সমুদ্রের ঢেউ এসে আছড়ে পড়ে সৈকতের উপর। জল আসে, জল সরে যায়। জেগে থাকে বালি আর বালি। সমুদ্র সৈকত মানেই বোধহয় বালির উপত্যকা। কোথাও সেই বালি হলুদ, কোথাও আবার ধবধবে সাদা। সৈকতটিকেও দেখায় তেমনই। কিন্তু এ সৈকত তার ব্যতিক্রম। ঋতুর সঙ্গে সঙ্গে রং বদলাতে থাকে এই সৈকত। কমলা থেকে গোলাপি পেরিয়ে ক্রমে লাল। সে সময় টুকটুকে লাল এই সৈকত দেখে চোখ কপালে ওঠে দর্শকদের। কেন এমন লাল এই সৈকত! শুনে নিন।
উজ্জ্বল লাল রঙের সৈকত। কী ভাবছেন, এখানকার বালির রং টুকটুকে লাল। আশ্চর্যের ব্যাপার, এই রক্তাভ সৈকতের পিছনে বালির হাত একেবারেই নেই বললেই চলে।
তবে আবহাওয়ার সঙ্গে একটা সম্পর্ক আছে বৈকি। এপ্রিল-মে নাগাদ গেলে এ সৈকতের রং এমনটা পাবেন না। শরৎ আসার সঙ্গে সঙ্গে রং বদলাতে শুরু করে ল্যান্ডস্কেপের। উজ্জ্বল সবুজে প্রথমে হালকা কমলা রং ধরে, সেখান থেকে গোলাপি। অক্টোবরের মাঝামাঝি এ সৈকতের রং তীব্র লাল।
আরও শুনুন: নতুন দেশের রাজা হলেন দুই বন্ধু! রেস্ত নয়, বুদ্ধি খাটিয়ে কিনে ফেললেন একটা গোটা দ্বীপ
প্রকৃতির এমন রংবাজি দেখলে আশ্চর্য হবেন আপনিও। ক্রমে পর্যটকদের কাছেও আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে এই লাল সৈকত। কোথায় গেলে দেখা মিলবে এমন রক্তিম সৈকতের? বলছি বলছি। এমন আশ্চর্য সৈকতের দেখা পেতে গেলে আপনাকে যেতে হবে চিনে। আজ্ঞে হ্যাঁ, বেজিং থেকে ৬ ঘণ্টার পথ পানজিং। সেখানেই দেখা মিলবে এমন আশ্চর্য সুন্দর ভূখণ্ডের। শরৎ এলেই প্রায় ২৬ কিলোমিটার জায়গা এই লাল রঙে ভরে ওঠে।
বসন্তে লাল পলাশ বা গ্রীষ্মে রক্তরাঙা কৃষ্ণচূড়া দেখে আহা উহু করেন। তবে এ জায়গা আপনার জন্য আদর্শ। এমন লালের সমারোহ, তাও আবার সমুদ্র সৈকতে, আপনাকে মুগ্ধ করতে বাধ্য।
আরও শুনুন: হারিয়ে গিয়েছিল ৩,০০০ বছর আগে, মাটির নিচে গবেষকেরা খোঁজ পেলেন এই আশ্চর্য ‘সোনার’ শহরের
ঠিকই শুনেছেন। বালির জন্য নয়। এ সৈকতের এমন রক্তরাঙা হওয়ার পিছনে রয়েছে অন্য একজনের হাত। এই সৈকতে মেলে এমন একধরনের সামুদ্রিক শৈবাল, যা নাকি সমুদ্রের নোনা জল শোষণ করে হয়ে ওঠে এমন আগুনে লাল। সময় এবং আবহাওয়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে রং বদলাতে থাকে এই শৈবালের। পাশাপাশি জীববৈচিত্র্যের দিক দিয়েও দারুণ সমৃদ্ধ এই সমুদ্রসৈকত। প্রায় ২৬০ রকমের পাখির বাস এখানে। তাই পক্ষীপ্রেমীদের কাছেও দারুণ জনপ্রিয় জায়গাটি। সব মিলিয়ে এ জায়গার পর্যটনমূল্য এখন মারকাটারি। দূর থেকে দেখলে মনে হবে, কে যেন গোটা সমুদ্র সৈকতটাকে রেড কার্পেট দিয়ে মুড়ে দিয়েছে। আর তা দিয়ে তৈরি হয়েছে আশ্চর্য সমুদ্রের সীমারেখা। বাকি অনেকের মতো যদিও আপনিও লাল ভক্ত হন, তবে চিনের এ জায়গায় আপনাকে আসতেই হবে।