পবনপুত্র হনুমান। শ্রী রামের প্রিয় ভক্ত। তাই রামেরই আরেক রূপ জগন্নাথকে কীভাবে উপেক্ষা করেন তিনি! শ্রী ক্ষেত্র পুরীতেও তাই রয়েছে একাধিক হনুমান মন্দির। তবে এর মধ্যে একটি মন্দিরে হনুমানকে সোনার শেকলে বেঁধে রাখা হয়। নেপথ্যে কী কারণ জানেন? আসুন শুনে নিই।
পুরী বললেই সবার আগে মাথায় আসে জগন্নাথের কথা। কিন্তু জগন্নাথ মানেই তো কৃষ্ণ। জগন্নাথ মানেই তো রাম। তাই পুরীতে হনুমানের মন্দির থাকবে একথা বলাই বাহুল্য। তবে এমন হনুমান মন্দির বোধহয় আর কোথাও নেই। কারন এখানকার বিগ্রহটি সোনার শিকল দিয়ে বাঁধা।
আরও শুনুন: Janmashtami 2023: স্রেফ পুজো নয়, জন্মাষ্টমীতে গোপালের ঘর সাজাবেন কোন জিনিস দিয়ে?
বাঙালির বেড়াতে যাওয়ার পছন্দের ঠিকানাগুলোর মধ্যে অন্যতম পুরী। একদিকে অতল সমুদ্র। অন্যদিকে জগন্নাথ। একইসঙ্গে তীর্থভ্রমণ আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ। পুরী গেলে এই দুটোই হয়। তবে আরও একটা কারণে শ্রীক্ষেত্র বিশেষভাবে জনপ্রিয়। আর তা হল কিছু আশ্চর্য মন্দির। তালিকায় সবার উপরেই রয়েছে বেড়ি হনুমানের মন্দির। স্থানীয়দের কাছে যা দরিয়া হনুমান মন্দির হিসেবেও পরিচিত। মন্দিরের বিশেষত্ব বলতে পবনন্দনের বিগ্রহ। সাধারণত কোনও মন্দিরের বিগ্রহ পরম যত্নে রাখা হয়। হোক না পাথরের, সেখানে যেন এতটুকু আচড় না লাগে। তবে বেড়ি হনুমানের বিশেষত্বও হল, এই বিগ্রহটি শিকল দিয়ে বাঁধা। শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। প্রায় ১০ ফুট লম্বা হনুমান বিগ্রহ একাধিক শিকল দিয়ে বাঁধা। তার মধ্যে সোনার শিকলও রয়েছে।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, মন্দিরের আরাধ্যকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে কেন?
আরও শুনুন: বিরল যোগে বদলাবে ভাগ্য! জন্মাষ্টমী তিথিতে ঠিক কোন সময় পুজোয় বসবেন?
নেপথ্যে রয়েছে এক প্রচলিত কাহিনী। শোনা যায়, পুরীর মন্দির তৈরির সময় বেশ সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল সমুদ্র। ক্রমাগত ঢেউয়ের চোটে, বারবার ব্যাঘাত ঘটছিল মন্দির নির্মাণে। সেই সময় প্রভু জগন্নাথ হনুমানকে মন্দির রক্ষার কাজে নিযুক্ত করেন। পবনন্দনের দায়িত্ব ছিল মন্দিরে যে সমুদ্রের জল না ঢুকে পরে সেদিকে খেয়াল রাখা। মন দিয়ে সেই দায়িত্ব পালনও করেন হনুমান। শোনা যায়, হনুমানের কারণেই সব সমস্যা পেরিয়ে তৈরি হয় শ্রীমন্দির। কিন্তু চিরকাল তো আর হনুমান পুরীতে থাকবেন না। তিনিও মাঝেমধ্যেই অন্য কোথাও যেতেন। কথিত আছে, এমনই একবার হনুমান গিয়েছেন অযোধ্যা। আর সেই সুযোগে সমুদ্রদেব এলেন জগন্নাথকে প্রণাম করতে। কিন্তু এর ফলে মন্দির সংলগ্ন বিস্তীর্ণ এলাকা সমুদ্রের জলে প্লাবিত হয়ে যায়। নোনা জলে ক্ষয়ক্ষতিও হয় যথেষ্টই। ভয়ানক চটে গিয়ে জগন্নাথ ডেকে পাঠান হনুমানকে। কিন্তু তখন তো তিনি পুরীতেই নেই। তাই তড়িঘড়ি হনুমানকে পুরী ফিরে আসার নির্দেশ দেন প্রভু। একবার হনুমান ফিরতেই তিনি তাঁর হাত শিকল দিয়ে বেঁধে দেন। আর সেইসঙ্গে নির্দেশ দেন কখনও পুরী ছেড়ে যেন হনুমান না যান। স্থানীয় বিশ্বাস, বেড়ি হনুমান আসলে প্রভু জগন্নাথের শিকল পরানো সেই পবননন্দন। যিনি এখনও একইভাবে শ্রীক্ষেত্র রক্ষা করে আসছেন। জনশ্রুতির জোরে এই মন্দির যথেষ্ট জাগ্রত। পুরী ঘুরতে গেলে অনেকেই এখানে দর্শণ সেরে যান। শ্রীমন্দির থেকে খুব বেশি দূরেও নয় এই মন্দির। তাই শিকলে বাঁধা পবননন্দনকে দেখতে প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে ভক্তদের আগমন হয় এই মন্দিরে।