ছেঁড়া জিনস পরে জগন্নাথ দর্শন? তাতে ঘোর আপত্তি পুরীর মন্দির কর্তৃপক্ষের। কিন্তু ফ্যাশনের যে রীতি নিয়ে এত বিতর্ক, তা এল কোথা থেকে জানেন? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
ছেঁড়া জিনস, ফ্যাশনের ভাষায় যার পোশাকি নাম রিপড জিনস। তা পরে কেউ সি-বিচে ঘুরতেই পারেন, কিন্তু মন্দিরে নাকি সে পোশাক শোভন নয়। এই মর্মেই সম্প্রতি দর্শনার্থীদের জন্য পোশাকবিধি বেঁধে দিচ্ছেন পুরীর মন্দির কর্তৃপক্ষ। যদিও এই প্রথম নয়, রিপড জিনস নিয়ে বিতর্ক উসকে উঠেছে এর আগেও। এর আগে উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী তিরথ সিং রাওয়াত-ও এই পোশাককে ভারতীয় সংস্কৃতির পরিপন্থী বলেছিলেন। এমনকি মহিলাদের ছেঁড়া জিনস পরা নিয়েও বেফাঁস মন্তব্য করেছিলেন তিনি। কিন্তু ফ্যাশনের যে রীতি নিয়ে এত বিতর্ক, তা এল কোথা থেকে?
আরও শুনুন: বানিয়েছেন বিশ্বকাপের অ্যান্থেম! পাক ব্যক্তির কীর্তিতে হাসির রোল নেটদুনিয়ায়
আজ এই জিনস নিয়ে এত বিতর্ক হলেও, এই পোশাকের জন্মের ইতিহাস কিন্তু বেশ পুরনো। যদিও শুরুতে এমন ফাটাছেঁড়া জিনস নিয়ে হাসাহাসি করতে ছাড়েননি অনেকেই। তবে পরে দেখা যায় সেটাই ফ্যাশন স্টেটমেন্ট হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার থেকেও বড় কথা, এই পোশাকের সঙ্গে জড়িয়ে যায় এক বিশেষ বক্তব্যও। যেমন জিনসের সঙ্গেও এক বিশেষ ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে।
আঠারো শতকের গোড়ার দিকে ক্যালিফোর্নিয়ার কিছু অঞ্চলে আবিষ্কার হয়েছিল বেশ কয়েকটি সোনার খনি। খনিগুলিতে কাজের জন্য লক্ষ লক্ষ মানুষ এই অঞ্চলে ভিড় জমান। সেই সময়েই ভাগ্য ফেরাতে এই অঞ্চলে এসে পৌঁছন এক ব্যবসায়ী, নাম লেভি স্ট্রস। তিনি দেখেছিলেন, খনি শ্রমিকদের প্যান্টগুলো পরিশ্রমের কারণে খুব দ্রুত ছিঁড়ে একেবারে ফুটিফাটা হয়ে যাচ্ছে। তাই মোটা কাপড় দিয়ে শ্রমিকদের জন্যই একরকমের প্যান্ট বানালেন তিনি। যেখানে যেখানে ঘষা লাগার সম্ভাবনা রয়েছে সেখানে যোগ করলেন তামার পাত। যাতে নোংরা হলেও সহজে বোঝা না যায়, তাই ভারত থেকে আমদানি হওয়া নীলে চুবিয়ে নিলেন কাপড়। ১৮৭৩ সালে এই যে জিনস নামের পোশাকটি বাণিজ্যিকভাবে বাজারে এল, তার সঙ্গে কিন্তু জুড়ে আছে খনিশ্রমিকদের হাড়ভাঙা খাটুনির ইতিহাসই।
আরও শুনুন: আড়াই লাখের সোনার চেন খেয়ে ফেলেছে ষাঁড়! কী হল তারপর?
আবার শ’খানেক বছর পর নতুন রাজনৈতিক বার্তা দিল এই পোশাকই। তার আগে বিশ্বযুদ্ধ, মুদ্রাস্ফীতি এমন নানা কারণে একটা বড় অংশের মানুষের আর্থিক অবস্থা খারাপ হচ্ছিল। ফলে জিনস ছিঁড়ে গেলেও নতুন জিনস কেনার সামর্থ্য অনেকেরই ছিল না। এরপর ১৯৭০ সালের কাছাকাছি সময়ে এই পোশাকই হয়ে উঠল এক আন্দোলনের অঙ্গ। ছেঁড়াখোঁড়া জিনসকে সারিয়ে নেওয়ার বদলে তরুণ প্রজন্মের মনে হয় যে, এই কাটাছেঁড়া আসলে তাঁদের রাগ আর আক্রোশের ছবি। হিপি এবং পাঙ্ক রক মুভমেন্টের সময় এই পোশাক তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। যদিও পরে ফ্যাশন দুনিয়াই কাজে লাগায় এই জনপ্রিয়তাকে। ছেঁড়া জিনসও ফ্যাশনের জগতে ট্রেন্ডিং হয়ে যায়। রিপড জিনসকে আরও জনপ্রিয় করে তোলেন পপ তারকা ম্যাডোনা। ফ্যাশন জগতে ঝড় তোলা সেই পোশাক নিয়েই এবার নতুন করে উঠল বিতর্কের ঝড়।