নতুন বছরের শুরুতেই অযোধ্যার রাম মন্দিরের উদ্বোধন। রাজকীয় অনুষ্ঠানের অপেক্ষায় প্রহর গুনছে গোটা দেশের গেরুয়া শিবির। তবে সারা দেশে রাম মন্দির রয়েছে আরও অনেক। যার মধ্যে কয়েকটি মন্দিরে রীতিমতো বিখ্যাত। কোথায় রয়েছে সেসব মন্দির? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
তিনি পুরুষ শ্রেষ্ঠ। তাঁর বীরত্বের কাহিনি শুনলে শ্রদ্ধায় মাথা নত হতে বাধ্য। শুধুমাত্র ভারতে নয়, সারা বিশ্বেই শ্রীরামের পুজোর প্রচলন রয়েছে। এমনকি বেশ কিছু দেশে রামের বিশালাকায় মূর্তিও রয়েছে। আর তাই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে রামের মন্দির থাকা একেবারেই অস্বাভাবিক নয়। উত্তর দক্ষিণ মিলিয়ে গোটা ভারতেই রয়েছে শ্রীরামের একাধিক মন্দির।
আরও শুনুন: ভক্তিভরে শ্রীরামের নাম করলে খুশি হন মহাদেবও, শুনে নিন রামনামের মাহাত্ম্য
এমনিতে শ্রীরাম বিষ্ণুর অবতার। তাই যে কোনও বৈষ্ণব ক্ষেত্রে রামের মূর্তি চোখে পড়ে। একইসঙ্গে রামের নামে তুষ্ট হন মহাদেবও। তাই জ্যোতির্লিঙ্গ বা মহাদেবের বিখ্যাত মন্দিরগুলোতেও শ্রীরামের পুজোর চল রয়েছে। এছাড়া হনুমান মন্দির রামের মূর্তি ছাড়া অসম্পূর্ণ। তাই যে কোনও হনুমান মন্দিরের আশেপাশেও সহজেই চোখে পড়তে পারে রাম মন্দির। তবে এই মুহূর্তে দেশজুড়ে চর্চায় রয়েছে একটাই রাম মন্দির। এবং তা অবশ্যই রাম জন্মভূমি অযোধ্যার রাম মন্দির। এই মন্দির তৈরির আন্দোলন আজকের নয়। বিতর্কিত জমিতে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর মন্দির তৈরির অনুমতী পাওয়া গিয়েছিল। তার আগে এই চত্বর রামের জন্মভূমি হিসেবে পরিচিতি পেলেও, এখানে এইধরনের বিশাল মাপের রাম মন্দির ছিল না। তাই বলে কি দেশের কোথাও রাম মন্দির ছিল না?
একেবারেই না। দেশের অন্যান্য রাম মন্দিররের কথা বললে সবার আগে বলতে হয় জম্মুর রঘুনাথ মন্দিরের কথা। শোনা যায়, এই মন্দির তৈরি হয়েছিল ১৮২২ সাল নাগাদ। প্রায় ২০০ বছরের পুরনো এই মন্দিরের বিশেষ আকৃতির স্তম্ভই মূল আকর্ষন। কোনও এক বিখ্যাত রাজা সেই সময় শ্রীরামের এই মন্দির তৈরি করেছিলেন। তারপর থেকে এখানে ভক্তদের ভিড় লেগেই থাকে। জম্মু বেড়াতে গেলে পর্যটকরা অবশ্যই ঢুঁ মারেন এই মন্দিরে। এরপর বলতে হয় অন্ধ্রপ্রদেশের এক রাম মন্দিরের কথা। সেখানকার খাম্মান জেলার ভদ্রাছালাম অঞ্চলে অবস্থিত শ্রী সীতারাম স্বামী মন্দির। এই মন্দিরের মূল আকর্ষণ বলতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। মন্দিরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া গোদাবরী নদী যার মাত্রা দ্বিগুণ করে। কথিত আছে, এই অঞ্চলে সীতা মায়ের খোঁজ করতে এসেছিলেন স্বয়ং রাম। সেই বিশ্বাসেই মন্দিরে পুজো দিতে যান ভক্তরা। এরই অদূরে কেরালার শ্রীরাম মন্দির। এখানে বিষ্ণুর সপ্তম অবতার হিসেবে ত্রিপ্রায়ার পূজিত হন শ্রীরাম। শোনা যায়, এই মন্দিরে রামের যে মূর্তিটি পুজো করা হয় তা সমুদ্র থেকে উদ্ধার হয়েছিল। সেই থেকে নিত্য পূজিত হয় সেই মূর্তি। প্রতি একাদশী তিথিতে এখানে বিশেষ উৎসবের আয়োজন করা হয়। এরপর বলতে হয় নাসিকের কালারাম মন্দিরের কথা। আরাধ্যের মূর্তি কৃষ্ণশিলায় নির্মিত। তাই এই মন্দিরের নাম কালারাম। এই মন্দিরের বিশেষত্ব ওই রামমূর্তিই। এবার তেলেঙ্গানা এক রাম মন্দিরের কথা না বললেই নয়। এই মন্দিরে অবশ্য রাম অপেক্ষা সীতার কদর বেশি। মন্দিরের নামও সীতা রামচন্দ্রস্বামী মন্দির। এখানে রামের যোদ্ধারূপের মূর্তি প্রতিষ্টিত। রামায়াণের বেশ কিছু কাহিনির সঙ্গে এই মন্দিরের আশেপাশের অঞ্চল জড়িয়ে। বিশেষ করে রাম যখন সীতাকে উদ্ধার করে ফিরছেন, তখন তিনি এই জায়গাতেই বিশ্রাম নিয়েছিলেন বলে স্থানীয় বিশ্বাস। তাই এই মন্দির বেশ প্রসিদ্ধ। তালিকায় রয়েছে মধ্য প্রদেশের রাজা রাম মন্দিরও। এখানে অবশ্য রাম ভগবান নন, রাজার স্বরূপ। রাজবেশে রামের মূর্তি প্রতিষ্ঠিত মন্দিরের গর্ভগৃহে। শোনা যায়, এখানে একসময় গান স্যালুট দেওয়া হত রামরাজাকে উদ্দেশ্য করে। মন্দির ঘিরে বেশ কিছু অলৌকিক কাহিনি রয়েছে। তাই এখানেও বছরভর ভক্তদের ভিড় লেগেই থাকে। তালিকায় রয়েছে মধ্যপ্রদেশের আরও এক মন্দির। কথা বলছি, সাতনার রামভন মন্দির সম্পর্কে। এর সঙ্গেও রামায়নের একাধিক কাহিনি জড়িয়ে। সেইসঙ্গে মন্দিরে রয়েছে বিশাল এক হনুমান মূর্তিও। তবে রাম মন্দিরের এ তালিকা একেবারেই ছোট নয়। তেলেঙ্গানা, উত্তরপ্রদেশ, কর্ণাটকে রয়েছে আরও কিছু বিখ্যাত রাম মন্দির। তবে অযোধ্যার রাম মন্দির উদ্বোধনের আগেই সেই সব মন্দিরের জনপ্রিয়তাকে ছাপিয়ে গিয়েছে, সেকথা বলাই বাহুল্য।