তিনটি স্তন নিয়ে নাকি জন্মেছিলেন এই দেবী। যেমন তাঁর রূপ, তেমনই দেহে ছিল অসম্ভব শক্তি। প্রতি বছর বিপুল ব্যয়ে তাঁর বিয়ে দেন ভক্তরা। কে ইনি? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
হিন্দু দেবদেবীদের ঘিরে প্রচলিত কত না কিংবদন্তি! তেমনই এক কিংবদন্তির কেন্দ্রে রয়েছেন দক্ষিণ ভারতের এই দেবী। দক্ষিণ ভারতের মন্দির শহর মাদুরাই-এর নগরদেবী নাকি তিনি। শোনা যায়, তিনটি স্তন নিয়ে জন্ম হয়েছিল তাঁর। সেই শারীরিক ত্রুটি দূর করার উপায় ছিল ভাবী স্বামীর দেখা পাওয়া। কিন্তু রূপের পাশাপাশি অমিত শক্তির অধিকারিণী এই দেবীর তা নিয়ে বিশেষ চিন্তা ছিল না। বরং নিজের শর্তেই নিজের জীবন সাজিয়েছিলেন এই দৈবী নারী।
আরও শুনুন: বাবা অকালে প্রয়াত, ২৫ বছর পর মায়ের ফের বিয়ে দিলেন তরুণী
কিংবদন্তি অনুসারে মহাভারতের পাণ্ডবদের উত্তরসূরি পাণ্ড্যবংশের দখলে ছিল মাদুরাই। এই বংশের এক রাজা মাল্যধ্বজ সন্তানকামনায় পুত্রেষ্টি যজ্ঞ করেন। তুষ্ট হয়ে তাঁকে বর দেন মহাদেব। যজ্ঞকুণ্ড থেকেই উঠে আসে তিন বছরের এক অপরূপা মেয়ে। মাছের মতো সুন্দর চোখ দেখে তার নাম রাখা হয় মীনাক্ষী। কিন্তু মেয়ের যে তিনটি স্তন! কী হবে তার? অভয় মিলল সেই মহাদেবের কাছ থেকেই। ভাবী স্বামীর দেখা পেলেই নাকি লোপ পাবে অতিরিক্ত অঙ্গটি।
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রূপ আর বল, দুই-ই পাল্লা দিয়ে বেড়ে উঠল মীনাক্ষীর। মল্লযুদ্ধে তাঁকে হারায় সাধ্য কার! এদিকে তাঁর শারীরিক ত্রুটি দূর করতে স্বয়ংবর সভা ডেকে বসলেন রাজা। কিন্তু সবার সামনে মীনাক্ষী স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, যে পুরুষ তাঁকে মল্লযুদ্ধে হারাতে পারবে সেই পুরুষের গলাতেই মালা দেবেন তিনি।
না, পাওয়া যায়নি তেমন কোনও পুরুষ। রাজার মৃত্যুর পর সিংহাসনে বসলেন অবিবাহিত মীনাক্ষী। তারপর তাঁর খেয়াল জাগল, যে মহাদেবের বরে তাঁর জন্ম, তাঁকেই দর্শন করে আসবেন তিনি। বেশিদূর যেতে হল না। পথের প্রান্তেই দেখা দিলেন মহাদেব, ওই অঞ্চলের যাঁর নাম সুন্দরেশ্বর। চার চোখের মিলন হল, আর সেই মুহূর্তেই মীনাক্ষীর শরীর থেকে লোপ পেল তাঁর তৃতীয় স্তন। তারপর? দুজনের বিয়েতেই শেষ হল মীনাক্ষী-সুন্দরেশ্বরের কাহিনি।
আরও শুনুন: হিন্দু স্ত্রীর জন্য নিজেই ধর্মান্তরিত হলেন মুসলিম ব্যক্তি, নাম হল কৃষ্ণ সনাতনী
ভক্তদের বিশ্বাস, মীনাক্ষী আসলে পার্বতীরই অংশ। তাই এখনও প্রতি বছরই শিব পার্বতীর বিয়ের উৎসবের আয়োজন করেন ভক্তরা। মাদুরাইয়ের অন্যতম প্রধান উৎসব এই চিত্তিরাই। বারো দিন ধরে চলা এই উৎসবের দশম দিনটি মীনাক্ষী আর সুন্দরেশ্বরের বিয়ের দিন। তাঁদের বিয়ে উপলক্ষে আজঘরা মালাই-এর মন্দির থেকে রথে চড়ে বিরাট শোভাযাত্রা করে মাদুরাই আসেন মীনাক্ষীর ভাই কালাজঘর। আর ভিড় জমান অসংখ্য ভক্ত। লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ হয় দেবদম্পতির বিয়েতে। পরদিন বর বধূকে নিয়ে শোভাযাত্রা করে নগর পরিক্রমা করা হয়, যে অনুষ্ঠানের নাম পুষ্পপালাক্ক। এক দৈবী কাহিনির উপর নির্ভর করে এই আধুনিক যুগেও অব্যাহত দেবদেবীর বিবাহ উৎসবের এই পরম্পরা।