মৃত্যুতেই কি ভালবাসার শেষ? না, সে কথা আদৌ মনে করেন না এখানকার মানুষ। আর সেই কারণেই, প্রিয় মানুষটির মৃত্যুর পরেও তাঁকে বিয়ে করা যায় এই দেশে। হ্যাঁ, আইনি ভাবেই স্বীকৃত এই প্রথা। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
যে মানুষটির সঙ্গে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখেছিলেন, আচমকা মৃত্যু এসে কেড়ে নিয়ে গিয়েছে তাঁকে। অধরাই রয়ে গিয়েছে দুজনের গাঁটছড়া বাঁধার কল্পনাও। এই না-পাওয়াকেই পূরণ করার কথা বলে এই দেশ। এখানে প্রিয় মানুষটির মৃত্যুর পরেও তাঁকে আইনি পথে বিয়ে করার সম্মতি মেলে। কেবল তার আগে প্রমাণ দেখাতে হয় যে, তিনি জীবিত থাকাকালীনই দুজনের বিয়ে সারার পরিকল্পনা ছিল। আর সেই প্রমাণ দেখাতে পারলেই, মৃত মানুষটির শেষ ইচ্ছাকে সম্মান জানায় এ দেশের আইন। মৃত্যুর পরেও তাঁকে বিয়ে করতে পারেন জীবিত প্রিয়জন।
আরও শুনুন: রেস্তোরাঁর বিল ১.৩ কোটি! খাবার খেয়ে মাথায় হাত গ্রাহকের
ভাবছেন গল্পকথা? না, একেবারেই সত্যি ঘটনা। এমনটাই ঘটে ফ্রান্সে। কারণ সে দেশের আইনে রয়েছে মরণোত্তর বিয়ের অনুমতি। কিন্তু কেন এমন প্রথাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে সেখানে?
জানা যায়, আগে সৈন্যদের ক্ষেত্রে এই নিয়ম কার্যকরী ছিল। যুদ্ধক্ষেত্রে শহিদ হওয়ার পর কোনও কোনও সৈনিকের বাগদত্তা মহিলারা এহেন আবেদন জানিয়েছিলেন। মৃত প্রেমিকের সঙ্গেই বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন তাঁরা। পরবর্তী কালে এক মর্মান্তিক ঘটনার জেরে সাধারণ মানুষের জন্যও এই নিয়ম চালু হয়। ১৯৫০-এর দশকে, ম্যালপাসেত ড্যাম নামে এক বড়সড় বাঁধ ভেঙে পড়ে প্রায় চার-পাঁচশো মানুষের মৃত্যু হয়। মৃতদের মধ্যেই ছিলেন আন্দ্রে কাপরা নামের এক ব্যক্তি। তাঁর বাগদত্তা, আইরিন জোডার্ট সরাসরি ফরাসি প্রেসিডেন্টের কাছে আরজি জানান, যে, প্রেমিকের মৃত্যু হলেও তাঁকেই পূর্ব পরিকল্পনামাফিক বিয়ে করতে চান তিনি। এই মর্মস্পর্শী আবেদনে সমর্থন জোগায় সে দেশের মিডিয়া, সাধারণ মানুষের একাংশও। অবশেষে অনুমতি মেলে। আর এই অনুমতির সূত্র ধরেই ফ্রান্সে মরণোত্তর বিয়ের আইন পাশ হয়।
আরও শুনুন: শ্লোকে ‘ভেজাল আমদানি’ করেই সতীদাহ! শাস্ত্রের পথেই প্রতিরোধ করেছিলেন রামমোহন
এই ধরনের বিয়ের ক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তির পরিবারের সম্মতির প্রয়োজন হয়। তবে মৃতের সম্পত্তির উপরে তাঁর মরণোত্তর স্বামী বা স্ত্রীর কোনোরকম অধিকার জন্মায় না। বলাই বাহুল্য, বিষয়সম্পত্তির লাভ লোকসানের হিসেব কষে নয়, স্রেফ ভালবাসার তাগিদেই এ জাতীয় বিয়ের পথে পা বাড়ান কেউ কেউ। আর এই বিয়ের মধ্যে দিয়ে মৃত্যুর পরেও ভালবাসাকে জিতিয়ে দিয়ে যান তাঁরা।