর সেখানেই উঠে আসে নিয়মের কথা। শাস্ত্রে শাঁখ বাজানোর নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম রয়েছে। না মানলে হতে পারে অন্য বিপদ।
:আরও শুনুন:
বন্যা হলে খাবার জুটবে না! ভরসা কন্যাপণে, পাকিস্তানে বাড়ছে নাবালিকাদের বিয়ে
কিছুদিন আগে জনপ্রিয় অভিনেত্রীর শাঁখ বাজানো দেখে হাসির রোল উঠেছে নেটদুনিয়ায়। কেউ কেউ দাবি করছেন, অভিনেত্রী আসলে শাঁখ বাজাননি। যে ধ্বনি শোনা গিয়েছে তা রেকর্ড করা। তাই নিয়ে অনেকেই ব্যঙ্গ করেছেন। তবে শাস্ত্রমতে শাঁখ বাজানোর নিয়ম অনেকেই হয়তো জানেন না। হিন্দুদের বিশ্বাস অনুযায়ী, শাঁখের আওয়াজ পবিত্র ‘ওঁ’ ধ্বনির সমতুল। যে ‘ওঁ’ ধ্বনির অস্তিত্ব সৃষ্টির আদিতেও ছিল বলে বিশ্বাস করা হয়। তাই পুজো-অর্চনা থেকে অন্যান্য যে কোনও শুভ কাজে শাঁখের উপস্থিতি আবশ্যক। বলা হয়, শাঁখের আওয়াজ এবং শাঁখ বাজানোর প্রক্রিয়া আমাদের শরীরের নানা উপকার করে। শাঁখ বাজানোর জন্য যেভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে হয় তাতে মানুষের শরীরের ফুসফুসের বিশেষ উপকার হয়। কেননা তা একরকম ব্যায়ামের শামিল। ফলত শ্বাস-প্রশ্বাস জনিত সমস্যা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে শাঁখ বাজানো যে একটি উৎকৃষ্ট ব্যায়াম, এ কথা বলাই যায়। আবার যাদের কথা বলার ক্ষেত্রে সমস্যা আছে, তারাও যদি নিয়ম করে শাঁখ বাজায়, তবে তাঁদের সমস্যা অনেক সময়ই সেরে যায়। তবে খেয়াল রাখতে কীভাবে শাঁখ বাজানো হচ্ছে। খেয়াল রাখতে হবে শাঁখ বাজানোর সময় কোনওভাবে যেন মুখে কোনও খাবার না থাকে। এমনটা শাস্ত্রবিরুদ্ধ তো বটেই, পাশাপাশি যে কোনও মুহূর্তে শ্বাসনালীতে খাবার আটকে যেতে পারে। দাঁড়িয়ে শাঁখ বাজানো বেশি উপকারের। এতে সুবিধাও হয় বেশি। শাঁখের যে অংশ খোলা, সেদিকটা উপরে রেখে বাজানো নিয়ম। যোদ্ধারা একহাতে শাঁখ বাজাতেন। তবে বাড়িতে দুই হাত ব্যবহারে সমস্যা নেই। শাঁখ বাজানোর সময় নিচ থেকে উপরের দিকে ঘাড় তুলতে হয়। ঘাড় গুঁজে বা মুখ নামিয়ে শাঁখ বাজানো উচিত না।
:আরও শুনুন:
নুন-চিনিতেও ভেজাল! প্যাকেটের ভিতর মাইক্রোপ্লাস্টিকের খোঁজ, মাথায় হাত মধ্যবিত্তের
ঠিকমতো নিয়ম না মেনে শাঁখ বাজালে শরীরের তো বটেই, ক্ষতি হতে পারে সংসারেরও। একইসঙ্গে শাঁখ কোথায় কীভাবে রাখা হচ্ছে তার উপরও নির্ভর করে ঘরের বাস্তু। পুজোর জায়গায় একটি মাত্র শাঁখই রাখা উচিত। একাধিক শাঁখ রাখলে তা বাস্তুদোষে রূপ নেয়। তবে নিয়মিত শাঁখ বাজালে মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন দ্রুত হয়। এর ফলে স্ট্রেস, অ্যাংজাইটির মতো সমস্যাও অনেকটা নিয়ন্ত্রণে থাকে। ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকে বলে মত অনেকেরই। এমনকী শাঁখ বাজানোর সময় শরীরের যে ব্যায়াম হয়, তাতে ফুসফুস ভালো থাকা ছাড়াও অন্যান্য উপকার হয়। যেমন হজমের সমস্যা বা স্টমাক ঠিক রাখতেও এই ব্যায়াম উপকারী। শাঁখের আওয়াজ জীবাণুনাশক বলেও মনে করা হয়। তাই প্রতিদিন নিয়ম মেনে শাঁখ বাজালে মঙ্গল বই অমঙ্গল হয় না।