বিচার চাই। যে কোনও অন্যায়-অপরাধের ক্ষেত্রেই নাগরিকরা এ দাবি তোলেন। আবার সেই বিচারে দেরি হলে, অনেকেই বলে থাকেন, ‘জাস্টিস ডিলেইড ইজ জাস্টিস ডিনাইড’। মুখে মুখে ফেরে এই কথা। কিন্তু কথাটির উৎস কোথায়? আসুন, একবার পুরনো কাসুন্দি ঘেঁটে দেখা যাক।
ঝামেলা বেধেছে। দুই পক্ষ যুযুধান। কিছুতেই ফয়সালা হচ্ছে না। এর মধ্যেই, কোন এক পক্ষের মুখ থেকে নিশ্চিত বেরিয়ে আসে, কোর্টে দেখা হবে। অর্থাৎ বিচারব্যবস্থা যা কিনা সর্বদা ন্যায় এনে দেয়। সাধারণ মানুষ সেই বিচারব্যবস্থায় আস্থা রাখেন। তবু, মাঝেমধ্যেই বিচারে দেরি হয়ে গেলে, হয়তো একটু ক্ষোভেই বলে ফেলেন, ‘জাস্টিস ডিলেইড ইজ জাস্টিস ডিনাইড’। অর্থাৎ সময়ের বিচার যদি ঠিক সময়ে না হয়, যদি অনেক দেরি হয়ে যায় তাহলে সেই বিচারের গুরুত্বই যেন কমে যায়। তা হয়ে ওঠে বিচার না-মেলার মতোই। ইংরেজি এই ফ্রেজ-টি খুবই প্রচলিত। তবে, তার উৎস কোথায়?
ঠিক কোথা থেকে এই বাক্যবন্ধের প্রচলন, তা নিইয়ে খানিক মতভেদ আছে। শোনা যায়, এই বাক্যবন্ধ প্রথম ব্যবহার করেছিলেন উইলিয়াম গ্লাডস্টোন। ১৮৬৮ সালে মার্কিন মুলুকের ‘হাউস অফ কমনসে’ বক্তব্য রাখতে গিয়ে একথা বলেন গ্লাডস্টোন। প্রসঙ্গ সেই বিচারের। দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা মামলার গুরুত্ব কমে আসে। এমনটা বোঝাতেই বাক্যবন্ধ ব্যবহার হয়েছিল। এই যুক্তিতে মান্যতা দেয় ‘ডিক্সনারী অফ কোটেশন’। এখানেই বিশ্বের যাবতীয় বিখ্যাত সব উদ্ধৃতি নথিবদ্ধ করা রয়েছে। তাই গ্লাডস্টোনকে ‘জাস্টিস ডিলেইড ইজ জাস্টিস ডিনাইড’-এর প্রণেতা মনে করেন অনেকেই। তবে এমনটাও শোনা যায়, এই বাক্যবন্ধ প্রথম ব্যবহার করেছিলেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র। ১৯৬৩ সালে লেখা ‘লেটার ফ্রম বারমিংহাম জেল’-এ একথা লিখেছিলেন তিনি। তবে তাঁর লেখা বাক্যবন্ধ হুবহু এক ছিল না। লুথারের চিঠিতে লেখা ছিল, ‘জাস্টিস টু লং ডিলেইড ইজ জাস্টিস ডিনাইড’। অর্থের দিক দিয়ে তেমন আলাদা নয়। তবে যেহেতু দুটি শব্দ বেশি ছিল এই বাক্যবন্ধে তাই লুথারকে এর প্রণেতা হিসেবে দেখেন না অনেকেই। এই নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয় বিভিন্ন মহলে। যেহেতু গ্লাডস্টনের ব্যবহার করা বাক্যবন্ধ অধিক প্রচলিত, তাই তাঁকেই এর কৃতিত্ব দেওয়া হয়। মোটের উপর ২০ শতকের মাঝামাঝি সময় থেকেই এই বাক্যবন্ধ ছড়িয়ে পড়ে।
বহু দেশে এই বাক্যবন্ধ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ভারতও ব্যতিক্রম নয়। এমনিই এ দেশের বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘ। কেন্দ্রীয় রিপোর্টেও বারবার ধরা পড়ে সেই ছবি। ৩০-৪০ বছরের পুরনো এমন মামলার সংখ্যা কয়েক হাজার। সবমিলিয়ে দেশের সমস্ত হাইকোর্টে ঝুলে থাকা কেসের সংখ্যা লক্ষ ছাড়িয়েছে। এই প্রসঙ্গ ধরেই চর্চায় ফেরে ‘জাস্টিস ডিলেইড ইজ জাস্টিস ডিনাইড’ বাক্যবন্ধটি। তবে বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থা হারালে চলে না। এমনটাও মনে করেন অনেকেই। বছরের পর বছর ধরে অপেক্ষা করতে হলে তাই সই। তবু যেন সঠিক বিচার আসে। এমন ঘটনার সংখ্যা একাধিক, যেখানে দীর্ঘদিন সময় পেরিয়ে বিচার শেষ হয়েছে। চূড়ান্ত রায় নিয়ে খুশি হয়েছেন মামলাকারী এমন উদাহরণও কম নেই। আসল কথা হল, সঠিক বিচার। প্রচলিত শব্দবন্ধ যতই মামলার গুরুত্ব কমে যাওয়াই ইঙ্গিত করুক, সঠিক বিচার পাওয়াটাই চূড়ান্ত লক্ষ।