খেলার মাঠে চিয়ার লিডারদের উচ্ছ্বাস আলাদা নজর কাড়ে। ম্যাচের উত্তেজনা বাড়িয়ে দেন তাঁরাই। মূলত মহিলাদেরই দেখা যায়। তবে একসময় এমনটা ছিল না। চিয়ার লিডার হিসেবে দেখা যেত স্রেফ পুরুষদের। কীভাবে বদল হল সেই নিয়মে? কোন শর্তে মাঠে ঢোকার অনুমতি পেলেন মহিলা চিয়ার লিডাররা? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
ঝলমলে আলো। গ্যালারি ঠাসা ভিড়। চারিদিক ভীষণ রঙিন। তার চেয়েও রঙিন মাঠের একপাশে থাকা কয়েকজন। সংখ্যায় ৭-৮ জন। প্রত্যেকেই মহিলা। তবে দুই দলে বিভক্ত। পোশাক দেখে তফাৎ বোঝা যায়। খেলায় সামান্য উত্তেজনার মুহূর্ত তৈরি হলেই, এঁরা উচ্ছ্বসিত হচ্ছেন। নাচে-গানে সেই উচ্ছ্বাস প্রকাশও করছেন। সঙ্গে সঙ্গে ক্যামেরা তাক হচ্ছে সেদিকে। টিভিতে, জায়ান্ট স্ক্রিনে ফুটছে উঠছে চিয়ার-লিডারদের ছবি।
:আরও শুনুন:
ঈশান কোণে উপেক্ষা জমলে রানের বর্ষণ অবশ্যম্ভাবী?
আইপিএলের মরশুমে এমন দৃশ্য অচেনা নয়। সমস্ত ম্যাচেই নজর কাড়তে হাজির থাকেন চিয়ার-লিডাররা। যে দলের খেলা, তাদের জার্সির রং অনুযায়ী এঁরা পোশাক পরেন। সেইসঙ্গে থাকে চড়া মেক-আপ। চার, ছয়, উইকেট, সেঞ্চুরি, যাই হোক, এঁরা সেলিব্রেশনে মেতে উঠবেন। প্রত্যেকটার ধরন অবশ্য আলাদা। নাচের ভঙ্গীও প্রতি ক্ষেত্রে বদলে যায়। তালে-তালে কোমর দোলান চিয়ার-লিডাররা। বিদেশে এই বিষয়টা বেশ জনপ্রিয়। আসলে চিয়ার-লিডিং-এর শুরুটাও সে বিদেশের মাটিতে। একসময় আলাদা করে চিয়ার-লিডার বলে কিছুর অস্তিত্ব ছিল না। খেলা দেখতে আসা সমর্থকরাই পছন্দের দলের হয়ে গলা ফাটাতেন। তবে তা সম্মিলিত প্রয়াস। আলাদা করে নজরে পড়বেন না কেউ। প্রথমবার ১৮৮২ সালে এই ব্রিটিশ যুবক তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়য়ের খেলায় বিষয়টা সামনে আনেন। তখন অবশ্য পুরুষরাই চিয়ার-লিডার হতেন। এবং বেশ কয়েকবছর সেই নিয়ম জারি ছিল। পছন্দের দলের জন্য আলাদাভাবে চিয়ার-লিডার হিসেবে মাঠের পাশে হাজির থাকতেন কয়েকজন সমর্থক। নাচে-গানে প্রতিটা উত্তেজনার মুহূর্ত জীবন্ত করে তুলতেন তাঁরা।
:আরও শুনুন:
‘পরাগ’রেণু আপনি জাগে আইপিএল-এ! নাকি নেপথ্যে সেই ঘরোয়া ক্রিকেটে?
তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আবহে পরিস্থিতি অনেকটাই বদলে গেল। দলে দলে যুদ্ধ করতে ছুটলেন পুরুষরা। কেউ কেউ বাধ্য হয়ে, কেউ স্বেচ্ছায়। সকলেই যে ফিরে আসবেন তা নয়, তবু যুদ্ধ এসে পুরুষশূণ্য করেছিল সেই সময়ের অনেক শহর, গ্রাম। এই পরিস্থিতিতে খেলা যে একেবারে বন্ধ হয়েছিল তা নয়। কিন্তু চিয়ার-লিডার বিষয়টা ধীরে ধীরে কমতে থাকল। কারণ যারা সেই দলে নাম লেখাতেন, তাঁরা যুদ্ধের ময়দানে। একসময় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হল। পরিস্থিতি বদলাতে থাকল ধীরে ধীরে। কিন্তু পুরুষ চিয়ার-লিডাররা আর মাঠে ফিরলেন না। সেই জায়গা দখল করলেন মহিলারা। এরপর অবশ্য ব্যাপারটা অন্যরকম রূপ নিল। দেখা গেল, পুরুষদের তুলনায় মহিলারা চিয়ার-লিডার হিসেবে বেশি জনপ্রিয়তা পাচ্ছেন। খেলার থেকেও মহিলা চিয়ার-লিডারদের নাচ বেশি উপভোগ্য হয়ে উঠছে। এরপর আর বদল হয়নি। এখনও চিয়ার-লিডার হিসেবে মহিলাদেরই মাঠে দেখা যায়।
বরং এটাই স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে।
:আরও শুনুন:
কেন আরও ভালোবেসে যেতে পারে না হৃদয়…
এক্ষেত্রে একটা বিষয় উল্লেখ করতেই হয়। অনেকেই মনে করেন, এই মহিলা চিয়ার-লিডারদের যে ধরনের পোশাক পরানো হয়, বা যে আবেদন তাদের নাচের ভঙ্গীতে ফুটে ওঠে, তা নারী শরীরকে পণ্যায়িত করা ছাড়া আর কিছুই নয়। বিজ্ঞাপনে নারীর ব্যবহার ঠিক যতটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, এক্ষেত্রেও তা হয়েছে। আইপিএলের কথাই ধরা যাক। সেখানে চিয়ার-লিডারদের নাচ দেখা এতটাই মুখ্য হয়ে ওঠে কিছু সময়, যে খেলার দিকে নজর থাকে না অনেকের। গ্যালারিতে থাকলে তাও দূরের দৃশ্য। বাড়িতে বসে টিভিতে দেখলে আর কথাই নেই! ক্যামেরাম্যান যেভাবে নৃত্যরত চিয়ার-লিডারদের শরীর দেখাবেন, তাতে অনেক কিছুই মনে হতে পারে। আজকাল আবার চিয়ার-লিডার হিসেবে স্রেফ বিদেশিনীদেরই দেখা যায়। সেও কোন কারণে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। মোটের উপর সব দলই স্বল্পবসনা হিসেবেই এই চিয়ার-লিডারদের সামনে আনেন। যা আরও স্পষ্ট করে নারী শরীরকে পণ্যায়িত করার বার্তা। কম যায় না সোশাল মিডিয়াও। মজার ছলে যেভাবে এই চিয়ার-লিডারদের নিয়ে মিম বানানো হয়, তা নারী বিদ্বেষের উদাহরণ হতেই পারে। তাই কেউ কেউ এই চিয়ার-লিডার বিষয়টাকে বেশ ছোট চোখে দেখেন। যেন এই কাজ খুব একটা ভালো না। অনায়াসে তুলনা টানা হয় যৌনকর্মীদের সঙ্গে। যার আদৌ কোনও প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে হয় না। চিয়ার-লিডিং-এর ইতিহাস অন্তত সেকথা বলে না। কিন্তু তাতে কার কী বা যায় আসে! বিজ্ঞাপনের জোরেই এই ধরনের খেলা বা অনুষ্ঠান চলছে। সেখানে নারী শরীরের প্রদর্শন যদি বেশি মুনাফা আনতে পারে, তবে তাতেই সায় দেবেন অনেকে। নীতি-নৈতিকতা কিংবা সামাজিক দিক দিয়ে বিষয়টা যেভাবেই দেখা হোক, শেষ হাসি হাসবে সেই আর্থিক লাভ!