বন্ধ দুর্গাপুজো। শারদোৎসবে জ্বলবে না আলো। আনন্দ নয়, শোক যাপন করবেন সবাই। এমনই নিয়ম গ্রামে। দীর্ঘদিন ধরে তা পালন করে আসছেন সকলে। কোথায় রয়েছে এমন গ্রাম? কেন এমন নিয়ম পালন করেন সেখানকার বাসিন্দারা? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
বছরঘুরে মর্তে ফিরবেন উমা। উৎসবের আমেজে মেতে উঠবে গোটা দেশ। বাংলার প্রায় সব জায়গাতেই ঘটা করে আয়োজন হবে দুর্গাপুজোর। ব্যতিক্রম কয়েকটি গ্রাম। সেখানে শারদোৎসবের কোনও চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যাবে না। আনন্দের বদলে শোকযাপন করবেন গ্রামের বাসিন্দারা। আর এমনটাই নাকি নিয়ম।
কথা বলছি ‘অসুর’ সম্প্রদায় সম্পর্কে। দেবী দুর্গা যে মহিষাসুরকে বধ করেছিলেন, এঁরা তাঁর উপাসক। দুর্গাপুজোর দিনগুলো এঁদের শোকপালনের সময়। কারণ এই সময়েই ওঁদের রাজা তথা আরাধ্য মহিষাসুরকে ছলনা করে হত্যা করেন দেবী দুর্গা। আজও সেই শোক ভুলতে পারেননি ওঁরা। তাই নবরাত্রি জুড়ে শোকপালনের নিয়ম ‘অসুর’ উপজাতির মধ্যে। এই সময় অরন্ধন পালন করেন এঁরা। ঘরে দরজা দিয়ে বসে থাকেন, যাতে উৎসবের শব্দ তাঁদের কান অবধি না পৌঁছায়। কান্নার সুরে গান গেয়ে ঘুরে বেড়ান গ্রামে গ্রামে। পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, বিহার- এই তিন রাজ্যেই অসুর উপজাতির বাস। বলা ভালো, উপজাতিদের মধ্যে এঁদের সংখ্যাই সবথেকে বেশি। মূলত গ্রামাঞ্চলে এঁদের আধিক্য চোখে পড়ে। সেখানেই প্রতিবছর ঘটা করে অসুরপুজোর আয়োজন করেন এঁরা। তাতে অবশ্য দুর্গাপুজোর মতো জাঁকজমক নেই। বরং রয়েছে শোকের ছায়া। অসুরের স্মরণসভা বললেও ভুল হয় না। তবে এঁরা নিজেদের রাজাকে অসুর বলে সম্বোধন করেন না। এঁদের কাছে তিনি ‘হুদুড় দুর্গা’ নামেই পরিচিত। আদিবাসী সমাজ মনে করে, ‘দুর্গা’ আসলে তাঁদের ‘সম্রাট মহিষাসুর’-এরই নাম, তিনিই হলেন ‘হুদুড় দুর্গা’। পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, বিহার, ছত্তিশগড়ের বিভিন্ন গ্রামে প্রতিবছর ‘মহান অসুর সম্রাট হুদুড় দুর্গা স্মরণসভা’র আয়োজন হয়।
কিন্তু পুরাণে মহিষাসুরকে অত্যাচারী, ভয়ঙ্কর, খল রূপেই দেখানো হয়েছে। তাঁকে কোন যুক্তিতে পুজো করেন এই গ্রামের বাসিন্দারা?
হিন্দু পুরাণে যেমন মহিষাসুর আর দেবী দুর্গার যুদ্ধের কাহিনি রয়েছে। আদিবাসী লোককথাতেও সেই কাহিনি রয়েছে। তবে দুটি কাহিনির দৃষ্টিভঙ্গি সম্পূর্ণ বিপরীত। আদিবাসী লোকগাথা অনুযায়ী, মহিষাসুর ছিলেন অত্যন্ত বলশালী এবং প্রজাবৎসল এক রাজা। তিনি নারীদের অত্যন্ত সম্মান করতেন। কোনও নারীর বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরতেন না। মনে করা হয়, এই সুযোগটাই নিয়েছিল আর্যরা। কৌশলে দুর্গাকে ব্যবহার করে প্রবল প্রতাপশালী মহিষাসুরকে বধ করতে। এই যুক্তিতে মহিষাসুরই ভিলেন নন। তাই দুর্গাপুজোর সময় রাজার মৃত্যুর শোকযাপন করেন এই উপজাতির মানুষজন।