জলেও নাকি আগুন জ্বলে! আজ্ঞে হ্যাঁ। রাত্রি হলেই এক অদ্ভুত নীল আলো ছড়িয়ে পড়ে এই জলাশয় থেকে। এমনকি কেউ সেই জলে সাঁতার কেটে এলেও তার গায়ে লেগে থাকে সেই নীল আলোর আভা। কিন্তু জলের মধ্যে এই নীল আলো জ্বলে ওঠার পিছনে কী রহস্য রয়েছে? এ কি কোনও ভূতুড়ে কাণ্ড? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
স্থানীয়রা একে বলে ‘ফায়ার ওয়াটার’। অর্থাৎ আগুনজ্বলা জল। সত্যিই, রাতের অন্ধকার নেমে এলেই এই জলের মধ্যে যেন আগুন জ্বলে ওঠে। অথচ সেই আগুনের শিখার রং নীল। এ কি কোনও দৈব ঘটনা, নাকি স্রেফ ভূতুড়ে কাণ্ড? এমন প্রশ্ন উঠেছে বারেবারেই।
আরও শুনুন: ১০০ দিন ঘরছাড়া! গাড়িতেই সংসার সাজিয়ে দেশভ্রমণ ভারতীয় দম্পতির
আঞ্চলিক লোককথা অবশ্য একে দেবতার মহিমা বলেই ভাবতে চায়। সেই লোককথা অনুযায়ী, এটি নাকি চিরযৌবনের হ্রদ। জনশ্রুতি রয়েছে, এক কুরূপ দম্পতি একবার হ্রদে ডুবে আত্মহত্যা করতে চেয়েছিল। দেখতে অসুন্দর বলে সমাজে প্রায় একঘরে হয়ে গিয়েছিল তারা। পাশাপাশি ছিল নিঃসন্তান থাকার দুঃখও। তাই তারা দুজনে একসঙ্গে বেছে নিতে চেয়েছিল মৃত্যুর পথ। কিন্তু জলে ঝাঁপ দেওয়ার পরেই তাদের ঘিরে জ্বলে ওঠে সেই অপার্থিব নীল আলো। নীল ঢেউয়ের ধাক্কায় ফের তীরে পৌঁছে গিয়েছিল তারা। কিন্তু তীরে ওঠার পর তাদের জন্য অপেক্ষা করছিল চরম বিস্ময়। দেখা যায়, দুজনেই অপরূপ সুন্দর হয়ে উঠেছে। এখানেই শেষ নয়, বছর ঘুরতে না ঘুরতেই সন্তান আসে তাদের কোলে। এই হ্রদকে ঘিরে এমনই এক কাহিনি প্রচলিত রয়েছে জামাইকা অঞ্চলে।
বলাই বাহুল্য, এটি নিছকই লোককথা। হ্রদের জলে এমন নীল আলো জ্বলে ওঠার পিছনে কোনও অশরীরী মহিমা নেই। বরং রয়েছে একেবারেই বিজ্ঞানসম্মত একটি কারণ। কীরকম?
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এই হ্রদের জলে বাস করে অসংখ্য আণুবীক্ষণিক জীব। এদের বলা হয় ডাইনোফ্ল্যাজেলেট বা ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন। জলে সামান্য কম্পন হলেও তা টের পায় এই জীবেরা। আর সঙ্গে সঙ্গে তাদের গা থেকে বিচ্ছুরিত হতে শুরু করে উজ্জ্বল নীল আলো। জোনাকি পোকার দেহে লুসিফেরিন নামে যে রাসায়নিক পদার্থটি থাকে, এই জীবগুলির দেহেও তা উপস্থিত। আর তার সাহায্যেই রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে নিজেদের দেহে এহেন আলো উৎপন্ন করতে পারে জীবগুলি। এই আলোর আভা আছে, তবে তাপ নেই। বিজ্ঞানের পরিভাষায় এই আলোকে বলা হয় বায়োলুমিনিসেন্স। মজার কথা হল, দিনের বেলা সূর্যের আলো যত প্রখর হয়, রাতে হ্রদের আলোর উজ্জ্বলতা ততই বাড়ে। আসলে সালোকসংশ্লেষ করেই খাবার জোগাড় করে থাকে এই ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন। তাই সূর্যালোক এদের কাছে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
আরও শুনুন: অভিশপ্ত দ্বীপে গাছের ডালে ঝোলে বিকৃত সব পুতুল, কেন এখনও দেখা যায় এমন দৃশ্য?
কেবল জামাইকার এই জলাশয়টিই নয়, পৃথিবীর একাধিক জায়গায় এমন নীল আলো জ্বলা জলাশয়ের হদিশ মেলে। ভারত মহাসাগরে এমন একটি অঞ্চলের নাম ‘মিল্কি ওয়ে’। এমনকি ভারতেও কেরালা উপকূলের কোনও কোনও জায়গায় এমন আলো দেখতে পাওয়া যায়। বৈজ্ঞানিক যুক্তি ভুলে কেবল সেই অপার্থিব সৌন্দর্য দেখতেই সেখানে ভিড় করেন পর্যটকেরা।