ঢাকের শব্দ কানে এলেই মনে হয় পুজো এসেছে! দোসর হিসেবে কাঁসরের বাজনাও মন মাতিয়ে দেয়। অনেকে আবার সেইসঙ্গে সানাই, ঢোল, শঙ্খ কতকিছুই হাজির করেন। কিন্তু দেবীকে আদৌ এইসব বাজনায় তুষ্ট হন? শাস্ত্র কিন্তু তেমনটা বলছে না। কোন দেবতা কোন বাদ্যে অসন্তুষ্ট হয় জানেন? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
ঢাক-ঢোল, কাঁসর-ঘণ্টা নিয়ে রাজপথে নামছেন অনেকেই। এভাবেই প্রতিবাদের উৎসবে শামিল হচ্ছেন তাঁরা, এমনটাই দাবি আমজনতার। পুজো মণ্ডপেও এইসব বাজনাই চোখে পড়ে। কিন্তু যার আরাধনা, সেই দেবী দুর্গা কি এইসব বাদ্যে তুষ্ট হন? ব্যাখ্যা রয়েছে শাস্ত্রেই।
আসলে, যে কোনও পুজোর ক্ষেত্রেই নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম থাকে। শাস্ত্রে আলাদাভাবে উল্লেখ করা থাকে কোন কোন ফুল বা দ্রব্য পুজোয় নিষিদ্ধ। সব দেবতার পুজোর উপাচার মোটেও এক নয়। দেবী পূজায় যেমন লাল ফুল আবশ্যক, বিষ্ণু পূজায় তেমনই আবশ্যক তুলসী। এদিকে নারায়ণের পায়ে জবাফুল দিতে দেখা যায় না সচরাচর। শিবের মাথায় বেলপাতা দিলে তিনি তুষ্ট। অথচ এই শিবকেই তুলসী নিবেদন নিষিদ্ধ। একভাবে গণেশ, লক্ষ্মী, নবগ্রহ, কালী, সকলের পুজোয় বেশ কিছু জিনিস নিষিদ্ধ। একই কথা বাদ্যের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। পুজো হচ্ছে মানেই ঢাক-ঢোল বাজাতে হবে এমন কথা শাস্ত্রে বলা নেই। বরং নির্দিষ্টভাবে বলে দেওয়া হয়েছে কোন পুজোয় কোন বাদ্য বাজানো যাবে না। দেবতা রুষ্ট হবেন সেই বাদ্যের ধ্বনিতে। ভোলানাথ মহেশ্বর থেকে মহামায়া দুর্গা, সকলের ক্ষেত্রেই এই নিয়ম প্রযোজ্য। না জেনে দেবপূজায় সেই বাদ্য বাজালে, ক্ষতি হতে বাধ্য।
শাস্ত্র বলছে,
শিবাগারে ঝল্লকঞ্চ সূৰ্য্যাগারে চ শঙ্খকং, দুর্গাগারে বংশীবাদ্যং মাধুরীঞ্চ ন বাদয়েৎ।।
বিরিঞ্চেস্তু গৃহে ঢক্কাং ঘণ্টাং লক্ষ্মীগৃহে ত্যজেৎ, ৰ্ব্ববাদ্যময়ীং ঘণ্টাং বাদ্যাভাবে প্রযোজয়েৎ।।
অর্থাৎ শিবমন্দিরে করতাল, সূৰ্য্য মন্দিরে শঙ্খ, দুর্গামণ্ডপে ও মন্দিরে বংশী ও সানাই, ব্ৰহ্মাগারে ঢাক এবং লক্ষ্মীগৃহে ঘণ্টা বাজাতে নেই। না জেনে শিবমন্দিরে করতাল করলে অতি ক্রদ্ধ হন মহেশ্বর। তাঁর আরাধনায় ডমরু বাদ্য যথেষ্ট। এতেই তুষ্ট হন দেবাদিদেব। অনেকেই মনে করেন পুজোর সময় শাঁখ বাজানো নিয়ম। কিন্তু সূর্যের পুজোয় এই কাজ থেকে বিরত থাকাই মঙ্গল। একইভাবে দুর্গাপুজোয় যদি সানাই বাজানো হয় তাহলে রুষ্ট হন দেবী। কোনওভাবেই দুর্গামন্দিরে বংশীবাদন করা যাবে না, এমনটাই নিয়ম শাস্ত্রের। আবার দুর্গাপুজোর অন্যতম জনপ্রিয় বাদ্য ঢাক বাজানো যায় না ব্রহ্মার উপাসনায়। সেইভাবে এ দেশে ব্রহ্মার মন্দির নেই। তবে কেউ যদি ব্রহ্মার পুজো করেন তবে ঢাক না বাজালেই মিলবে ফল। আবার দেবী লক্ষ্মী কোনও বাদ্যের শব্দ পছন্দ করেন না। তাঁর পুজোয় আরতি করার সময়ও ঘণ্টা বাজাতে নেই। এছাড়া বাকি যে কোনও পুজোয় ঘণ্টা বাজানো যেতে পারে। শাস্ত্রেই বলা হচ্ছে ঘণ্টা সৰ্ব্ববাদ্যময়ী, অর্থাৎ অন্য বাদ্যের অভাবে কেবল ঘণ্টা বাজিয়ে পুজো করা যেতে পারে। এছাড়া গীতবাদ্যে তুষ্ট হন দেবতারা। সরস্বতী পুজোয় অনেকেই দেবীর সামনে গান পরিবেশন করেন। এমনটা করলে অতি তুষ্ট হন দেবী। অন্যান্য পুজোতেও এমনটা করা যায়। সুরেলা ধ্বনি পছন্দ করেন প্রায় সব দেবতাই। তবে বাদ্যের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে, কোন দেবতার পুজো কোন বাদ্য নিষিদ্ধ। তবেই পুজোর আসল ফল মিলবে।