শীতকাল মানেই উৎসবের মরশুম। বড়দিন আর ইংরেজি নতুন বছর মিলিয়ে ছুটি ছুটি আবহাওয়া। আর এই ছুটি আরও ভালোভাবে জানান দেয় কেক-এর সুবাস। বড়দিন কি আর কেক ছাড়া ভাবা যায়! কিন্তু ক্রিসমাস উদযাপনের সঙ্গে কেক কাটার সম্পর্কটা ঠিক কোথায়? আসুন শুনে নিই।
জন্মদিন হোক বা শুভ অনুষ্ঠান, কেক না কাটলে যেন ঠিক জমে না! এককালে তেমন চল না থাকলেও, আজকাল যে কোনও অনুষ্ঠানেই কেক কাটার রেওয়াজ চোখে পড়ে। কিন্তু একটা উৎসব বরাবরই কেক ছাড়া অসম্পূর্ণ। ঠিক ধরেছেন, ক্রিসমাসের কথাই বলছি। বড়দিনে এক টুকরো কেক মুখে না দিলে কী যেন একটা বাকী থেকে যায়।
আরও শুনুন: বড়দিনেই কি জন্ম হয়েছিল যিশু খ্রিস্টের? রয়েছে অন্য মতও
এখন প্রশ্ন হচ্ছে এমন নিয়মের নেপথ্যে কারণ কী?
উত্তর খুঁজতে চোখ রাখতে হবে ইতিহাসের পাতায়। ভারতবর্ষ ক্রিসমাস উদযাপন দেখেছিল ব্রিটিস-দের চোখ দিয়ে। এর আগে আলাদাভাবে আমাদের দেশে এই ধর্মের চল ছিল না। তাই যীশুর জন্মদিন ঘিরে এমন মাতামাতি-রও কোনও অবকাশ ছিল না। উপনিবেশ স্থাপনের বহু আগে থেকেই ব্রিটিসরা এ দেশে ব্যবসা শুরু করে। সেই সময় দেশবাসী দেখেছিল, ভরা শীতকালে কেমন উৎসবের আনন্দে মেতে উঠছে সাহেব-সুবোরা। নাচ-গান হই হুল্লোড় সব হচ্ছে। আর সেই সঙ্গে অবশ্যই যা থাকছে, তা হল কেক কাটা। জন্মদিন বা অন্যান্য শুভ অনুষ্ঠানে যে ক্রিম দেওয়া কেক কাটা হয়, ক্রিসমাস কেক একেবারেই তেমন নয়। এখানে ক্রিমের কোনও বালাই নেই। বিভিন্ন ধরনের ড্রাইফ্রুট, ময়দা আর চিনি মিশিয়েই তৈরি হয় ক্রিসমাসের বিশেষ কেক। যা ঠিকমতো রাখতে পারলে, অন্তত এক সপ্তাহ খাবার যোগ্য থাকে। আসলে এই কেক তৈরি পদ্ধতির সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছে এর প্রচলনের ইতিহাস। শোনা যায়, ক্রিসমাস কেক এর জন্ম ১৬-র শতকে। সেইসময় ইংল্যান্ডের খ্রিশ্চানরা যীশুর জন্মদিবস উদযাপনে বিশেষ নিয়ম পালন করত। এমনকি তাঁরা বড়দিনের আগের এক সপ্তাহ প্রায় উপোস থাকতেন। শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। প্রথম বিশ্বের দেশেও একসময় চালু ছিল এই উপবাসের নিয়ম। তা বেশ কয়েকদিন উপোস থাকার পর হঠাত করে খাওয়া আরম্ভ করলে বিপদ। তাই বড়দিনের সকালে তারা উপোস ভাঙতেন পারিজ নামে বিশেষ এক খাবার খেয়ে। একেবারেই হালকা খাবার। যা তৈরি হত জব, মধু এবং গুড় ও ফল দিয়ে। ক্রমে সেই খাবারের সঙ্গে মিশতে থাকে বিভিন্ন ধরনের ড্রাই ফ্রুট। সঙ্গে যোগ হয় আরও কিছু জিনিস। যা একইসঙ্গে পেটও ভরাত আবার শরীর খারাপও করত না। মনে করা হয়, এই পারিজ থেকেই আজকের ক্রিসমাস কেক-এর জন্ম। সেখানে ডিম, ময়দা সহ আরও অনেক কিছুই যোগ হয়েছে সময়ের সঙ্গে। এমনকি ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বদলাতে থাকে পারিজের রেসিপি। একটা সময়ের পর সব জায়গাতেই দেখা যায় ফ্রুট কেক গোত্রের এক খাবার খেয়ে উপোস ভাঙ্গা হচ্ছে। ধীরে ধীরে ক্রিসমাস উৎসব হয়ে ওঠে বিশ্বজনীন। ইউরোপের উপনিবেশ থাকা দেশগুলিতেও ছড়িয়ে পড়ে এই বিশেষ উৎসব পালনের রেওয়াজ। সেই সঙ্গে বাধ্যতামূলক নিয়ম হিসেবে যোগ হয় কেক কাটা।
আরও শুনুন: ‘হ্যাপি’ নয়, বড়দিনের শুভেচ্ছায় কেন বলা হয় ‘মেরি ক্রিসমাস’?
আজকের দিনে দাঁড়িয়ে কেক খাওয়া ছাড়া ক্রিসমাস কল্পনা করা কঠিন। অনেক বাঙালির কাছেই মোয়া, কমলালেবুর মতো শীতকালীন উপাদান হিসেবে যোগ হয়েছে কেক-এর নামও। শীতকালের পিকনিকে এই তিনটে খাবার মোটামুটি থাকেই। যার শুরুটা হয় বড়দিন দিয়ে। অনেকে আবার রাত বারোটায় প্রভু যিশুর জন্মদিন উদযাপন করেন। সেক্ষেত্রেও কোনও পুজোর বালাই নেই। আছে স্রেফ কেক কাটার অনাবিল আনন্দ। তাই, বড়দিন উদযাপনের নিয়ম কানুন কোনও শাস্ত্রে লেখা না থাকলেও, অনেকেই নিজের মতো করে এর সঙ্গে জুড়েছেন কেক খাওয়ার নিয়ম। আর যাই হোক এই নিয়ম মানতে কারও কষ্ট তো হয় না।
==0==