হিন্দু রাজকন্যাকে বিয়ে করছেন মুঘল সম্রাট। ইতিহাসে এমন উদাহরণ রয়েছে ভুরি ভুরি। কিন্তু এর উলটোটাও হয়েছে বেশ কয়েকবার। খোদ সম্রাট আকবরের মেয়েকেই বিয়ে করেছিলেন এক হিন্দু রাজা। তালিকায় আর কোন হিন্দু রাজা রয়েছেন? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
ভারতে মুঘল শাসনের ইতিহাস ভোলার নয়। কখনও গায়ের জোরে কখনও আবার বুদ্ধি খাটিয়ে এ দেশের একের পর এক রাজ্য, প্রদেশ দখল করেছিলেন মুঘলরা। দীর্ঘ ২০০ বছরের রাজত্বকালে দেশের বহু পরিবর্তনও ঘটিয়েছিলেন। স্রেফ স্থাপত্য শিল্পে নয়, দেশের সংস্কৃতিতেও নানা পরিবর্তন এনেছিলেন মুঘল সম্রাটরা। যার অন্যতম ছিল, হিন্দু রাজকন্যাকে বিয়ে করা। যে দেশে এখনও বিয়ের সময় ধর্মের মিলকে বিশেষ প্রাধান্য দিয়ে দেখা হয়, সেখানে এত বছর আগেই ভিনধর্মের বিয়ে চালু করেছিলেন মুঘলরা। কিন্তু ইতিহাস বলছে স্রেফ মুঘল সম্রাট নয়, ভিনধর্মে বিয়ে সেরেছিলেন বহু হিন্দু রাজাও। অর্থাৎ মুঘল রাজকন্যাদের বিয়ে করেছিলেন এইসব হিন্দু রাজারা।
:আরও শুনুন:
সংস্কৃত নয় ইংরাজি বলুক পড়ুয়ারা, ছাত্রের গীতাপাঠ থামিয়ে ABVP-র রোষের মুখে প্রিন্সিপাল
সে যুগে সাম্রাজ্য বিস্তারের অন্যতম উপায় ছিল বিয়ে। অর্থাৎ কোনও রাজ্যের রাজকন্যার সঙ্গে বিয়ে হলেই, সেই রাজ্যের বেশ কিছুটা অংশ যৌতুক হিসেবে মিলবে। এই ‘লোভে’ অনেক রাজাই বিয়ে করতে দূর দূরান্ত পাড়ি জমাতেন। একই রেওয়াজে গা ভাসান মুঘল সম্রাটরা। হিন্দু রাজার একমাত্র মেয়েকে বিয়ে করে সেই রাজ্যে নিজেদের আধিপত্য কায়েম করতেন তৎকালীন সম্রাটরা। এক্ষেত্রে যুদ্ধের কোনও দরকার পড়ত না। রাজাও মেয়ের বিয়ে দিয়ে নিশ্চিন্ত হতেন। সম্রাট আকবর থেকে শুরু করে বহু মুঘল সম্রাট হিন্দু রাজকন্যাকে বিয়ে করেছিলেন। কিন্তু মুঘলরা তো ভারতে এসে এই নিয়ম শিখেছেন, এদেশে বহু আগে থেকেই বিয়ে করে সাম্রাজ্য বিস্তারের নিয়ম চালু ছিল। তাই মুঘল রাজকণ্যাকে বিয়ের শর্তও চাপিয়েছিলেন বহু হিন্দু রাজা। তালিকায় প্রথমেই বলতে হয়, মহারাজা অমর সিংহের কথা। শোনা যায়, তিনি সম্রাট আকবরের কন্যা খানুমের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। মেবারের এই রাজপুত রাজার যোদ্ধা হিসেবে বেশ নামডাক ছিল। এদিকে রাজপুতদের খানিক সমঝেই চলতেন মুঘলরা। ফলত বিয়ের মাধ্যমে সম্পর্ক তৈরি করে নিলেন দু’পক্ষেরই ভয় থাকে না। অনেকেই মনে করেন সম্রাট আকবর এইসব ভেবেই নিজের মেয়ের সঙ্গে মেবারের রাজার বিয়ে দিয়েছিলেন। যার দরুণ সেই সময় মেবারের মুঘলদের সম্পর্ক বেশ উন্নত হয়েছিল বলেই শোনা যায়।
:আরও শুনুন:
স্রোতের টানে মৃত্যুমুখে ৫ কানওয়ার যাত্রী, উদ্ধারকারী আলি বলছেন ‘প্রাণ বাঁচানোই ধর্ম’
তালিকায় থাকা দ্বিতীয় নামটিও মেবারের এক রাজার। অমর সিংহের মেবারের অন্যতম বীর রাজা ছিলেন মহারাণা কুম্ভ। তাঁর বিয়ে হয়েছিল ওয়াজির খানের কন্যার সঙ্গে। ইনি অবশ্য মুঘল সম্রাট ছিলেন না। বরং এঁর হাতেই ছিল মুঘল প্রশাসনের যাবতীয় দায়িত্ব। ওয়াজির খানের কথামতো কাজ করতেন খোদ সম্রাটও। তাই এমন একজন মানুষের মেয়েকে বিয়ে করাও রাজকন্যার সঙ্গে বিয়ের সমান। এরপর বলতে হয় রাজা মানসিংহের কথা। ইনি সম্রাট আকবরের নবরত্নের সদস্য ছিলেন। মুঘল সম্রাট খুশি হয়ে মানসিংহের সঙ্গেই তাঁর ভাইঝির বিয়ে দেন। শোনা যায়, এই বিয়ের মাধ্যমেই মুঘলদের সঙ্গে সম্পর্ক আরও ভালো হয়েছিল রাজপুতদের। হায়দরাবাএর নিজামের কন্যা রুহানি বাই-এর সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল মহারাজা ছত্রসলের। শোনা যায়, মুঘলদের সঙ্গে রীতিমতো সমস্যায় জড়িয়েই এই বিয়ে করেছিলেন ছত্রসল। বিয়ের মাধ্যমে সেই সমস্যা অনেকটাই মেটে। একইভাবে মুঘল সেনাপ্রধানের মেয়েকেও বিয়ে করেছিলেন এক হিন্দু রাজাই। অর্থাৎ মুঘল আমলে যে স্রেফ হিন্দু রাজকন্যারাই মুঘলদের বিয়ে করতেন তা নয়। একইভাবে এর উলটোটাও করে দেখিয়েছিলেন বহু হিন্দু রাজা।