পুজোর দিনে অনেকেই উপোস করেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একবেলার জন্য। খুব বেশি হলে গোটা দিন। কিন্তু ৩৮২ দিন না খেয়ে থাকতে শুনেছেন? এক ব্যক্তি করেছিলেন ঠিক এমনটাই। কী হয়েছিল তারপর? আসুন শুনে নিই।
না খেয়ে কতদিন থাকা যায়? এ প্রশ্ন শুনে অনেকেই ঘাবড়ে যেতে পারেন। বিশেষত যাদের উপোস করার একেবারে অভ্যেস নেই, তারা একবেলা না খেয়ে থাকতে হলেই অস্থির হতে পারেন। অথচ এক ব্যক্তি টানা ৩৮২ দিন প্রায় উপোস ছিলেন।
আরও শুনুন: পালটা লাভ জিহাদ! ‘বিয়ের জন্য মুসলিম মেয়েদের অপহরণ করছে হিন্দুরা’, বিস্ফোরক দাবি কেরলে
ভাবছেন তো, এমনটা কীভাবে সম্ভব? তাহলে খুলেই বলা যাক।
কথা বলছি আঙ্গাস বারবেরিয়র সম্পর্কে। স্কটল্যাণ্ডের বাসিন্দা এই ব্যক্তিই একসময় টানা ৩৮২ দিন প্রায় না খেয়েই কাটিয়েছেন। আর এমনটা তাঁকে করতে হয়েছিল চিকিৎসকদের পরামর্শেই। আসলে অজ্ঞাত কারণে আঙ্গাসের ওজন অত্যধিক বাড়তে শুরু করে। একসময় প্রায় ২১৩ কিলোতে পৌঁছয় তাঁর ওজন। যা শারীরিক ও মানসিক দুই ভাবেই আঙ্গাসকে বেজায় সমস্যায় ফেলে। একইসঙ্গে শরীরে বিভিন্ন রোগ বাসা বাঁধতে শুরু করে। এমনিতে ব্যায়াম করে বা খাওয়া-দাওয়ায় রাশ টেনে ওজন কমানো সম্ভব। কিন্তু আঙ্গাসের যা অবস্থা হয়েছিল তাতে কোনওকিছুতেই সহজে কাজ হত না। তাই উপায় না দেখে তিনি হাসপাতালে পৌঁছে যান। যে সময়কা কথা বলছি, তখন এত ওজন কমানোর ওষুধ পাওয়া যেত না। কাজেই চিকিৎসকদের কাছেও ওজন কমানোর কোনও আলাদা চিকিৎসা ছিল না। এদিকে আঙ্গাসও নাছোড়বান্দা। ওজন তাঁকে কমাতেই হবে। আর সেই কাজ করতে হবে ওই হাসপাতালের চিকিৎসকদেরই। শেষমেশ চিকিৎসকরা বাধ্য হন আঙ্গাসের কথা শুনতে। শুরু হয় এক অদ্ভুত পদ্ধতিতে অভিনব ওজন কমানোর চিকিৎসা। চিকিৎসকরা সবদিক বিচার করে দেখেন এই মুহূর্তে একটা উপায়েই আঙ্গাসের ওজন কমানো সম্ভব। আর তা হল, খাওয়া কমানো। যেসব খাবারে ওজন বাড়ে এতদিন সেই সবকিছুই ছিল আঙ্গাসের খাদ্য তালিকায়। তাই ওজন কমানোর জেরে আঙ্গাসের খাদ্যতালিকা প্রায় ফাঁকা করে দিতে বাধ্য হন চিকিৎসকরা। স্রেফ জল, চা আর কফি বরাদ্দ হল খাবার হিসেবে। আর এভাবেই দিনের পর দিন চলতে থাকল উপোস। একদিন-দুদিন করে কাটল মাস। তারপর বছরও ঘুরল ওইভাবেই। প্রথমে ভীষণ অসুবিধা হলেও একটা সময়ের পর স্রেফ জল আর চা খেয়েই দিব্যি দিন কাটাতে থাকেন আঙ্গাস। অবশেষে ৩৮২ দিন পর চিকিৎসকরা মনে করেন এবার থামা দরকার। এরইমধ্যে দেখা যায়, আঙ্গাসের ওজন প্রায় ১২৫ কিলো কমেছে। ২১৩ থেকে একেবারে ৮৮ কিলোতে পৌঁছেছেন আঙ্গাস।
আরও শুনুন: সংস্কৃত মন্ত্রে গাড়ি পুজো করছেন আফ্রিকান ‘পুরোহিত’! ব্যাপারটা কী?
সেদিন ডিম-পাউরুটি খেয়ে উপোস ভাঙেন আঙ্গাস। ওজন কমিয়ে তিনি তো বেজায় খুশি। তবে এমন ঘটনা সবার মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে সহজেই। এর জেরে রেকর্ডের খাতায় নামও ওঠে আঙ্গাসের। অনেকেই ভেবেছিলেন এমন ভয়ানক উপোস করে তাঁর শরীর হয়তো ভেঙে পড়বে। কিন্তু না, স্রেফ ওজন কমা ছাড়া বড় কোনও রোগ হয়নি আঙ্গাসের। এই অভিনব চিকিৎসার পরেও তিনি বেঁচে ছিলেন প্রায় ২৪ বছর। যা অবাক করেছিল চিকিৎসকদেরও। তবে এমন পদ্ধতিতে ওজন কমানো আজকের দিনে একেবারেই স্বীকৃতি দিতে চান না চিকিৎসকরা। এর মাঝে এই কাণ্ড করতে গিয়ে প্রাণও হারিয়েছেন ৫-৬ জন। তবে আঙ্গাস বিরলতম উয়াদাহরণ হয়েই রয়ে গিয়েছেন। না খেয়েও যে এতদিন বাঁচা সম্ভব, তা প্রমাণ করে দিয়েছিলেন তিনি।