ভূতে ভয় পান অনেকেই। পুজো করেন কতজন? শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। প্রতিবছর নিষ্ঠাভরে ভূতের পুজো করেন এই গ্রাবের বাসিন্দারা। তা দেখতে হাজির হন অনেকে। কোথায় রয়েছে এমন প্রথা? কীভাবে হয় ভূতের পুজো? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
ভূত চতুর্দশীর রাত। তেনাদের এপারায় আগমনের সময়। চোদ্দশাক থেকে চোদ্দ প্রদীপ, হাজার নিয়মে বাঁধা কালীপুজোর আগের এই দিন। লোকবিশ্বাসে তেনারা আসেন ঠিকই, তবে আপ্যায়ন পান না। ভূত চতর্দশীর রাতে ভূত তাড়াতেই ব্যস্ত হন সকলে। ব্যতিক্রম নদীয়ার ফুলিয়া। এখানে ভূতেদের তাড়ানো নয়, নিষ্ঠাভরে পুজো করা হয়।
আরও শুনুন:
ভূতুড়ে কাণ্ড! এমনিই চুল বাড়ে খেলনা পুতুলের, পুজোও করেন স্থানীয়রা, কোথায় জানেন?
শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। ভূত পুজোর চল দীর্ঘদিনের। দল বেঁধে পুজো করেন গ্রামবাসী। পুজো হয় কবন্ধের। অর্থাৎ সেই বিশেষ ভূত, যার মাথা নেই। অনেকে এঁকে স্কন্দকাটাও বলেন। দেখতে ভয়াবহ এই ভূত। সামনে আসুক, এমন স্বপ্ন কেউ দেখেন না। তবে পুজোয় তার প্রভাব পড়ে না। নিষ্ঠাভরে ভূতের আরাধনা করেন গ্রামের মানুষ। নিয়ম আলাদা। রয়েছে বিশেষ মন্ত্রও। এমনকি মূর্তিটিও মাটিতে শোয়া। আলাদা করে তৈরি করে স্থাপন করা হয় না। মাটিতেই উঁচু ঢিপি বানিয়ে চোখ নাক আঁকা হয়। সম্পূর্ণ কালো রঙের শরীর। মুখে চোখের ধারে লাল রং। জিভও রয়েছে, একেবারে রক্তবর্ণ। পুজোর সময় মূর্তির চারপাশ ঘিরে দেওয়া হয়। আলাদা করে কোনও প্যান্ডেল হয় না। মাটির তৈরি এই মূর্তি আকারেও তেমন ছোট নয়। তবে বিসর্জনের নিয়ম নেই। তাই সমস্যা হয় না। শোনা যায়, এই পুজোর জন্ম পূর্ববঙ্গে। সেখানকার মানুষজন নিষ্ঠাভরে পুজো করতেন। দেশভাগের পর তাঁরা চলে আসেন ভারতে। সঙ্গে আনেন ভূতকে। থুড়ি, ভূতপুজোর নিয়মকে। সেই থেকে চলে আসছে পুজো। অনেকে বলেন, এই কন্ধের উল্লেখ রয়েছে রামায়ণেও। তবে এখানে ভূত হিসেবে কবন্ধের পুজো করার কারণও যে সেটিই তা জানা যায় না।
আরও শুনুন:
একবার গেলে আর ফেরার উপায় নেই! মানচিত্রে না থেকেও ‘জীবন্ত’ জাপানের ভূতুড়ে গ্রাম
এমনিতে বাঙালির ভূত নিয়ে মাতামাতি করার দিন কালীপুজোর আগে। তবে ফুলিয়ার ভূতপুজো সেই সময় হয় না। এমনকি কালীপুজোর সঙ্গে এর কোনও যোগ নেই। প্রতি বছর চৈত্রের শেষদিনে ঘটা করে আয়োজন হয় এই পুজো। দায়িত্বে থাকেন গাজনের সন্ন্যাসীরা। শিবের ব্রত করার সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা এই পুজোও নিষ্ঠাভরে করেন। পুজো হয় দিনের আলোতেই। ঘটও বসে। বিলি করা হয় প্রসাদ। যারা দেখতে আসেন, তাঁরাই প্রসাদ পান। তবে হ্যাঁ, একটু এদিক ওদিক হলেই সমস্যা। স্থানীয় বিশ্বাস, ভূতের কোপে ভয়ঙ্কর কিছু বিপদ ঘটতে পারে। তাই ঝড় জল যাই হোক, ভূতের পুজো বন্ধ হয়নি। এ দেশে ভূতের জন্য নির্দিষ্ট মন্দির থাকলেও, ভূতের পুজো আর কোথাও হয় না। এইভাবে তো না-ই। বিশেষজ্ঞরা এই পুজোকে বাংলার লোক ঐতিহ্য হিসেবে গন্য করেন। এবং আগামীদিনেও তা বজায় থাকুক এমনটাই চান স্থানীয় সকলে।