দেশজুড়ে নববর্ষ বা গণেশ চতুর্থীতে ঘটা করে গণেশ পুজো হতে দেখা যায়। তবে ভারতের যে প্রান্তে, পাহাড়ের কোলে বিনায়কের জন্ম হয়েছিল, সেখানে কিন্তু তার রেশমাত্র পৌঁছায় না। জানেন কি, লোকবিশ্বাস অনুযায়ী ভারতের কোন অঞ্চলে জন্মেছিলেন গণপতি? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
তিনি জনগণের প্রভু, গণপতি, বিনায়ক। সকল দেবদেবীর আগে তাঁর পুজো হওয়াই নিয়ম। তাহলেই কোনও কাজে আর বাধা-বিঘ্ন ঘটবে না। সিদ্ধিদাতা গণেশ সম্পর্কে এমন বিশ্বাসই আছে আমজনতার মনে। সেই বিশ্বাস থেকেই হয়তো, বছরের প্রথম দিন, গণেশের পুজো করার চল শুরু। তবে নববর্ষ বা গণেশ চতুর্থীতে যতই ঘটা করে গণেশ পুজো করা হোক না কেন, গণপতির জন্মভূমির কথা জানেন না অনেকেই। হ্যাঁ, পুরাণের কাহিনি এবং লোকবিশ্বাস অনুযায়ী, গণেশের জন্মভূমি হল ভূস্বর্গ কাশ্মীরের এক নির্জন উপত্যকা। কীভাবে? তাহলে গল্পটা শুরু থেকে বলা যাক।
আরও শুনুন: অধিকার ছিল না উপাসনার, শরীরে রাম নামের উল্কি এঁকেই উপাসনা ‘রামনামী’ সম্প্রদায়ের
পুরাণ অনুযায়ী গণেশের জন্ম হয়নি, তাঁকে সৃষ্টি করা হয়েছিল। একদা দেবী পার্বতী স্নানের আগে তাঁর দেহের ঘাম ও ময়লা দিয়ে একটি পুতুল তৈরি করে, তাতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করেন। পুত্র বলে সম্বোধন করে তাঁর নাম দেন বিনায়ক। তারপর তাঁকে বলেন, ‘শোনো বিনায়ক, আমি এখন নিভৃতে থাকতে চাই। আমার কাছে যেন এখন কেউ আসতে না পারে তা দেখাই হবে তোমার কাজ।’ মায়ের আদেশমতো বিনায়ক চললেন, দ্বাররক্ষী হয়ে পাহারা দিতে মা-কে। কাউকেই ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া যাবে না, সে যেই হোক। তারপরের গল্প আমরা সকলেই জানি। পার্বতীর স্বামী, খোদ দেবাদিদেব মহাদেবের পথ পর্যন্ত রুখে দেন দেবীর এই কোলের ছেলে। প্রবল ক্রোধে তাঁর মাথা কেটে ফেলেন শিব, তারপর আরও বহু ঘটনা পেরিয়ে গজানন রূপে পুনরায় জীবন ফিরে পান গণেশ। মনে করা হয়, গণেশের জন্ম, দ্বাররক্ষী হওয়া এবং নবজীবন লাভের এই সমস্ত ঘটনাই ঘটে গেছে ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলার পহেলগামে।
আরও শুনুন: যুবকের বিয়েতে সাক্ষী দিতে এসেই গোপাল হলেন সাক্ষীগোপাল
পহেলগামের লিডার নদীর পূর্ব পাড়ের কোলাহোই পর্বতশ্রেণির নিচের উপত্যকা বেশ নির্জন। সেখানে নদীর তীর থেকে খানিক দূরেই রয়েছে মামলেশ্বর মন্দির। স্থানীয় ভাষায় ‘মাম মাল’ কথার অর্থ হল,- ‘যেয়ো না’। তাই এই মন্দিরকে মাম্মল মন্দিরও বলা হয়। বলাই বাহুল্য, এই কথার মধ্যে গণেশের দ্বাররক্ষী হওয়ার ঘটনাটির ইঙ্গিত লুকিয়ে রয়েছে। কখনও সখনও পহেলগাম থেকে ভ্রমণার্থীরা ঘুরতে আসেন এখানে। জানা যায়, সম্পূর্ণ পাথরের ওপর খোদাই করা এই মন্দিরটি তৈরি হয়েছিল খ্রিস্টজন্মের আনুমানিক ৪০০ বছর আগে। তবে, এই মন্দিরের আরাধ্য দেবতা কিন্তু গণেশ নন। মন্দিরের ভেতরে রয়েছে একটি শিবলিঙ্গ। আর ঠিক তার সামনেই একটি চতুষ্কোণ জলাশয়। দূরের শুভ্র পর্বতমালার তুষারশৃঙ্গের ছায়া সেই জলে পড়ে মনে হয় যেন, হিমালয়ও, মহাদেবের পায়ে নতজানু হয়ে বসে। প্রকৃতির কোলে এইভাবেই নির্জনে রয়ে গিয়েছেন যোগীবর মহাদেব, আর তাঁর সঙ্গে জুড়ে রয়েছেন গণপতি বিনায়কও।