মহালয়ার আগে এক পক্ষকাল। শাস্ত্রমতে এই ১৫ দিন পিতৃপক্ষ। এই সময় পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে তর্পণ করার নিয়ম রয়েছে। সেইসঙ্গে আর কী করতে হয়? পিতৃপক্ষে কোন কোন কাজ অশুভ? আসুন শুনে নিই।
পুজো মানেই নতুন জামা। একটা নয়, অন্তত চারটে। কিন্তু কেনাকাটার আগে খেয়াল রাখতে হবে সময়। অর্থাৎ কোনদিন নতুন পোশাক কেনা হচ্ছে। বিশেষ করে পিতৃপক্ষে নতুন কিছু না কেনাই ভালো। নেপথ্যে অবশ্য বিশেষ কারণও রয়েছে।
কিন্তু এই পিতৃপক্ষ আসলে কী?
পিতৃপক্ষের অবসান হয়ে দেবী পক্ষের সূচনা। মহালয়া তিথি সম্পর্কে এ তথ্য সকলেরই কমবেশি জানা। আর এই সূত্র ধরেই সামনে আসে পিতৃপক্ষের আলোচনা। অর্থাৎ দেবীপক্ষের সূচনার দিনে শেষ হচ্ছে যে বিশেষ পক্ষকাল। বলা হয়, এই এক পক্ষকাল পিতৃপুরুষরা মনুষ্যলোকের কাছাকাছি চলে আসেন। তাই তাঁদের উদ্দেশে তর্পন করার নিয়ম রয়েছে বছরের এই ১৫ দিন। এমনিতে মহালয়ার দিনেই তর্পণ করা প্রচলিত রীতি। তবে কেউ চাইলে গোটা পিতৃপক্ষ জুড়েই তর্পণ করতে পারেন। মনে করা হয়, এইসময় শ্রাদ্ধ-শান্তি ও তর্পণ করলে পূর্বপুরুষেরা খুশি হন এবং আশীর্বাদ করেন। তাঁদের কৃপায় জীবনের অনেক বাধা দূর হয়। জীবনের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা থেকেও মুক্তিও মেলে। শাস্ত্রমতে, হিন্দুদের অবশ্য পালনীয় যে পঞ্চমহাযজ্ঞের বিধান রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হল পিতৃযজ্ঞ অর্থাৎ তর্পণাদি। এই তর্পণ কথার অর্থ হল, যাতে অন্যের তৃপ্তি হয় সেই উদ্দেশ্যে জলদান। তর্পণ তাই শুধু পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যেই নয়, সর্বভূতের উদ্দেশেই করতে হয়। এছাড়াও এই বিশেষ সময় কয়েকটি কাজ করা বিশেষ পুণ্যের। যেমন, পিতৃপক্ষে দান-ধ্যান অতি শুভ। অভুক্তকে অন্নদান করলেও বিশেষ ফল মেলে। এতো গেল পিতৃপক্ষে কী করতে হবে সেই নিয়মের কথা। শাস্ত্রমতে পিতৃপক্ষে নিষিদ্ধ কিছু কাজও রয়েছে। এমনটা করলে বিপদ অবধি হতে পারে। এমনটাই প্রচলিত ধারণা।
সবার আগে বলতে হয় নতুন কিছু শুরুর কথা। বছরের এই বিশেষ সময়ে নতুন কোনও কাজ বা ব্যবসা শুরু না করাই ভালো। কটা দিন অপেক্ষা করে দেবীপক্ষে শুরু করলেই সমস্যা হবে না। বরং দেবীপক্ষে শুরু করা যে কোনও কাজ অত্যন্ত শুভ বলেই মনে করা হয়। একইভাবে পিতৃপক্ষে নতুন জামাকাপড় পরতে নেই। কেনাকাটাও না করাই ভালো। মনে করা হয়, পিতৃপক্ষে আমাদের চারপাশে এমন অনেকেই থাকেন যাঁদের বাস্তব অস্তিত্ব ঠাহর করা কঠিন। তাঁদের প্রতি সম্মান দেখিয়েই নতুন কিছু পরা থেকে নিজেদের বিরত রাখা উচিত। এমনটাই মনে করেন শাস্ত্রজ্ঞরা। যদিও এই নিয়ে মতভেদ রয়েছে। কেউ কেউ বলেন, ভালো কাজ শুরুর কোনও দিন হয় না। যেদিন শুরু হবে সেটাই ভালো দিন। আবার অনেকে জ্যোতিষের প্রসঙ্গ তুলে পিতৃপক্ষে নিষিদ্ধ কাজের তালিকা দেন। তাতে নতুন জিনিস না কেনার পাশাপাশি আরও অনেক পরামর্শ রয়েছে। যেমন এই সময় কারও সঙ্গে বচসায় না জড়ানোই মঙ্গল। জাঁকজমক বা আড়ম্বর করে কোনও অনুষ্ঠান করতে নেই। অনেকে এই সময় নিরামিষ খান। জ্যোতিষমতে এরও বিশেষ এবং শুভ ফল রয়েছে। তবে পিতৃপক্ষে মদ্যপান থেকে বিরত থাকা উচিত। বিশেষত যারা তর্পণ করবেন তাঁদের এই দিকটা অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। এছাড়া, পিতৃপক্ষে ব্রাহ্মমুহূর্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিয়ম করে এই পনেরো দিন কেউ যদি সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে বিছানা ছাড়তে পারেন, তবে তাঁর জীবনে শুভ পরিবর্তন আসতে বাধ্য। তবে পিতৃপক্ষের শেষ মানেই দুর্গাপুজোর ঢাকে কাঠি। মহালয়ার পর থেকেই শাস্ত্রমতে মাতৃআরাধনা শুরু করা যেতে পারে। বেশ কিছু বনেদি বাড়িতে প্রতিপদ থেকেই চণ্ডীপাঠ শুরু হয়ে যায়। একদিকে দেবী মূর্তি ধীরে ধীরে পূর্ণ রূপে বিকশিত হয়ে ওঠেন, অন্যদিকে মর্তলোক সেজে ওঠে আলোর উৎসবে মেতে ওঠার আনন্দে।