এই স্থানের সৌন্দর্য দেখে নাকি মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মাও৷ মগ্ন হয়েছিলেন তপস্যায়। কেবল প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নয়, আধ্যাত্মিক দিক থেকেও ভক্তদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ এই সমুদ্রসৈকত। আসুন, শুনে নেওয়া যাক সে কাহিনি।
ভারতীয় সংস্কৃতিতে জলের সঙ্গে পুণ্যের এক আশ্চর্য সম্পর্ক রয়েছে। গঙ্গাকে যে পবিত্র নদী বলে মনে করেন হিন্দুরা, সে কথা তো কারোরই অজানা নয়। মহাভারতে শাপমুক্তির জন্য গঙ্গাকেই আশ্রয় করেছিলেন অষ্টবসু। আবার দক্ষিণ ভারতে বলা হয়, ‘গঙ্গার জলে স্নান, তুঙ্গার জল পান’। অর্থাৎ গঙ্গায় স্নান করলে যেমন পুণ্য হয়, তেমনই পুণ্য হয় তুঙ্গভদ্রা নদীর জল পান করলে, এমনটাই বিশ্বাস করেন ভক্তরা। কি নদী, কি সমুদ্র, অবগাহনের মধ্যে দিয়েই পাপ ধুয়ে যায় বলে মনে করেন তাঁরা। তাই এই প্রাচীন দেশটিতে সমুদ্রের সঙ্গেও পাপমোচন তথা পুণ্যের কাহিনি জুড়ে যাওয়া আশ্চর্যের নয়। আর ঠিক সেই পরম্পরাই বহন করে চলেছে ভারকালা সমুদ্রসৈকত।
আরও শুনুন: ডাউন’স সিন্ড্রোমকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বাবার সঙ্গে এভারেস্ট চড়ল সাত বছরের খুদে
কেরালায় অবস্থিত এই ভারকালা সৈকতের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের তুলনা নেই। তারই সঙ্গে এই সৈকতকে ঘিরে আছে এক আধ্যাত্মিক তাৎপর্যও। ভক্তদের কাছে এই সৈকতের নাম ‘পাপনাশম’। পাপনাশম সৈকতে স্নান করলে সব পাপ ধুয়ে যায়, এমনটাই বিশ্বাস করেন অনেকে। কী এমন পৌরাণিক কাহিনি জুড়ে আছে এই বিশেষ সৈকতের সঙ্গে? বলছি সে কথাই।
মলয়ালম ভাষায় বল্কল শব্দের পরিভাষা হল ভাল্লাকালাম। কথিত আছে, দেবর্ষি নারদ এখানে বল্কল ত্যাগ করেছিলেন। আর ভাল্লাকালাম থেকেই এ স্থানের নামকরণ হয়েছে ভারকালা। এদিকে ‘পাপনাশম’ নামের আড়ালে রয়েছে ব্রহ্মার অনুচরদের এই স্থানে পাপনাশ হওয়ার কাহিনি।
কী ঘটেছিল তাহলে?
কথিত আছে, দেবর্ষি নারদ সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলেন নারায়ণের সঙ্গে। তাঁর কণ্ঠে অপূর্ব সংগীত শুনে মুগ্ধ হয়ে যান স্বয়ং বিষ্ণু। নারদ যখন বৈকুণ্ঠ থেকে যাত্রা করলেন ব্রহ্মার আলয়ের উদ্দেশে, তখন নারায়ণ তাঁকে অনুসরণ করতে থাকেন। এই ঘটনা দেখে ব্রহ্মা নিজের পুত্র নারদকে চিনতে পারেননি। তাঁকে কোনও মহান দেবতা মনে করে তিনি অভিবাদন করে বসেন। এদিকে এই পরিস্থিতি দেখে মুহূর্তে অদৃশ্য হয়ে যান নারায়ণ। সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মাকে এমনভাবে বিভ্রান্ত হতে দেখে সেখানে উপস্থিত তাঁর অনুচরেরা কেউ কেউ হাসি সংবরণ করতে পারেনি। ক্রুদ্ধ ব্রহ্মা তাদের অভিশাপ দেন, তারা মানুষ হয়ে আবার মর্তে জন্ম নেবে। সেইমতো মর্তে আসতে হয় ওই অনুচরদের। এহেন সময়ে নারদ তাঁদের পরামর্শ দেন, শাপমুক্তির জন্য বিষ্ণুর শরণাপন্ন হতে। তার জন্য তো যজ্ঞ করতে হবে। এত বড় পৃথিবীতে ঠিক কোন জায়গাটি যে যজ্ঞের জন্য উপযুক্ত, কীভাবে বুঝবেন তাঁরা? তখন আবার পথ দেখালেন সেই নারদ। নিজের বল্কল ফেলে দিয়ে যজ্ঞের স্থান নির্ধারণ করে দিলেন তিনি। সেই স্থানে যজ্ঞ করেই পাপমুক্ত হয়েছিলেন ওই স্বর্গভ্রষ্ট অনুচরেরা।
আরও শুনুন: শৌখিন প্রসাধন নয়, বিকল্প চিকিৎসার পদ্ধতি হিসেবেই শ্যাম্পু আবিষ্কার হয়েছিল ভারতে
ওই সৈকতেই রয়েছে জনার্দনস্বামী মন্দির। পাপমুক্তির পর ব্রহ্মার অনুচরেরাই কৃতজ্ঞতাস্বরূপ ওই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বলে বিশ্বাস করেন ভক্তরা। পাপনাশম সৈকত আর জনার্দনস্বামী মন্দির, দুয়ের গুরুত্বই তাঁদের কাছে অপরিসীম।