ভাইজানের শিয়রে সংকট। সৌজন্যে বিষ্ণোই গ্যাংয়ের হুঁশিয়ারি। বর্তমানে নেটদুনিয়ার অন্যতম চর্চার বিষয় এটিই। তবে ইতিহাস বিষ্ণোই সম্প্রদায়কে অন্য এক কারনে বিশেষভাবে মনে রেখেছে। গাছ বাঁচাতে তাঁরা যে আন্দোলন করেছিলেন, তা ভোলার নয়। কেমন ছিল সেই ঘটনা? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
সলমন খানকে খুনের হুমকি। চর্চায় লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাং। বিশেষ করে, বাবা সিদ্দিকির হত্যাকান্ডের পর এই নিয়ে রীতিমতো চর্চা চলছে নেটদুনিয়ায়। তবে বিষ্ণোই মাত্রেই খল চরিত্র, এমনটা ভাবা ভুল। বরং পরিবেশ বাঁচাতে তাঁদের আন্দোলন মনে রাখতেই হয়।
সময়টা অন্তত ৩০০ বছর আগেকার। ১৭৩০ সাল। রাজস্থানের যোধপুর প্যালেস তৈরির জন্য কাঠ প্রয়োজন। মহারাজার নির্দেশ দিলেন গাছ কাটার। রাজকর্মীদের নজর পড়ল খেজরালি এলাকায়। এখানেই বাস ছিল বিষ্ণোই সম্প্রদায়ের। যারা মনে প্রাণে বিশ্বাস করতেন, গাছ কাটা কিংবা পশুহত্যা মহাপাপ। স্বাভাবিক ভাবেই রাজার আদেশের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান সকলে। এই এলাকার বিখ্যাত খেজরি কাঠের চাহিদা ছিল মারাত্মক। কিন্তু বিষ্ণোইদের কারণে সেই কাঠ পেতেন না কেউ। মহারাজের আদেশ সত্ত্বেও না। বাধ্য হয়ে এলাকা দখলে হাজির হন হাজার হাজার সেনা। এদিকে বিষ্ণোইদের কাছে লড়াই করার মতো অস্ত্র নেই। কিন্তু গাছ বাঁচাতেই হবে। উপায় না দেখে, সকলে গাছের সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লেন। সেনা ফিরে না গেলে কেউ সরবেন না। এদিকে রাজার নির্দেশ, অমান্য করার সাহস নেই সেনারও। প্রয়োজনে বিষ্ণোইদের উপরই অস্ত্র চালাতে হবে। করা গলায়, সেই ভয় দেখালেন রাজার সেনারা। তাতেও লাভ হল না তেমন কিছুই। বিষ্ণোইরা সরলেন না তো বটেই, উলটে জবাব দিলেন ‘প্রাণ যায় যাক তবু গাছ কাটতে দেব না’। এরপরের ঘটনা সম্পর্কে ধারণা ছিল না কারও। রাজার আদেশ মানতে অস্ত্র চালালেন সেনারা। মুহূর্তের মধ্যে মাথা থেকে ধড় আলাদা হয়ে গেল শয়ে শয়ে বিষ্ণোই মহিলা-পুরুষের। সংখ্যাটা হিসাব করে বললে, ৩৬৩। তখনও তাঁদের দেহ গাছের গায়ে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে। শুধু প্রাণ নেই। গাছ বাঁচাতে এই লড়াই ইতিহাস মনে রেখেছে। অনেকে বলেন, বিষ্ণোইদের সেই আন্দোলন থেকে শিক্ষা পেয়েই ১৯৭০ সালে চিপকো আন্দোলন হয়েছিল।
বিষ্ণোই সম্প্রদায়কে অনেকেই, প্রকৃতির অভিভাবক বলে থাকেন। কারণটা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। বারবার পরিবেশ ধ্বংসের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠেন এঁরা। সহিংস পথে অন্যায় দমনেও আপত্তি নেই। সলমন খানকে হত্যার হুমকিও সেই কারণেই। জানা যায়, ১৯৯৮ সালে সলমনের বিরুদ্ধে যে কৃষ্ণসায়র হরিণ হত্যার অভিযোগ ওঠে, তার বদলা নিতেই এই হুঁশিয়ারি। আগেও বহুবার এমন হুমকি দিয়েছে বিষ্ণোই গ্যাং। সম্প্রতি বাবা সিদ্দিকির হত্যার দায়ও মেনে নিয়েছেন তাঁরা। সেখানেও সলমন যোগের কথা উঠে আসছে। তবে এতকিছুর পরও এই বিষ্ণোইদের অবদান ভোলার নয়। গাছ বাঁচাতে আন্দোলন হলেও, জীবনের পরোয়া না করে এইভাবে লড়াই করার উদাহরণ কমই রয়েছে।