দেবী সরস্বতীর সঙ্গে যুক্ত সব কিছুই শ্বেতশুভ্র। তাই তাঁর বাহন হিসেবে সাদা রাজহাঁস থাকা একেবারেই যুক্তিযুক্ত। তবে শুধুমাত্র বর্ণগত বৈশিষ্ট্য নয়। দেবী সরস্বতীর বাহন হিসেবে রাজহাঁসকে বিবেচনা করার আরও কিছু কারণ রয়েছে। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
তিনি বিদ্যার দেবী। তাঁর শুক্লবর্ণা মূর্তিই মর্তলোকে পূজিত হয়। তাই উজ্জ্বল শ্বেত বর্ণের এই দেবীর বাহন হিসেবে রাজহংস যে একেবারেই উপযুক্ত, এ কথা বলাই বাহুল্য। তবে দেহের বাহ্যিক বৈশিষ্ট্যের কারণে প্রাণীজগতের ব্যতিক্রমী সুন্দর হওয়ার পাশাপাশি রাজহংসের রয়েছে আরও কিছু গুণ। যে গুণগুলির কারণে জ্ঞানের দেবী সরস্বতীর বাহন হওয়ার যোগ্যতা রয়েছে তারই।
আরও শুনুন: সৌন্দর্যের বিচারে সাদৃশ্য নেই মোটেই, তবু কেন লক্ষ্মী দেবীর বাহন হল প্যাঁচা?
দেবীর ধ্যানমন্ত্রে তাঁর পরিচয় পাওয়া যায় জ্ঞানদাত্রী হিসেবে। জগতের সমস্ত অন্ধকার দূর করে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দেওয়াই দেবীর প্রধান উদ্দেশ্য। আবার রাজহাঁসের এক অদ্ভুত গুণ আছে। রাজহাঁস নাকি স্বাভাবিকভাবেই অসারকে উপেক্ষা করে কেবলমাত্র সার গ্রহণ করে। সারাদিন জলে থাকলেও সে এতটুকু কাদামিশ্রিত পাঁক ভক্ষণ করে না। অদ্ভুত উপায়ে তার মধ্যে থেকে খাবারটুকু খুঁজে নিয়ে খেতে পারে সে। এমনকি দেখা যায় দুধ ও জলের মিশ্রণ থেকে জল ফেলে শুধু দুধটুকু গ্রহণ করতে পারে রাজহাঁস।
এই বৈশিষ্ট্যের কারণেই জগতের যাবতীয় কুশিক্ষাকে সরিয়ে রেখে কেবলমাত্র জ্ঞান আহরণের প্রতীক হিসেবে রাজহাঁসকে চিহ্নিত করা হয়। স্বয়ং রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবও সংসারে থেকে সাধনা করার ক্ষেত্রে বারবার রাজহাঁসের উদাহরণ টেনেছেন। স্বাভাবিক ভাবেই জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দেওয়া দেবী সরস্বতীর বাহন হিসেবে স্থান পেয়েছে এই পাখিটি। দেবীর পদতলে থেকে সে যেন সকল ভক্তকে অকল্যাণকর যা কিছু পরিহার করে নিত্য পরমাত্মাকে গ্রহণ করার এবং পারমার্থিক জ্ঞান অর্জন করার বার্তা দেয়।
আরও শুনুন: পক্ষীকুলে শ্রেষ্ঠ বলেই কি দেবসেনাপতির বাহন হল ময়ূর?
দেবী দুর্গার সঙ্গে পুজিত হলেও কেবলমাত্র সরস্বতীর আরাধনা করা হয় মাঘ মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে। এই দিনে দেবীর সঙ্গেই পুজো করা হয় তাঁর বাহন রাজহাঁসেরও। জগতের সকল অন্ধকারকে সরিয়ে রেখে কেবলমাত্র জ্ঞানের আলোকে আলোকিত হওয়ার প্রার্থনাই করা হয় এই দিনে।